গুদামে পচছে কোটি টাকার পণ্য

Google Alert – আর্মি

সংগৃহীত ছবি

এক সময় বাংলাদেশ-মিয়ানমারের সঙ্গে টেকনাফ স্থলবন্দরের মাধ্যমে সীমান্তবাণিজ্য ব্যাপক জমজমাট ছিল। শত শত শ্রমিকের ব্যস্ততা ও ব্যবসায়ীদের আনাগোনায় মুখর থাকত বন্দর। কিন্তু গত সাড়ে তিন মাস ধরে আমদানি-রফতানি বন্ধ রয়েছে এই স্থলবন্দরে। এতে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন অনেক শ্রমিক। বিপাকে পড়েছেন আমদানি-রফতানির সঙ্গে জড়িত অনেক ব্যবসায়ী। বন্দরের গুদামে পড়ে নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার পণ্য। টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি আবার কবে চালু হবে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য কেউ জানাতে পারছে না। ফলে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে সীমান্তবাণিজ্য। বেকার হয়ে পড়েছেন দেড় হাজার শ্রমিক। বিপাকে পড়ে গেছেন কয়েকশ ব্যবসায়ী।

এ প্রসঙ্গে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহেসান উদ্দিন বলেন, বন্দরের আমাদানি-রফতানি বন্ধের এ সমস্যা নিয়ে এক মাস আগেও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মিটিং হয়েছে। বন্দরের বর্তমান অবস্থার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে বলেও জানান ইউএনও শেখ এহেসান উদ্দিন।

টেকনাফ স্থলবন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা সোহেল আহমেদ বলেন, আমদানি-রফতানি কার্যক্রম বন্ধে কোনো নোটিস আমরা পাইনি। গত ২২-২৩ অর্থবছরের ৬৪০ কোটি টাকা এবং ২৩-২৪ অর্থবছরের ৪০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হলেও টেকনাফ স্থলবন্দর থেকে গত সাড়ে তিন মাসে কোনো রাজস্ব সরকার পায়নি।

টেকনাফ বন্দরের ব্যবস্থাপক জসীম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের কারণে সীমান্তবাণিজ্যে প্রভাব পড়েছে। মালবোঝাই ট্রলার বন্দরে আসার সময় নাফ নদে আরাকান আর্মি সমস্যা সৃষ্টি করায় বন্দরের ব্যবসায়ীরা মালামাল আমদানি-রফতানি করতে পারছে না। গত এপ্রিল মাস থেকে এখন পর্যন্ত টেকনাফ স্থলবন্দরের সঙ্গে মিয়ানমারের আমদানি-রফতানি পুরোপুরি বন্ধ।

টেকনাফ স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হক বাহাদুর বলেন, সীমান্তবাণিজ্য বন্ধের কারণে বন্দরকেন্দ্রিক ব্যবসায়ীরা চরম বিপাকে পড়েছেন। মিয়ানমারের সঙ্গে আমদানি-রফতানি চালুর বিষয়টি এখন এক ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে। তবু আমরা চেষ্টা করছি কীভাবে আবারও সীমান্তবাণিজ্য চালু করা যায়। মিয়ানমারের সঙ্গে পণ্য আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে সে দেশের সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বাধা নেই। এখানে মূল সমস্যা আরাকান আর্মি। 

টেকনাফ স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হক বাহাদুর আরও বলেন, আমরা কক্সবাজার জেলা প্রশাসক থেকে শুরু করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়েও এ বিষয়ে দরখাস্ত দিয়েছি। পরবর্তী কী সিদ্ধান্ত আসে তার অপেক্ষায় আছি। বর্তমানে বন্দরের গুদামে পড়ে আছে কোটি টাকার আলু ও সিমেন্ট। ইতিমধ্যে আলুতে পচন ধরেছে।

সরেজমিন কথা হয় টেকনাফ বন্দরের শ্রমিক কামাল হোসেনের সঙ্গে। এ সময় তিনি বলেন, কাজ করতে না পারলে সংসারের খরচ জোগাড় করা সম্ভব হয় না। আমি নিয়মিত বন্দরে কাজ করতাম। এখন বন্দরের আমদানি-রফতানি বন্ধ। দেড় হাজার শ্রমিক এই বন্দরে কাজ করত। বলতে গেলে এখন সবাই বেকার হয়ে পড়েছে।

টেকনাফ বন্দরের আমদানিকারকদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, ১৯৯৫ সাল থেকে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে দুই দেশের পণ্য আমদানি-রফতানি চলে আসছে। যার মধ্যে মিয়ানমার থেকে আমদানি হচ্ছে হিমায়িত মাছ, শুঁটকি, পেঁয়াজ, বিভিন্ন ধরনের আচার, তেঁতুল ও প্লাস্টিক। আর রফতানির মালামালের মধ্যে রয়েছে-সিমেন্ট, আলু, দেশীয় কাপড়, বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিকের পাইপ ও চুল। কিন্তু বিগত বছর থেকে মিয়ানমার অভ্যন্তরে দেশটির সরকার বাহিনী ও বিদ্রোহী গ্রুপ আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘাত শুরু হলে তার প্রভাব পড়তে থাকে টেকনাফ স্থলবন্দরে। এতে করে একপর্যায়ে টেকনাফ বন্দরের সঙ্গে মিয়ানমারের মংডু, আকিয়াবসহ সর্বশেষ ইয়াঙ্গুন বন্দরের আমদানি-রফতানি বন্ধ হয়ে যায়।

টেকনাফ বন্দরের আমদানিকারকরা আরও জানান, মিয়ানমারের রাখাইন সীমান্ত আরাকান আর্মির দখলে যাওয়ার পর থেকে মূলত এই সমস্যা সৃষ্টি হয়। একাধিকবার আরাকান আর্মি নাফ নদে মালবোঝাই ট্রলার আটকানোসহ বাধা সৃষ্টি করে।

এ কারণে ধীরে ধীরে উভয় দেশের সীমান্তবাণিজ্যের মধ্যে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরে পণ্য আমদানি ও রফতানি পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। এতে এপারের টেকনাফ বন্দরে বিপুল পরিমাণ আলু ও সিমেন্ট গুদামে পড়ে রয়েছে। সেসব আলুতে পচনও ধরেছে। এ ছাড়া ওপারে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকার মালামাল আটকে রয়েছে। 

এমএইচ

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *