Bangla Tribune
চীনের বিকল্প উৎপাদনকেন্দ্র হিসেবে নিজেদের উপস্থাপন করতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছিল ভারত। তবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আকস্মিক ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ সেই প্রচেষ্টায় বাদ সেধেছে। ফলে ভারতের সামনে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নতুন করে বিবেচনার কোনও বিকল্প থাকছে না। মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর এক প্রতিবেদনে এমনটিই দাবি করা হয়েছে।
মার্কিন কোম্পানিগুলো চীনের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে যে বিপুল বিনিয়োগ ভারতে করেছিল, তা কার্যত অর্থহীন হয়ে পড়েছে। বহুল আলোচিত ‘চায়না প্লাস ওয়ান কৌশল’ ভেস্তে যাওয়ার পথে। এই নীতিতে চীনের পাশাপাশি ভারতকে উৎপাদনশীল বিকল্প হিসেবে ধরা হয়েছিল।
শুল্ক কার্যকর হওয়ার এক সপ্তাহও হয়নি, এরই মধ্যে দিল্লি ও ওয়াশিংটনের বাণিজ্যিক অংশীদাররা হঠাৎ পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে। এর প্রমাণ মিলেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাম্প্রতিক চীন সফরে। সাত বছর পর বেইজিং গিয়ে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি।
ভারতের উত্থানশীল উৎপাদন খাত, বিশেষত প্রযুক্তি শিল্পে প্রবৃদ্ধি, কোটি তরুণের কর্মসংস্থানের বড় ভরসা হিসেবে দেখা হচ্ছিল। কিন্তু ওয়াশিংটনের সহযোগিতা ছাড়া এবং চীনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে এই লক্ষ্য অর্জন আরও কঠিন হয়ে উঠবে।
শুল্কের কারণে সরবরাহ চেইনে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। মার্কিন আমদানিকারকেরা এখন ভিয়েতনাম বা মেক্সিকোর মতো কম শুল্কের বাজারে ঝুঁকছে। যদিও মার্কিন আদালত শুল্ককে সাময়িকভাবে বহাল রেখেছে। তবে আপিল প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে।
ভারতের অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ট্রাম্পের এই ধাক্কা রফতানি প্রবৃদ্ধি কমিয়ে দেবে এবং চায়না প্লাস ওয়ান-সংক্রান্ত বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করবে।
মোদির সফরে বড় কোনও চুক্তি না হলেও দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে দিল্লি। তবে সীমান্ত বিরোধ, ২০২০ সালের গালওয়ান সংঘর্ষে প্রাণহানি এবং পারস্পরিক নিষেধাজ্ঞার কারণে সম্পর্ক এখনও জটিল।
চীন ভারতের জন্য প্রয়োজনীয় ১৩৪টি শিল্পপণ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে। অন্যদিকে ভারতও চীনা বিনিয়োগে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে এবং জনপ্রিয় অ্যাপ টিকটকসহ শতাধিক অ্যাপ নিষিদ্ধ করেছে।
উত্তরপ্রদেশের মরাদাবাদের হস্তশিল্প ও হালকা শিল্প খাতের ব্যবসায়ীরা নিজেদের প্রতারণার শিকার মনে করছেন। স্থানীয় এক উদ্যোক্তা বলেন, তার কারখানার প্রায় ৪০ শতাংশ পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি হতো। শুল্ক আরোপের পর বিকল্প বাজার খোঁজার চেষ্টা করলেও প্রতিযোগিতা তীব্র হয়ে উঠছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন উভয়েই ভারতের প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার। তবে এখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কে টানাপোড়েন এবং চীনের অর্থনৈতিক প্রভাবের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা দিল্লির জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এক ভারতীয় আইনজীবী মন্তব্য করেছেন, চায়না প্লাস ওয়ান, চীন ছাড়া সম্ভব নয়। তার মতে, ভারতকেও সরবরাহ চেইনে চীনকে অন্তর্ভুক্ত করার বাস্তবতা মেনে নিতে হবে।
মোদির জন্য এ এক নতুন দোটানা। একদিকে দেশীয় উৎপাদনশীলতা ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর লক্ষ্য, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর শুল্কনীতি ও চীনের সঙ্গে জটিল প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক সম্পর্ক। ফলে ভারত এখন কোন পথে এগোবে, সেটাই বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।