গাজা যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ কামনায় ৬০০ সাবেক ইসরাইলি নিরাপত্তা কর্মকর্তা

Google Alert – সামরিক

গাজা যুদ্ধ অবসানের লক্ষ্যে  মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ চেয়ে এক খোলা চিঠি দিয়েছেন প্রায় ৬০০ ইসরাইলি সাবেক নিরাপত্তা কর্মকর্তা, যাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রধান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ বারাক ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোশে ইয়ালন।

সোমবার (৪ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে আল জাজিরা।

চিঠিতে তারা বলেছেন, ‘হামাস আর ইসরাইলের জন্য কৌশলগত হুমকি নয়— এটি আমাদের পেশাগত মূল্যায়ন। যুদ্ধ থামান, জিম্মিদের ফিরিয়ে আনুন, এই দুর্ভোগ বন্ধ করুন।’

তারা আরও উল্লেখ করেন, ‘ইসরাইলিদের বড় অংশের কাছে আপনার (ট্রাম্পের) গ্রহণযোগ্যতা আছে, তাই নেতানিয়াহু সরকারকে সঠিক পথে পরিচালিত করার ক্ষমতাও আপনার আছে।’

এই আহ্বান এসেছে এমন এক সময়ে, যখন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজায় সামরিক অভিযানের সম্প্রসারণে জোর দিচ্ছেন এবং হামাসের সঙ্গে অস্ত্রবিরতি আলোচনাও কার্যত স্থবির হয়ে গেছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলার পর গাজায় যুদ্ধ শুরু করে ইসরাইল। ওই হামলায় প্রায় ১,২০০ জন নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর থেকে ইসরাইলি হামলায় গাজায় অন্তত ৬০,০০০ মানুষ নিহত হয়েছে বলে হামাস-শাসিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

গাজায় মানবিক বিপর্যয়ও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহে ইসরাইলের কঠোর নিষেধাজ্ঞার কারণে এখন পর্যন্ত অপুষ্টিতে ৯৩ শিশুসহ ১৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে। জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থাগুলো বলছে, গাজায় ‘সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের দৃশ্য বাস্তবে রূপ নিচ্ছে।’

সম্প্রতি হামাস ও ইসলামিক জিহাদের হাতে থাকা দুই ইসরাইলি জিম্মির ভিডিও প্রকাশিত হওয়ার পর আবারও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিও দু’টি দেখে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েন জিম্মিদের পরিবার ও সাধারণ ইসরাইলিরা। নেতানিয়াহু তাদের পরিবারকে জানান, ‘জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা নিরবচ্ছিন্নভাবে চলবে।’

তবে ইসরাইলি মিডিয়া সূত্রে বলা হয়েছে, নেতানিয়াহু মূলত হামাসকে সামরিকভাবে পরাজিত করেই জিম্মিদের মুক্ত করতে চান। এ অবস্থায় নতুন করে সামরিক অভিযান শুরুর সম্ভাবনায় আরও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে ইসরাইলের মিত্র রাষ্ট্রগুলো, বিশেষ করে তারা যাঁরা যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ দিচ্ছে।

জিম্মিদের পরিবারের পক্ষে কাজ করা প্রধান সংগঠন বলেছে, ‘নেতানিয়াহু ইসরাইল ও জিম্মিদের সর্বনাশের পথে নিয়ে যাচ্ছেন।’

এই বক্তব্যই তুলে ধরেছেন সাবেক মোসাদ প্রধান তামির পারদো, সাবেক শিন বেত প্রধান আামী আইয়ালন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ বারাক, সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোশে ইয়ালনের মতো নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা। তারা সবাই কমান্ডারস ফর ইসরাইল’স সিকিউরিটি নামক সংগঠনের সদস্য, যা মূলত সাবেক আইডিএফ জেনারেল, গোয়েন্দা কর্মকর্তা, কূটনীতিকদের নিয়ে গঠিত একটি বিশাল গ্রুপ।

চিঠিতে তারা বলেন, ‘এই যুদ্ধ শুরুতে ন্যায়সঙ্গত প্রতিরক্ষামূলক যুদ্ধ ছিল। কিন্তু যখন সামরিক লক্ষ্য পূর্ণ হয়েছে, তখন থেকেই এটি ন্যায়সঙ্গত যুদ্ধ আর নেই।’

‘লেবাননে আপনি (ট্রাম্প) যা করেছেন, গাজায়ও সেটাই করুন,’— এভাবেই তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের প্রতি আহ্বান জানান।

গাজার ধ্বংসযজ্ঞ ও মানবিক বিপর্যয়ের কারণে ইসরাইল আন্তর্জাতিক পরিসরে ক্রমশ একঘরে হয়ে পড়ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জনমত ক্রমেই ইসরাইল-বিরোধী হয়ে উঠছে, যার ফলে পশ্চিমা নেতাদের ওপর চাপ বাড়ছে। যদিও ট্রাম্প কীভাবে, কতটা নেতানিয়াহুর ওপর চাপ প্রয়োগ করবেন, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

সম্প্রতি এক মন্তব্যে ট্রাম্প স্বীকার করেছিলেন, গাজায় ‘বাস্তবিকই দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি’ চলছে। অথচ নেতানিয়াহু আগেই বলেছিলেন, সেখানে এমন কিছু ঘটছে না। এই বিভেদও ইসরাইল-মার্কিন সম্পর্কে নতুন প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *