Google Alert – সেনাপ্রধান
নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- গণহত্যার নিন্দা ইসরাইলি লেখক গ্রসম্যানের
- গাজায় ত্রাণপ্রার্থীসহ আরো ৩০ জন নিহত
- দুর্ভিক্ষ ও অপুষ্টিতে আরো ৭ জনের মৃত্যু
দুর্ভিক্ষের ভয়াবহ ঝুঁকিতে থাকা ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় প্রতি তিনজনের মধ্যে একজনকে দিনভর খাবার ছাড়াই কাটাতে হচ্ছে বলে সতর্ক করেছে জাতিসঙ্ঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ)। ইসরাইলের গণহত্যার উদ্দেশ্যে পরিচালিত যুদ্ধের কারণে পরিস্থিতির অবনতি ক্রমেই বাড়তে থাকায় ইউনিসেফ গত শুক্রবার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
ইউনিসেফের মানবিক কর্মকাণ্ড ও সরবরাহ কার্যক্রমের উপ-নির্বাহী পরিচালক টেড চাইবান ইসরাইল, গাজা এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরে সাম্প্রতিক সফরের পর গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘এখন পর্যন্ত ৩২০হাজারেরও বেশি শিশু তীব্র অপুষ্টির ঝুঁকিতে রয়েছে। তিনি বলেন, গাজায় অপুষ্টির সূচক ‘দুর্ভিক্ষের সীমা ছাড়িয়ে গেছে’।
তিনি বলেন, ‘আমি গাজার উপর মনোযোগ রাখতে চাই, কারণ এখানে দুর্ভোগ সবচেয়ে তীব্র এবং শিশুরা অভূতপূর্ব হারে মারা যাচ্ছে।’ ‘আমরা একটি সন্ধিক্ষণে আছি এবং এখন নেয়া সিদ্ধান্তগুলো নির্ধারণ করবে যে হাজার হাজার শিশু বেঁচে থাকবে নাকি মারা যাবে।’ এদিকে গতকাল শনিবার দুপুর নাগাদ গাজাজুড়ে ইসরাইলি হামলায় ১৩ জন ত্রাণপ্রার্থীসহ কমপক্ষে ৩০ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার। অন্য দিকে ইসরাইলের সেনাপ্রধান বলেছেন, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে বন্দীদের দ্রুত মুক্তির জন্য আলোচনা ব্যর্থ হলে গাজায় যুদ্ধে বিরতি আসবে না।
দখলদার বাহিনীর দেয়া এক বিবৃতি অনুসারে, সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়াল জামির বলেছেন, ‘আমি ধারণা করছি, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই আমরা জানতে পারব আমাদের বন্দীদের মুক্তির জন্য একটি চুক্তিতে পৌঁছনো সম্ভব কি না।’ তিনি আরো বলেন, ‘যদি তা না হয়, তাহলে লড়াই চলবে বিরতিহীনভাবে।’
গণহত্যার নিন্দা ইসরাইলি লেখকের : ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরাইল কর্তৃক গণহত্যার নিন্দা জানিয়েছেন দেশটির জনপ্রিয় লেখক ও শান্তিকামী কর্মী ডেভিড গ্রসম্যান। তিনি বলেন, ‘আমি এই শব্দটি বলছি এক ভাঙা হৃদয় নিয়ে।’ ইতালির দৈনিক লা রিপাবলিকা’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে গ্রসম্যান বলেন, অনেক বছর ধরে আমি গণহত্যা শব্দটি ব্যবহার করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছি। কিন্তু এখন, যেসব ছবি দেখেছি এবং যেসব মানুষের সাথে কথা বলেছি; তারপর আমি আর চুপ থাকতে পারি না।
তিনি বলেন, ‘আমি এই শব্দটি উচ্চারণ করছি সীমাহীন যন্ত্রণা ও এক ভাঙা হৃদয় নিয়ে। এই শব্দটি যেন এক ধ্বংসাত্মক তুষারধস- একবার বলা শুরু করলে এটা কেবল বড় হতে থাকে, আরো ধ্বংস, আরো কষ্ট তৈরি করে।”
প্রতিরোধ চলবে : হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসঙ্ঘের সদর দফতর থেকে দেয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বলে খবর রয়টার্স ও আলজাজিরার। গত বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুসালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামাবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসঙ্ঘের সদর দফতর থেকে দেয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সাথে এটি সঙ্গতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স, মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউ ইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্র, শনি ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল ও তাদের মিত্রদেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরাইলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বানও জানিয়েছে তারা।
ত্রাণপ্রার্থীসহ আরো ৩০ জন নিহত : ফিলিস্তিনের গাজায় তীব্র হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। গতকাল শনিবার গাজাজুড়ে ইসরাইলি হামলায় ১৩ জন ত্রাণপ্রার্থীসহ কমপক্ষে ৩০ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে আলজাজিরা। তবে এ প্রাথমিক সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। কারণ, অনেককে হাসপাতালে আনা সম্ভব হয়নি। অনেকে আহতাবস্থায় ধ্বংসস্তূপে আটকে আছেন। ইসরাইলি বাহিনীর অব্যাহত হামলার মুখে উদ্ধারকারীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারছেন না।
অন্য দিকে গাজায় দুর্ভিক্ষ ও অপুষ্টিজনিত কারণে আরো সাতজনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে একজন শিশু রয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ নিয়ে ক্ষুধাজনিত মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬৯ জনে, যার মধ্যে ৯৩ জনই শিশু। ইসরাইলের চলমান যুদ্ধ অভিযানে গাজায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৬০ হাজার ৪৩০ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন এক লাখ ৪৮ হাজার ৭২২ জন।
এ দিকে গাজায় চলমান যুদ্ধের কারণে ইসরাইলের সাথে সব ধরনের অস্ত্র বাণিজ্যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে স্লোভেনিয়া। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য দেশগুলোর মধ্যে এটি প্রথম পদক্ষেপ। বৃহস্পতিবার এক সরকারি বৈঠকের পর দেশটির প্রধানমন্ত্রী রবার্ট গোলোব এ সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেন। সরকার এক বিবৃতিতে জানায়, ইসরাইল থেকে এবং ইসরাইলের উদ্দেশে যে কোনো ধরনের অস্ত্র আমদানি, রফতানি ও পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।