চবিতে দেরিতে আসায় ভর্তির সুযোগ বাতিল শিক্ষার্থীর

RisingBD – Home

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) নির্দিষ্ট সময়ের ৩ ঘণ্টা পর আসায় ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে এক শিক্ষার্থীর ভর্তির সুযোগ বাতিল করেছে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটি। এতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন তিনি।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম কৌশিক কুমার সীমান্ত। তার বাড়ি বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলায়। চবির ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তিনি ৩৫৩৫তম মেরিট অর্জন করেন। পরে সংস্কৃতি বিভাগের গণবিজ্ঞপ্তিতে তিনি ১২তম পজিশনে ডাক পান। তার ভর্তি পরীক্ষার রোল নম্বর ২৪১৮৪৪।

জানা গেছে, সংস্কৃতি বিভাগের গণবিজ্ঞপ্তিতে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ভর্তির সময় ছিল গত ২৬ জুন সকাল ১১টা পর্যন্ত। কিন্তু ওই শিক্ষার্থী বিভাগে আসেন দুপর ২টায়। পরে ভর্তি প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্টরা জানান, যথাসময়ে উপস্থিত না হওয়ায় তার নামটি অন্তর্ভুক্ত হয়নি। 

এদিকে, বুধবার (১৬ জুলাই) অনুষ্ঠিত ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সভায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর করা আবেদনটি গৃহীত না হওয়ায় ভর্তি বাতিল হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সদস্য সচিব ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার (অ্যাকাডেমিক) এসএম আকবর হোছাইন। 

গত ২৯ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. ইকবাল শাহিনের সুপারিশে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইয়াহ্ইয়া আখতার বরাবর একটি আবেদনপত্র জমা দেন কৌশিক সীমান্ত। 

আবেদনপত্রে সীমান্ত বলেছেন, “নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে আমি নির্ধারিত সময়ে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেখতে পাইনি। ২৫ জুন রাত ১২টার দিকে আমি ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেখতে পাই এবং তৎক্ষণাৎ আমার বাবা অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে আমাকে ঢাকা পাঠান। সঠিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছানোর জন্য আমার বাবা ঋণ করে বিমানের টিকিট সংগ্রহ করেন এবং আমি দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটের ফ্লাইটে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম রওনা হই।”

তিনি বলেন, “এর আগেই  সকাল ৯টায় আমার এলাকার এক সিনিয়র ভাই, যিনি চবিতে অধ্যায়নরত আছেন, তার মাধ্যমে আমার সকল কাগজ-পত্রের ফটোকপিসহ ভর্তি-সংক্রান্ত কক্ষে এবং ডিন অফিসে যোগাযোগ করাই। কিন্তু সেখান থেকে তাকে জানানো হয়, ছাত্রকে সরাসরি যে কোনোভাবে ১১টার মধ্যে উপস্থিত থাকতে হবে।”

আবেদনপত্রে তিনি আরো উল্লেখ করেন, “বিলম্বে পৌঁছানোর বিষয়টি উপলব্ধি করে আমার বাবা উপাচার্য স্যারকে ফোন করে বিলম্বে পৌঁছানোর বিষয়টি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য অনুরোধ করেন। উপাচার্য সংশ্লিষ্ট ডিন মহোদয়ের কাছে জানানোর পরামর্শ দেন। অতঃপর আমি দুপুর ২টায় ভর্তি-সংক্রান্ত কক্ষে উপস্থিত হই। কক্ষে দায়িত্বরত ব্যক্তিদের পরিচয় দিলে তারা আমাকে অপেক্ষা করতে বলেন। পরে আমাকে ৪.৫০ মিনিটে তারা জানান যে যথাসময়ে উপস্থিত না হওয়ায় আমার নাম অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না।”

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী কৌশিক কুমার সীমান্ত রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “আমি অত্যন্ত প্রত্যন্ত উপকূলীয় এলাকার একজন দরিদ্র পরিবারের সন্তান। আমার এলাকা প্রতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ বৃষ্টি, বন্যা এবং প্রতিকূল আবহাওয়ার সম্মুখীন হয়। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার সময় নেটওয়ার্কের সমস্যার কারণে আমি অনলাইনে ঢুকতে পারিনি। ফলে ২৪ জুন সকাল ৯টায় গণবিজ্ঞপ্তি দিলেও আমি ২৫ জুন রাত ১২টায় ভর্তির নোটিশটি দেখতে পাই।”

তিনি বলেন, “তাৎক্ষণিকভাবে আমি অ্যাম্বুলেন্সযোগে ঢাকা যাত্রা করি। যেখানে আমার বাবা ঋণ করে বিমানের টিকিটের ব্যবস্থা করেন। এরপর আমি রাত সাড়ে ১২টার ফ্লাইটে চট্টগ্রামে যাত্রা করে দুপুর ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি নেওয়ার জায়গায় উপস্থিত হই। পরে সেখান থেকে আমাকে জানানো হয়, নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হতে না পারায় বর্তমানে ভর্তি নেওয়া সম্ভব নয়; তবে সিট খালি থাকলে জানানো হবে।”

তিনি বলেন, “২৯ জুন আমি উপাচার্য বরাবর একটি আবেদনপত্র জমা দেই। এরপর গত ৪ জুলাই আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (অ্যাকাডেমিক) এসএম আকবর হোছাইনের কাছে আমার ভর্তির অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, আগামী ১৬ জুলাই একটি মিটিং হবে, আমি যেন তখন পর্যন্ত অপেক্ষা করি। সে অনুযায়ী আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে ডেপুটি রেজিস্ট্রার (অ্যাকাডেমিক) স্যারের সঙ্গে দেখা করলে তিনি জানান, আমার আবেদন মিটিংয়ে গৃহীত হয়নি।”

“এখন আমার ভবিষ্যৎ কি? আমার শিক্ষা জীবন হুমকীর মুখে। পুরো ঘটনার কারণে আমি শারীরিক, মানসিক ও আর্থিকভাবে একেবারে ভেঙে পড়েছি,” যুক্ত করেন সীমান্ত। 

এমতাবস্থায় সার্বিক পরিস্থিতি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করে ভর্তির সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন সীমান্ত। 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (অ্যাকাডেমিক) ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সদস্য সচিব এসএম আকবর হোছাইন বলেন, “ওই শিক্ষার্থীরর আবেদনটি গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত ভর্তি পরীক্ষা কার্যক্রম কমিটির সভায় গৃহীত না হওয়ায় বাতিল হয়েছে।” তবে বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. ইকবাল শাহিন খান রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “ওই শিক্ষার্থীর বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। সে ৩ ঘণ্টা পরে আসছিল। পরে সে আমার থেকে সুপারিশ নিয়ে উপাচার্য বরাবর আবেদপত্র দিয়েছিল। তবে গতকাল অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সভায় তার আবেদনটি গৃহীত হয়নি। ফলে তার ভর্তি বাতিল হয়েছে।”

শিক্ষার্থীর বাস্তবতা ও সার্বিক অবস্থা জানিয়ে তাকে মানবিক বিবেচনায় ভর্তির সুযোগ দেওয়া যায় কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “গতকালের সিদ্ধান্তের পরে আর সুযোগ দেওয়া সম্ভব নয়। তার মতো এ রকম সমস্যায় আরো অনেকেরই ছিল, তাদেরও ভর্তি বাতিল করা হয়েছে। তাই নিয়মানুযায়ী তাকে ভর্তির সুযোগ দেওয়া যাচ্ছে না।”

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (অ্যাকাডেমিক) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেন, “তিন ঘণ্টা কেন, তিন মিনিট দেরি করে আসলেও এসব বিষয়ে সুযোগ দেওয়া হয় না। যথাসময়ে না আসায় গতকাল অনেকের ভর্তি বাতিল হয়েছে। কাউকে সুযোগ দেওয়া হবে না।”

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *