গাজায় নতুন সামরিক অভিযানের পরিকল্পনায় বিভক্ত ইসরাইল ও মিত্ররা

Google Alert – সামরিক

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিতর্কিত গাজা উপত্যকায় নতুন সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা দেশটির সেনা নেতৃত্ব, জিম্মিদের পরিবার ও আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। 

সমালোচকরা সতর্ক করেছেন, এতে আরও বহু ফিলিস্তিনি নিহত হবে এবং ইসরাইল আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারে।

শুক্রবার (৮ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে বিবিসি।

দশ ঘণ্টাব্যাপী নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা বৈঠকে মন্ত্রীরা ‌‘গাজা শহর দখলের’ প্রস্তাব অনুমোদন করেছেন, যা নেতানিয়াহুর পরিকল্পনা অনুযায়ী গাজা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার প্রথম ধাপ হতে পারে। 

যদিও প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের বিবৃতিতে ‘অধিকারের’ (জোরপূর্বক দখল) শব্দটি ব্যবহার করা হয়নি, বাস্তবে পরিকল্পনার অর্থ সেটিই।

এ অভিযানের শুরুর সময় এখনো নির্ধারিত হয়নি। এটি কয়েক মাস ধরে চলতে পারে এবং এর জন্য ক্লান্ত হাজার হাজার রিজার্ভ সেনাকে আবার ডাকা হবে, পাশাপাশি প্রায় ৮ লাখ বাসিন্দাকে জোরপূর্বক সরিয়ে নেওয়া হবে—যাদের অনেকেই যুদ্ধের মধ্যে বারবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

গাজার পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষুব্ধ বহু দেশ যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানালেও, নেতানিয়াহুর অবস্থান পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টার্মার এ সিদ্ধান্তকে ‘ভুল’ বলে অভিহিত করেছেন এবং ইসরাইলকে অবিলম্বে পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন।

নিজ দেশেও নেতানিয়াহুর প্রতি অসন্তোষ বাড়ছে। জরিপে দেখা গেছে, অধিকাংশ ইসরাইলি নাগরিক হামাসের সঙ্গে বন্দি বিনিময়ের মাধ্যমে যুদ্ধ শেষের পক্ষে। বর্তমানে প্রায় ৫০ জন জিম্মির মধ্যে ২০ জন জীবিত আছেন বলে ধারণা। বিশ্লেষকদের মতে, পূর্ণ দখলের হুমকি দিয়ে হয়তো নেতানিয়াহু হামাসকে আলোচনায় রাজি করানোর চেষ্টা করছেন।

তবে সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়াল জামির এ পরিকল্পনার তীব্র বিরোধিতা করেছেন। ইসরাইলি গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিনি সতর্ক করেছেন যে গাজা সম্পূর্ণ দখল করা ‘ফাঁদে পা দেওয়ার সমান’ এবং এতে জীবিত জিম্মিদের জীবন বিপন্ন হবে।

জিম্মিদের পরিবারও একই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মাআরিভ পত্রিকার তথ্য অনুযায়ী, সেনা অভিযান সম্প্রসারিত হলে ‘অধিকাংশ, সম্ভবত সব জীবিত জিম্মিই’ মারা যেতে পারেন—কেউ অপহরণকারীর হাতে, কেউ ইসরাইলি সেনার গোলায়।

উগ্রবাদী মন্ত্রী ইতমার বেন গভির ও বেজালেল স্মোত্রিচ নেতানিয়াহুর পরিকল্পনার সমর্থনে গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের ‘স্বেচ্ছা অভিবাসন’ এবং সেখানে ইহুদি বসতি স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছেন—যা কার্যত বেসামরিক জনগণের জোরপূর্বক উচ্ছেদ, আন্তর্জাতিক আইনে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচিত।

ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরাইল গাজা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিতে চায়, তবে শাসন করতে নয়—বরং ‘আরব বাহিনীর’ কাছে হস্তান্তর করতে চায়। তিনি কোন দেশ জড়িত হতে পারে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানাননি।

যুদ্ধ-পরবর্তী গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে নেতানিয়াহু এতদিন স্পষ্ট কোনো পরিকল্পনা দেননি, শুধু বলেছেন তিনি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে (যারা পশ্চিম তীর শাসন করে) এ দায়িত্ব দিতে রাজি নন।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরাইলে প্রায় ১,২০০ জন নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, চলমান ইসরাইলি অভিযানে এখন পর্যন্ত ৬১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *