Google Alert – সেনাবাহিনী
ছবির উৎস, Manoj Kumar Saha
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশকে কেন্দ্র করে গতকাল বুধবার গোপালগঞ্জে দিনভর সহিংসতা ও রক্তক্ষয়ী পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এর পর রাত থেকে শুরু হয় কারফিউ যা এখনো চলছে। পুরো জেলায় এখনো থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে সেখানকার স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কারফিউ জারির পর থেকে গোপালগঞ্জের রাস্তাঘাট প্রায় জনমানবশূন্য।
“এখন পর্যন্ত শহরের সব দোকান-পাট বন্ধ। দু’একটা রিকশা চলছে। রাস্তায় সেভাবে কাউকে দেখা যাচ্ছে না,” থানায় যেতে যেতে বিবিসিকে বলছিলেন সেখানকার একজন সাংবাদিক।
তিনি জানান, কারফিউ জারি করার পর থেকেই এই অবস্থা গোপালগঞ্জে।
“গতকাল রাত ১২টার দিকে অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথেও এরকমই অবস্থা ছিল। সীমিত রিকশা, একটা-দুইটা খাবারের দোকান ছাড়া বাকি প্রায় সব বন্ধ ছিল,” যোগ করেন তিনি।
সেখানকার বর্তমান পরিস্থিতি জানতে পুলিশের সাথেও যোগাযোগ করেছে বিবিসি বাংলা।
গোপালগঞ্জ সদর সার্কেল পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও বিবিসিকে বলেন, গোপালগঞ্জের “পরিস্থিতি স্বাভাবিক, তবে থমথমে। কারফিউ বলবৎ আছে।”
“গতকাল সন্ধ্যা থেকেই গোপালগঞ্জে বিশেষ অভিযান পরিচালনা হচ্ছে। সেনাবাহিনীর অধীনে এটি পরিচালনা করছে পুলিশ ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী,” জানান ওই কর্মকর্তা।
পুলিশ জানিয়েছে, গতকালের ঘটনায় গ্রেফতারও করা হয়েছে। কিন্তু গ্রেফতারের সংখ্যা কত, সে সম্পর্কে তিনি পরিষ্কার কোনো ধারণা দেননি।
এছাড়া, আজ সকাল থেকে এখন পর্যন্ত কোনও সংঘর্ষ বা মিছিলের খবরও পায়নি তারা।
ছবির উৎস, Manoj Kumar Saha
কী হয়েছিলো গতকাল
পহেলা জুলাই থেকে দেশব্যাপী শুরু হওয়া ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচি ঘোষণা করে এনসিপি।
তাদের এই কর্মসূচিকে ঘিরে ওইদিন রাত থেকেই জেলাটিতে উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
এরপরও গতকাল সমাবেশের আয়োজন করা হয় গোপালগঞ্জ শহরের পৌর পার্ক এলাকায়।
কিন্তু এনসিপি’র কেন্দ্রীয় নেতারা মাবেশস্থলে পৌঁছানোর আগেই গতকাল দুপুর দেড়টার দিকে গোপালগঞ্জে এনসিপি’র সমাবেশস্থলে হামলার ঘটনা ঘটে।
ওই সময় হামলাকারীরা সভামঞ্চে ভাঙচুরসহ এনসিপি’র নেতাকর্মীদের ওপর হামলা এবং ককটেল বিস্ফোরণ করে বলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত একাধিক সাংবাদিক বিবিসিকে জানান।
পরে এনসিপি’র নেতাকর্মীরা তাদের পাল্টা ধাওয়া দিয়ে সভাস্থলের নিয়ন্ত্রণ নেন। এবং, দুপুর ২টার দিকে কেন্দ্রীয় নেতারা সমাবেশস্থলে পৌঁছে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন।
কিন্তু সমাবেশ শেষে ফিরে যাওয়ার সময় গোপালগঞ্জ সরকারি কলেজের সামনে হামলার মুখে পড়ে এনসিপি’র কেন্দ্রীয় নেতাদের গাড়িবহর।
সেসময় গাড়িবহরের ওপর ব্যাপক ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে হামলাকারীরা। ওই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ।
ছবির উৎস, Sardar Ronie
পুলিশ ও র্যাবের পাহারায় এনসিপি’র নেতাদের শহর থেকে বাইরে বের করার চেষ্টা করা হলেও ব্যাপক হামলার মুখে তাদের আবারও শহরে ফিরিয়ে আনা হয়।
কিছুক্ষণ পরে সেনাবাহিনীর একটি টহল টিম ঘটনাস্থলে গেলে তাদের ওপরেও হামলা চালানো হয়। তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনা সদস্যরা ফাঁকা গুলি ছোঁড়েন বলে জানা যায়।
একপর্যায়ে এনসিপি নেতাদের গাড়ি বহর ঘুরিয়ে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
পরবর্তীতে, সেনাবাহিনী ও পুলিশের কড়া পাহারায় গোপালগঞ্জ ছাড়েন তারা।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রথমে ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। কিন্তু তাতেও কাজ না হওয়ায় বুধবার রাত আটটা থেকে আজ সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত গোপালগঞ্জে কারফিউ জারি করেছে সরকার।
বিপুল সংখ্যক পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজিবি সদস্যও মোয়াতেন করা হয়েছে সেখানে।
এদিকে, এই সমাবেশকে ঘিরে গোপালগঞ্জ শহরের পৌর পার্ক ও লঞ্চঘাট এলাকায় গতকাল দফায় দফায় কয়েক ঘণ্টা ধরে যে সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ ও গুলি চলেছে, তাতে অন্তত চারজন নিহত চারজনের মরদেহ হাসপাতালে এসেছে বলে গতকাল বিবিসিকে নিশ্চিত করেছেন গোপালগঞ্জের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জীবিতেশ বিশ্বাস।
সংঘর্ষের ঘটনায় আরও অনেকে আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলেও প্রাণঘাতী কোনো অস্ত্র ব্যবহার করেনি বলে বিবিসি বাংলার কাছে দাবি করেছিলেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম।
ছবির উৎস, Sardar Ronie
গোপালগঞ্জের সহিংসতার প্রভাব
হামলার প্রতিবাদে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেন এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।
গতকাল বিকেলেই সম্মিলিতভাবে শাহবাগ ব্লকেড করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, জাতীয় নাগরিক পার্টি, যুবশক্তিসহ ছাত্র-জনতা।
এতে করে শাহবাগে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়।
এছাড়া, গোপালগঞ্জে এনসিপি নেতাদের ওপর হামলার ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবারো সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
এদিকে, গোপালগঞ্জে হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি।
অন্যদিকে, সরকার জানিয়েছে, হামলাকারীদের “বিনা বিচারে ছেড়ে দেওয়া হবে না।”