‘ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের ঘোষণা শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকারকে খর্ব করবে’

Google Alert – পার্বত্য চট্টগ্রাম

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদ বলেন, সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আবাসিক হলগুলোতে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন। হলগুলোতে দখলদারত্ব বন্ধের অজুহাতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের ঘোষণা শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকারকে খর্ব করবে।

মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে বাম ছাত্র সংগঠনগুলোত মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

সম্মেলনে তিনি বলেন, প্রশাসনের মদতপুষ্ট সংগঠনকে ক্যাম্পাস এবং হলে একচ্ছত্র আধিপত্যের সুযোগ করে দিতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এই ধরনের অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শিক্ষার্থীদের মূল আশঙ্কা ছিল, ক্ষমতাসীন ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমে নতুন করে গণরুম-নির্যাতন চালুর সুযোগ তৈরি হবে কিনা। কিন্তু এই সংকট সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক সংস্কার, আবাসন সংকট নিরসন, প্রশাসনের দলীয় আনুগত্য বন্ধসহ সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এড়িয়ে গিয়ে হলে রাজনীতি নিষিদ্ধের মতো জনতুষ্টিবাদী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলো, যার প্রভাব সদূরপ্রসারী।

“অভ্যুত্থানের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে জবাবদিহিমূলক, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টির সুযোগ বিনষ্ট করে বিরাজনীতিকরণের মাধ্যমে গুপ্ত রাজনীতি ও নতুন আধিপত্যেও পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে। হলে রাজনীতি নিষিদ্ধের পাঁয়তারা ডাকসু নির্বাচনের সমসুযোগ, সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিনষ্ট করবে। নির্বাচনের আগে সংকীর্ণ স্বার্থকে সামনে রেখে যারা শিক্ষার্থীদের আশঙ্কাকে বিরাজনীতিকরণের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছেন তাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সজাগ থাকা জরুরি।”

বক্তারা বলেন, বিগত সময়েও ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধের কথা বলে যারা নিজেরা রাজনৈতিক সংগঠন তৈরি করেছেন, লেজুড়বৃত্তি করছেন, পদধারী হয়েছেন, তারাই আজ বিশ্ববিদ্যালয় হলে রাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়ে তৎপর। রাজনীতির নামে কোনও সংগঠন যেন ছাত্রলীগের মতো আবার সন্ত্রাস-দখলদারত্ব, গণরুম-গেস্টরুম কায়েম করতে না পারে সে বিষয়ে ছাত্র-শিক্ষকদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। একই সাথে বিরাজনীতিকরণের মাধ্যমে প্রশাসনিক এবং রাষ্ট্রীয় স্বৈরতন্ত্র কায়েমের নতুন পাঁয়তারা রুখে দিতে ছাত্র সমাজকে সচেতন থাকতে হবে।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বিগত এক বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তোফাজ্জল এবং সাম্য হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। নারী শিক্ষার্থীরা বিভিন্নভাবে হেনস্তার শিকার হয়েছেন। ভিন্ন মত, চিন্তা ধারণ করার জন্য বহু শিক্ষার্থী মব ভায়োলেন্স এবং লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন। বিগত সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের নেতা-কর্মীরা ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ে সর্বাত্মক ভূমিকা রেখেছে। বারবার তারা সরকার, প্রশাসন এবং ছাত্রলীগের দ্বারা নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়েছে। অথচ অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাদের সম্পর্কে নানারকম মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে, আমাদের সম্পর্কে জনমানসে বিদ্বেষ উসকে দেওয়া হচ্ছে। এসব ঘটনা গণতান্ত্রিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পারস্পরিক সহাবস্থান এবং গণতন্ত্র চর্চার জন্য হুমকিস্বরূপ।

ছাত্র শিবিরের রাজনীতি প্রসঙ্গে বলা হয়, অতীতের মতো ছাত্র শিবির এখনও গোপন রাজনীতিতেই বিশ্বাস করে। এতে ছাত্র শিবিরকে সংগঠনগতভাবে তাদের নেতা-কর্মীদের অপকর্মের দায় নিতে হয় না। এমনকি যারা অতীতে ছাত্রলীগের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে ছিল তাদেরকেও প্রকাশ্যে আনতে হয় না। তথাকথিত সামাজিক কাজ এবং ‘ধর্মীয় কর্মকাণ্ড’র মুখোশে তারা অনায়াসে নিজেদের সাংগঠনিক কাজ চালায় এবং বিরোধীমতকে দমন করতে পারে। কিন্তু এর ক্ষতিকর প্রভাব মারাত্মক।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সমন্বয়ক এবং গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি ছায়েদুল হক নিশান; সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী; বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি তামজিদ হায়দার; বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি দিলীপ রায়; বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের অমল ত্রিপুরা; বিপ্লবী ছাত্র যুব-আন্দোলনের ভারপ্রাপ্ত  সভাপতি তাওফিক প্রিয়া।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *