Google Alert – সেনাপ্রধান
ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর প্রধান আয়াল জামির গাজায় যুদ্ধ সম্প্রসারণে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছেন। তিন ঘণ্টার এক উত্তেজনাপূর্ণ বৈঠকে জামির সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, গাজার অবশিষ্ট অংশ দখল করলে সেনাবাহিনী দীর্ঘ মেয়াদে সেখানে জড়িয়ে পড়বে এবং এতে জিম্মিদের জীবন হুমকির মুখে পড়তে পারে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের হামলার পর শুরু হওয়া যুদ্ধে তারা ইতোমধ্যে গাজার ৭৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। তবে সামরিক শাসন চাপিয়ে দেওয়া, ভূখণ্ড দখল করা বা ইহুদি বসতি পুনর্গঠনের বিষয়ে বারবার আপত্তি জানিয়েছে তারা।
নেতানিয়াহু বর্তমানে দেশে-বিদেশে চরম চাপের মুখে রয়েছেন। জাতিসংঘ গাজায় সম্ভাব্য নতুন হামলার খবরকে ‘গভীরভাবে উদ্বেগজনক’ বলে উল্লেখ করেছে। দুই কোটিরও বেশি মানুষের এই উপকূলীয় ভূখণ্ডে কয়েক দফা গৃহহীন হওয়া ও দুর্ভিক্ষের আশঙ্কায় মানবাধিকার সংস্থাগুলোর উদ্বেগ বাড়ছে।
সামরিক সূত্রে জানা গেছে, নেতানিয়াহু আয়াল জামিরকে বলেছেন, জিম্মি উদ্ধারে সেনাবাহিনী ব্যর্থ হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত যেসব জিম্মি ছাড়া পেয়েছেন, তা হয়েছে কূটনৈতিক পথেই। সেনাপ্রধানের আপত্তির পরও তিনি হামাসের ওপর চাপ বাড়াতে সামরিক অভিযানের পরিধি বাড়াতে চান।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ এক্স-এ লিখেছেন, সেনাপ্রধানের মতামত জানানোর অধিকার রয়েছে। তবে সরকার সিদ্ধান্ত নিলে সেনাবাহিনী তা বাস্তবায়ন করবে।
বুধবার বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার লাপিদ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর বলেছেন, জনগণ আর যুদ্ধ চায় না। গাজার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়া হবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।
ইসরায়েলি চ্যানেল ১২–এর সাম্প্রতিক এক জরিপেও দেখা গেছে, অধিকাংশ মানুষ যুদ্ধ বন্ধ ও জিম্মি মুক্তির কূটনৈতিক সমাধান চায়।
গাজায় এখনও অন্তত ৫০ জন জিম্মি রয়েছে। এদের মধ্যে ২০ জনের জীবিত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। সম্প্রতি হামাস ও ইসলামিক জিহাদ দু’জন কঙ্কালসার জিম্মির ভিডিও প্রকাশ করেছে। যা বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় তোলে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত অপুষ্টিতে প্রায় ২০০ জন ফিলিস্তিনি মারা গেছেন। এদের অর্ধেকই শিশু। বুধবার খাদ্যবোঝাই একটি ট্রাক ভিড়ের মধ্যে উল্টে পড়লে ২০ জন নিহত হন।
কাতারে সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতি আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে। হামাস স্থায়ী যুদ্ধবিরতি না হলে চুক্তি মানবে না বলে জানিয়েছে। আর ইসরায়েল হামাসকে ক্ষমতা ছাড়ার ব্যাপারে অনিচ্ছুক বলে অভিযোগ করছে।
গাজার মধ্যাঞ্চলের দেইর আল-বালাহে অবস্থানরত বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি তামের আল-বুরাই বলেন, ট্যাংক আসলে আমরা কোথায় যাব? সাগরে ঝাঁপ দেবো, না কি ঘরের ধ্বংসস্তূপে মরার অপেক্ষায় থাকব? এই যুদ্ধ থামান, যথেষ্ট হয়েছে।
লড়াইয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীও ক্লান্ত। সীমিত স্থায়ী সেনাবাহিনীর পাশাপাশি বারবার রিজার্ভ সেনাদের ডাকা হচ্ছে। আরও অঞ্চল দখলের জন্য অতিরিক্ত সেনা দরকার হবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
বুধবারও গাজাজুড়ে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় এতে ১৩৫ জন নিহত হয়েছে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে মোট প্রাণহানি ৬১ হাজার ছাড়িয়েছে। এদের বেশিরভাগই বেসামরিক।
অন্যদিকে, ইসরায়েলের হিসাবে ২০২৩ সালের অক্টোবরের হামলায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন এবং ২৫১ জনকে গাজায় জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হয়।