চীনে ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১২৬

Amarbangla Feed

চীনের তিব্বত অঞ্চলে শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১২৬ জনে পৌঁছেছে। খবর রয়টার্সের।


মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) বেইজিংয়ের স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ৫ মিনিটে আঘাত হানা এ ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে সাত দশমিক এক। প্রথমবার কম্পন হওয়ার পর কয়েক মিনিট ধরে বেশ কয়েক ডজন ‘আফটার শক’ হয়েছে বলে জানিয়েছে চীনের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা সংস্থা চায়না আর্থকোয়েক নেটওয়ার্কস সেন্টার। প্রতিটি আফটার শকের মাত্রা ছিল চার দশমিক চার কিংবা তারও কিছু বেশি। ইউএসজিএসের তথ্য অনুসারে, ভূকম্পের প্রথম ধাক্কাটির মাত্রা ছিল সাত দশমিক এক।


চায়না আর্থকোয়েক নেটওয়ার্কস সেন্টার বলেছে, হিমালয় পর্বতমালার উত্তরাঞ্চলীয় প্রবেশপথ হিসেবে পরিচিত প্রত্যন্ত ডিংরি কাউন্টির সোগো শহরে ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে ভূমিকম্পটির উৎপত্তি।


উতপত্তিস্থল থেকে হিমালয় পর্বতমালার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টের দূরত্ব মাত্র ৮০ কিলোমিটার। ডিংরি শহরটি মূলত এভারেস্ট অঞ্চলের উত্তরাঞ্চলীয় প্রবেশ পথ হিসেবে পরিচিত।


স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, আহতের সংখ্যা শতাধিক ছাড়িয়েছে এবং বহু মানুষ এখনো নিখোঁজ। উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া লোকদের উদ্ধারে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে দুর্গম এলাকা ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে উদ্ধার কার্যক্রমে চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে।


ভূমিকম্পে অসংখ্য বাড়িঘর ধসে পড়েছে এবং সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বিধ্বস্ত এলাকার বাসিন্দাদের জন্য ত্রাণশিবির স্থাপন করা হয়েছে। চীনের কেন্দ্রীয় সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা করছে।


জানা যায়, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের ২০ কিলোমিটার ব্যাসের মধ্যে তিনটি শহর ও ২৭টি গ্রাম আছে। এগুলোর মোট লোকসংখ্যা ছয় হাজার ৯০০ জন।


শিগেইস বিভাগের ডিংরি কাউন্টিতেই অধিকাংশ হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। ডিংরির চাংসুও শহরে টংলাই এলাকায় বহু ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে। শিগেইস বিভাগের লোকসংখ্যা প্রায় আট লাখ।


শিগেইস বিভাগের কেন্দ্রীয় শহর শিগেইস তিব্বতের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর, এটি শিগাৎসি নামেও পরিচিত। লাসা থেকে ২৮০ কিলোমিটার দক্ষিণপমশ্চিমের এ শহরটি তিব্বতের দ্বিতীয় পবিত্রতম শহর এবং পাঞ্চেন লামার বাসস্থান। ভূমিকম্পে হিমালায় পর্বতমালার নিকটবর্তী এই শহরটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।


ডিংরি কাউন্টির প্রধান সিনহুয়াকে জানিয়েছেন, ভূমিকম্পটি তাদের কাউন্টিতে প্রবলভাবে অনুভূত হয়েছে। মূল ভূমিকম্পের পর কয়েক ডজন পরাঘাতও অনুভূত হয়েছে।


ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি হিসাব করতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন শহরে উপস্থিত হচ্ছে বলে সিনহুয়া জানিয়েছে।


বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, সামাজিক মাধ্যমে আসা এক ভিডিওতে লাটসি শহরের চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাওয়া দোকান দেখা গেছে, সামনের রাস্তায় আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।


নেপালের জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা সংস্থা ন্যাশনাল ডিজাস্টার রিস্ক রিডাকশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অথরিটি (এনডিআরআরএমএ) জানিয়েছে, তিব্বতের সীমান্ত ঘেঁষা দেশটির সাতটি জেলার প্রতিটিতেই কম্পন অনুভূত হয়েছে।


তিব্বত চীনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল বা প্রদেশ। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এক তাৎক্ষণিক ঘোষণায় জানিয়েছেন, নিখোঁজদের সন্ধান এবং উদ্ধারে সর্বাত্মক অভিযান চলছে। ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে যেন যত শিগগির সম্ভব খাদ্য, তাঁবু ও শীতবস্ত্র সহায়তা দেওয়া যায়, সে লক্ষ্যে কাজ চলছে। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ততের পূনর্বাসনে সরকার সহায়তা করবে বলেও উল্লেখ করেছেন প্রেসিডেন্ট।


উৎপত্তি স্থল থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরে নেপালের রাজধানী কাঠমাণ্ডুতেও ভূমিকম্পটি অনুভূত হয়েছে। ভোর সকালে কাঠমাণ্ডুর বাসিন্দারা ঘরে ছেড়ে বাইরে ছুটে যান।


ভূমিকম্পটি ভুটানের রাজধানী থিম্ফু এবং ভারতের বিহার রাজ্যসহ উত্তরাঞ্চলজুড়ে অনুভূত হয়েছে। তবে এসব অঞ্চলে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে খবর হয়নি।


ভারতীয় ও ইউরেশীয় টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষে কারণে চীনের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চল, নেপাল ও ভারতের উত্তরাঞ্চলে ঘন ঘন ভূমিকম্প হয়। ভূমিকম্পটি নেপাল, ভুটান ও ভারতের উত্তরাঞ্চলের পাশাপাশি বাংলাদেশেও অনুভূত হয়েছে।


আমারবাঙলা/এমআরইউ

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *