Google Alert – সশস্ত্র
আলজাজিরা : বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট ২০২৫
গাজায় চলছে দুর্ভিক্ষ। খাবার যা আসছে তা লুট করছে একদল স্থানীয়। জাতিসংঘের ফাঁস হওয়া একটি মেমোতে উল্লেখ করা হয়েছে এই লুটের সঙ্গে সাবাব নামে এক বক্তির নেতৃত্বাধীন বাহিনী জড়িত
গাজায় বিভক্তি সৃষ্টি করে জাতিগত নিধন তরান্বিত করতে চাইছে ইসরায়েল। আর এজন্য হামাসবিরোধী উপাদান সৃষ্টি করে তাদের পৃষ্ঠপোষকতা যোগাচ্ছে তারা।
আর তা যে তারা খুব গোপনে করছে এমন নয়।
গত জুন মাসে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে পপুলার ফোর্স নামে একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীকে অস্ত্র ও সহায়তা দেওয়ার কথা নিজেই জানান।
টুইটে তিনি লিখেছিলেন, এতে অন্যায়ের কী আছে – যদি ইসরায়েলি সৈন্যদের জীবন বাঁচানো যায়?
গাজার পপুলার ফোর্সের নেতা ইয়াসির আবু শাবাব নাম ৩১ বছরের এক ব্যক্তি।
গাজার তারাবিন গোত্রে তার জন্ম। কিছুদিন আগেও তাকে কেউ চিনতো না। ২০১৫ সাল থেকে মাদক মামলায় কারাগারে ছিল সে।
২০২৩ সালে গাজায় ইসরায়েলি অভিযান শুরুর পর হামাসের কারাগার থেকে পালায় সে।
আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিশরের সিনাই দিয়ে মাদকের চোরাচালান হয় গাজায়। আর তার নিয়ন্ত্রণ মূলত আইএসআইএল বা ইসলামিক স্টেট অব ইরাক এন্ড লেভান্তের হাতে। এখন অনেকেই বিশ্বাস করেন, আবু শাহাব এই আইএসআইএলের সঙ্গে যুক্ত।
তবে সেটা ইসরায়েলের কাছে কোনো ব্যাপার নয়। বরং বিশ্লেষকদের সন্দেহ, গাজায় নিধনের যে পরিকল্পনা ইসরায়েল হাতে নিয়েছে, তা বাস্তবায়নেই শাবাবকে কাজে লাগাচ্ছে তারা।
আবু শাবাব যে পপুলার ফোর্সের নেতা, তাতে সদস্য সংখ্যা একশর মতো।
এই শাবাব স্কুল শেষ করতে পারেনি। অথচ একাধিক ভাষায় সামাজিক মাধ্যম চালায় সে।
সম্প্রতি সে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে কলাম লিখেছে। গাজার মানুষ হামাসকে আর চায় না – এটাই হচ্ছে তার লেখার বিষয়বস্তু।
বিশ্লেষকদের ধারণা, গণমাধ্যমে তার এই উপস্থাপন ইসরায়েলের কারিগরিতেই।
তার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে, ইউরোপীয়ান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস এর ভিজিটিং ফেলে মোহাম্মদ শাহেদা আলজাজিরাকে বলেন, গত কয়েক দশক গাজার সমাজের সঙ্গে তো তার কোনো যোগাযোগই ছিল না। সে কে? তাকে সামনে রেখে কাজ করছে ইসরায়েল।
তার নিজের যে গোত্র, তারাবিন, তারাও কিছুদিন আগে সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, তার কাজকর্ম অগ্রহণযোগ্য।
আলজাজিরার প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, শাবারে উত্থানের শুরুটা ২০২৪ সালের মে মাসে, ইসরায়েলিরা রাফায় আক্রমণ করার পর থেকে।
তার এক মাস পর থেকে আত্মপ্রকাশ করে তার বাহিনী, যাদের কাজই হচ্ছে লুট করা। এখন নিরন্ন, ক্ষুধার্ত মানুষদের জন্য যত ত্রাণ যাচ্ছে, সেগুলো লুট করে নেয় তারা। আর তার ও তার বাহিনীর এই দুষ্কর্মে সুরক্ষা যোগাচ্ছে স্বয়ং ইসরায়েলি বাহিনী।
জাতিসংঘের মতে, ১০ ট্রাক ত্রাণ সাহায্যের নয়টাই লুট হয় সেখানে। ইসরায়েল তার জন্য হামাসদের দায়ী করে আসছে। কিন্তু হামাসের সম্পৃক্ততার একটা নজির তারা দেখাতে পারেনি।
তবে ত্রাণকাজে নিয়োজিত আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবীরা আলজাজিরাকে বলেছে, এর সঙ্গে নানাভাবে শাবাবই জড়িত।
ওয়াশিংটন পোস্ট সম্প্রতি জাতিসংঘের অভ্যন্তরীণ একটি মেমো পেয়েছে, সেখানে শাবাবকে ত্রাণ লুটের মূল হোতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বছর মার্চ মাসে ইসরায়েল একতরফাভাবে যুদ্ধবিরত ভাঙার পর শাবাব নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিল।
আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ইসরায়েল ত্রাণ প্রবাহ মেনে নেওয়ার পর আবার আবির্ভূত হয় শাবাব।
তবে সে যে ত্রাণ লুটে ক্ষুধা বাড়িয়ে জাতিগত নিধনে ভূমিকা রাখছে তা নয়, বিশ্লেষকরা বলছেন গাজায় ইসরায়েল যে কনসেনট্রেশন ক্যাম্প জোন সম্প্রসারণের কৌশল নিয়েছে, তা বাস্তবায়নের ভার নিয়েছে শাবাব।
গত জুলাইয়ের শুরুতে এ পরিকল্পনার আভাস পাওয়া যায় ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর কাছ থেকে। তিনি বলেন, গাজার দক্ষিণ থেকে ছয় লাখ প্যালেস্টাইনি স্বেচ্ছায় সরে যাবে।
আর এর পরপরই শাবাবের ফেসবুক পেজে ঘোষণা আসে, ইসরায়েল যদি কাউকে উৎখাত করে, তবে তাদেরকে সে নিজে আশ্রয় দেবে।
প্যালেস্টাইনি বিশ্লেষক শাহেদা আলজাজিরাকে বলেন, কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প জোন বাড়ানোর কাজটা যদি ইসরায়েল করে তা ভালো দেখাবে না। সেটা বাস্তবায়নেরই দায়িত্ব নিয়েছে শাবাব।