চ্যানেল আই অনলাইন
আওয়ামী লীগের শাসনামলে গুম ও নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের পৃথক মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত ১৫ সেনা কর্মকর্তাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনা হয়েছে।
বুধবার সকাল ৭ টা ১৫ মিনিটে বাংলাদেশ জেলের একটি বিশেষ প্রিজন ভ্যানে করে সাধারণ পোশাকে আসামীদের ট্রাইব্যুনালে আনা হয়।
এদিকে, সেনা কর্মকর্তাদের ট্রাইব্যুনালের আনার প্রেক্ষাপটে ট্রাইব্যুনালকে ঘিরে আইন–শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজিরবিহীন নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়। ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, এপিবিএনের বিপুল সংখ্যক সদস্যদের উপস্থিতি দেখা যায়।

এছাড়া রাজধানীর কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর, কাকরাইল মোড়সহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সেনাবাহিনী, আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবস্থান দেখা গেছে।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে গুম ও নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের পৃথক দুই মামলায় পাচটি করে অভিযোগ আমলে নিয়ে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিকী ও ডিজিএফআইয়ের সাবেক পাঁচ মহাপরিচালসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে গত ৮ অক্টোবর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। সেই সাথে পরোয়ানাভুক্ত আসামীদের ২২ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ দেয়া হয়। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালের অপর দুই বিচারক হলেন মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
টিএফআই সেলে নির্যাতনের মামলার আসামীরা হলেন:-
১. ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
২. সাবেক প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকী
৩. সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল
৪. সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ
৫. র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক এম খুরশিদ হোসেন
৬. র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ব্যারিস্টার মো. হারুন-অর-রশিদ
৭. র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপস) কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান
৮. র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম
৯. র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার
১০. র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপস) কর্নেল কে এম আজাদ
১১. র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান
১২. র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম
১৩. র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপস) কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন
১৪. র্যাবের সাবেক পরিচালক (ইন্টেলিজেন্স উইং) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম
১৫. সাবেক পরিচালক (ইন্টেলিজেন্স উইং) লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মুহাম্মাদ খায়রুল ইসলাম
১৬. র্যাবের সাবেক পরিচালক (ইন্টেলিজেন্স উইং) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মশিউর রহমান জুয়েল
১৭. সাবেক পরিচালক (ইন্টেলিজেন্স উইং) লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন।
জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে নির্যাতনের মামলায় আসামিরা হলেন:-
১. ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
২. সাবেক প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকী
৩. ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. আকবর হোসেন
৪. ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আবেদিন
৫. ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আলম
৬. ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আহমেদ তাবরেজ শামস চৌধুরী
৭. ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হক
৮. সিটিআইবির সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ তৌহিদুল উল ইসলাম
৯. সিটিআইবি ও ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন
১০. সিটিআইবি ও ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ
১১. সিটিআইবি ও ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী
১২. সিটিআইবি ও ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী
১৩. লেফটেন্যান্ট কর্নেল মখছুরুল হক।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনালের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর গত ১১ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে ১৫ জন কর্মরত সেনা কর্মকর্তাকে হেফাজতে নেওয়ার কথা জানায় সেনাবাহিনী। আর্মি অফিসার্স মেসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর অ্যাডজুটান্ট জেনারেল মেজর জেনারেল মো.হাকিমুজ্জামান বলেন, দুটি মামলার ৩০ জন আসামির মধ্যে ২৫ জনই সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে নয় জন অবসরপ্রাপ্ত, একজন এলপিআরে গেছেন এবং বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন ১৫ জন।
পরবর্তীতে ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবনকে সাময়িকভাবে কারাগার ঘোষণা করে গত ১২ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের উপসচিব মো. হাফিজ আল সাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ধারা ৫৪১(১) এর ক্ষমতাবলে এবং দি প্রিজন অ্যাক্ট এর ধারা ৩ এর বি অনুসারে ঢাকা ঢাকা সেনানিবাসের বাশার রোড সংলগ্ন উত্তর দিকে অবস্থিত ’এমইএস’ বিল্ডিং নং-৫৪-কে সাময়িকভাবে কারাগার হিসেবে ঘোষণা করা হলো’।


