জনগণের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ

Google Alert – ইউনূস

মালয়েশিয়া সফরে প্রধান উপদেষ্টা

* ইউকেএম থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি পেলেন প্রফেসর ইউনূস * মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের গ্র্যাজুয়েট প্লাস ভিসা দেওয়ার সম্ভাবনা * রোহিঙ্গা ইস্যুতে মালয়েশিয়ার দূতের সঙ্গে ড. খলিলুর রহমানের আলোচনা মালয়েশিয়া সফর শেষে দেশে ফিরলেন প্রধান উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমরা ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন আয়োজনের জন্য কঠোর পরিশ্রম করছি, যাতে জনগণের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা যায়। তিনি বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে এবং ক্ষমতার প্রকৃত মালিক জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। গতকাল বুধবার কুয়ালালামপুরে মালয়েশিয়া ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় (ইউকেএম) থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণের পর দেওয়া বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। কুয়ালালামপুরে ইউকেএম বিশ্ববিদ্যালয় অডিটোরিয়ামে এক আনন্দমুখর পরিবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ও নেগেরি সেমবিলান দারুল খুসুস রাজ্যের সুলতান তুংকু মুহরিজ ইবনি আলমারহুম তুংকু মুনাওয়িরর কাছ থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রির সনদ গ্রহণ করেন ড. ইউনূস। সামাজিক ব্যবসা প্রসারে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে এ সম্মাননা দেওয়া হয়।

ড. ইউনূস বলেন, ‘এই স্বীকৃতি আমাকে তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন পূরণে আমার দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। গত বছর বাংলাদেশের বহু তরুণ সাহসিকতার সঙ্গে একটি ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল। শত শত ছাত্র-যুবক একটি উন্নত ভবিষ্যতের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছে, যেখানে প্রত্যেকে মর্যাদার সঙ্গে বাঁচতে পারবে এবং ভয়, বৈষম্য ও অবিচার থেকে মুক্ত থাকবে। নতুন বাংলাদেশ গড়তে তার সরকার কাজ করছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসে তরুণদের নেতৃত্বে সংঘটিত অভ্যুত্থান আমাদের জাতীয় পরিচয় ও ভবিষ্যৎ আশার নতুন অর্থ তৈরি করেছে। আজ আমরা এক নতুন বাংলাদেশ গড়তে কাজ করছি, যেখানে শাসনব্যবস্থা হবে ন্যায়সংগত, অর্থনীতি হবে সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং প্রত্যেকে সমান সুযোগ পাবে সফল হওয়ার জন্য।

আমাদের সরকার শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার দিকে মনোযোগী রয়েছে। সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হিসেবে সংস্কারের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের রয়েছে সুস্পষ্ট লক্ষ্য বিস্তৃত পরিকল্পনা এবং এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয়। একটি শক্তিশালী ও সহনশীল বাংলাদেশ গড়তে আমাদের অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন প্রয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে উদ্যোক্তাদের সহায়তা, শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে বেশি বিনিয়োগ এবং আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ড. ইউনূস বলেন, ‘তোমরা আগামী দিনের নির্মাতা। তোমাদের ভাবনা, সৃজনশীলতা ও দায়িত্ববোধই ভবিষ্যৎ গড়ে তুলবে শুধু মালয়েশিয়ার নয়, সমগ্র বিশ্বের। স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যেতে গিয়ে সবসময় মনে রেখো, প্রকৃত সাফল্য শুধু নিজের জন্য অর্জনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং কীভাবে তুমি অন্যদেরও তোমার সঙ্গে উন্নতির পথে নিয়ে যাচ্ছ, সেটিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যেন সেরা উত্তরাধিকার রেখে যেতে পারি, এমন এক পৃথিবী যেখানে কাউকে পেছনে ফেলে রাখা হবে না। তিনি বলেন, ‘তোমাদের সিদ্ধান্ত, কাজ ও মূল্যবোধই নির্ধারণ করবে আমরা কোথায় যাব। তাই আমি তোমাদের অনুরোধ করছি, বড় স্বপ্ন দেখো, সাহসী চিন্তা করো এবং সে অনুযায়ী কাজ করো। ভয় পেয়ো না প্রত্যেক ব্যর্থতাই সাফল্যের পথে একটি ধাপ মাত্র। পৃথিবীকে বদলে দেওয়ার জন্য প্রয়োজন প্রকৃত নেতার, প্রয়োজন সমস্যা-সমাধানকারীর এ কথা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তোমাদের প্রত্যেকের ক্ষমতা রয়েছে অসাধারণ কিছু করার, মানুষের সেবায় ব্যবসা গড়ে তোলার, জীবন বদলে দেওয়ার মতো নতুন ধারণা সৃষ্টির অথবা এমন নীতি প্রণয়নের যা গোটা একটি সম্প্রদায়কে উন্নতির পথে নিয়ে যাবে।

ড. ইউনূস বলেন, ‘আজকের অন্যতম বড় বিপদ হলো- সম্পদ ক্রমশ কয়েকজন মানুষের হাতে কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। এর ফলে বৈষম্য ও অবিচার সৃষ্টি হয়। আমাদের যা দরকার, তা হলো একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি যেখানে সম্পদ ন্যায্যভাবে ভাগ হবে এবং প্রত্যেক মানুষ মর্যাদা ও উদ্দেশ্য নিয়ে বাঁচার সুযোগ পাবে। নিজের কর্মময় জীবনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে নোবেলজয়ী এ অধ্যাপক বলেন, ‘আমার পথচলায় অর্থনীতিবিদ হিসেবে কাজ করা থেকে শুরু করে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা, ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম চালু করা থেকে সামাজিক ব্যবসার প্রচার একটি বিশ্বাস সবসময় আমাকে দিকনির্দেশনা দিয়েছে, মানুষ প্রতিভা বা স্বপ্নের অভাবে দরিদ্র নয়, তারা দরিদ্র কারণ ব্যবস্থা তাদের ন্যায্য সুযোগ দেয়নি।

আমাদের আর্থিক ব্যবস্থা ধনীদের সেবা করার জন্য গড়ে উঠেছে, গরিবদের জন্য নয়। এই সহজ সত্যই আমাকে ভিন্ন কিছু চেষ্টা করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। আমি এমন একটি ব্যবস্থা তৈরি করেছি, যেখানে সবচেয়ে দরিদ্র মানুষও ক্ষুদ্রঋণ পেতে পারে, ব্যবসা শুরু করতে পারে এবং নিজের জীবন বদলে দিতে পারে। বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্বের কথা স্মরণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দুই দেশ সবসময়ই দৃঢ় সম্পর্ক ভাগাভাগি করেছে, যা গড়ে উঠেছে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং উন্নতির যৌথ স্বপ্নের ওপর। ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া অনেক পথ একসঙ্গে হেঁটেছে। আমরা পরস্পরের প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির পথে সহযোগিতা করেছি। মানবসম্পদ উন্নয়ন ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতিতে মালয়েশিয়া আমাদের বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে পাশে থেকেছে। বছরের পর বছর ধরে আমাদের অংশীদারিত্ব বাণিজ্য, শিক্ষা, উদ্ভাবন ও জনগণের মধ্যে সম্পর্কসহ বিস্তৃত হয়েছে নানা ক্ষেত্রে। এটি প্রমাণ করে, আমরা যখন একটি যৌথ উদ্দেশ্যে একসঙ্গে কাজ করি, তখন কত কিছু অর্জন করা সম্ভব।

মালয়েশিয়ার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও গভীর করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন এক নতুন যুগে প্রবেশ করছে। আমরা মালয়েশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা আরও গভীর করতে চাই। সম্ভাবনাময় অনেক ক্ষেত্র রয়েছে যেমন সেমিকন্ডাক্টর শিল্প, হালাল অর্থনীতি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং উদ্যোক্তা উন্নয়ন। একসঙ্গে আমরা এমন এক ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারি, যা হবে সমৃদ্ধ, উদ্ভাবনী, স্থিতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক। সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করায় মালয়েশিয়া ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান প্রধান উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, ‘আমি এটি গভীর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে গ্রহণ করছি এবং আমাদের দুই মহান জাতির মধ্যে বন্ধন আরও দৃঢ় করার জন্য নতুন করে অঙ্গীকার করছি। আমি পারস্পরিক শিক্ষা ও সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রত্যাশা করি, যাতে আমরা একসঙ্গে এমন এক বিশ্ব গড়তে পারি, যেখানে প্রত্যেক মানুষ, তার পটভূমি যাই হোক না কেন, নিজের সামর্থ্য বিকশিত করার সুযোগ পাবে। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে মালয়েশিয়ার উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী জাম্ব্রি আব্দ কাদির ও ইউকেএমণ্ডএর ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. সুফিয়ান জুসোহ উপস্থিত ছিলেন।

ইউকেএম থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি পেলেন প্রফেসর ইউনূস : নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেছে মালয়েশিয়া ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউকেএম)। গতকাল বুধবার কুয়ালালামপুরে ইউকেএম বিশ্ববিদ্যালয় অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক আনন্দঘন পরিবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলরের কাছ থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রির সনদ নেন প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রফেসর ইউনূসের সামাজিক ব্যবসা প্রসারে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। এ উপলক্ষে ইউকেএম বিশ্ববিদ্যালয় অডিটোরিয়ামের ওই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রফেসর ইউনূস। গতকাল সকালে প্রফেসর ইউনূস অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর তাঁকে স্বাগত জানান। এসময় লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয় শান্তিতে নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদকে। অনুষ্ঠানে মালয়েশিয়ার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, নীতি-নির্ধারক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং বাংলাদেশ থেকে আগত প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গীগণ উপস্থিত ছিলেন।

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের গ্র্যাজুয়েট প্লাস ভিসা দেওয়ার সম্ভাবনা : মালয়েশিয়ায় অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য দেশটির গ্র্যাজুয়েট প্লাস ভিসা চালুর সম্ভাবনা রয়েছে, যা হাজার হাজার গ্র্যাজুয়েটকে সমৃদ্ধ অর্থনীতির এই দেশে উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন কর্মসংস্থানের সুযোগ দেবে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস কুয়ালালামপুরে ইউনিভার্সিটি কেবাংসান মালয়েশিয়ায়, মালয়েশিয়ার উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী জাম্ব্রি আবদুল কাদিরের সঙ্গে বৈঠকে এ বিষয়টি উত্থাপন করেন। ‘মন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। নীতিগতভাবে তিনি মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য গ্র্যাজুয়েট প্লাস ভিসা দেওয়ার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন। তবে নীতি কার্যকর হওয়ার আগে উভয় পক্ষকে কিছু আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হবে,’ বলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।

বৈঠকে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন। বর্তমানে প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। অন্য দেশের শিক্ষার্থীরা যেখানে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে প্রবেশের সুযোগ পায়, সেখানে এতদিন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিল। এর আগে গতকাল বুধবার, মালয়েশিয়ার শিক্ষা মন্ত্রী ফাদলিনা বিনতি সিদেক কুয়ালালামপুরের একটি হোটেলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তারা মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি বাড়ানোসহ শিক্ষায় সহযোগিতা জোরদারের উপায় নিয়ে আলোচনা করেন।

অধ্যাপক ইউনূস শিক্ষার্থী ও শিক্ষক বিনিময় কর্মসূচি সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। ঢাকা মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষ ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বাংলাদেশের ডিগ্রির আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতিও চেয়েছে। মালয়েশিয়ার মন্ত্রী অধ্যাপক ইউনূসের দীর্ঘদিনের ‘থ্রি জিরো’ প্রচারণায় গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেন, যার লক্ষ্য বিশ্ব থেকে দারিদ্র্য, বেকারত্ব এবং কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনা।

‘আপনি যদি দারিদ্র্যহীন পৃথিবী কল্পনা না করেন, তবে তা হবে না,’ মন্তব্য করেন অধ্যাপক ইউনূস। তিনি বিশ্বনেতাদের প্রতি আত্মবিধ্বংসী নয় এমন একটি সভ্যতা গড়ে তোলার আহ্বান জানান। অধ্যাপক ইউনূস মালয়েশিয়ার শিক্ষা মন্ত্রীকে ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানান, যাতে দুই দেশের মধ্যে শিক্ষা সহযোগিতা আরও জোরদার হয়। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন- জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী এবং এসডিজি বিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে মালয়েশিয়ার দূতের সঙ্গে ড. খলিলুর রহমানের আলোচনা : জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও রোহিঙ্গা সমস্যা বিষয়ক হাই-রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান বুধবার পুত্রাজায়ায় মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আসিয়ান চেয়ারের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত ওসমান হাশিমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এ সময় রাষ্ট্রদূত হাশিম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতি বাংলাদেশের অব্যাহত উদারতার জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। দুই কর্মকর্তা মিয়ানমারের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন এবং রাখাইন রাজ্যে মানবিক অবস্থার অবনতি ও বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক আর্থিক সহায়তা কমে যাওয়ার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তারা দ্রুত ও টেকসই সমাধানের লক্ষ্যে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার বিষয়ে একমত হন। ড. খলিলুর রহমান রোহিঙ্গা ইস্যুতে আগামী ২৫ আগস্ট কক্সবাজারে অনুষ্ঠিতব্য অংশীজন সংলাপ সম্পর্কে মালয়েশিয়ার বিশেষ দূতকে অবহিত করেন। এছাড়া তারা আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদর দফতরে অনুষ্ঠিতব্য রোহিঙ্গা বিষয়ক জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক সম্মেলন নিয়ে মতবিনিময় করেন এবং সম্মেলনটি সংকট সমাধান ও বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য পর্যাপ্ত সহায়তা নিশ্চিত করতে একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়ক হবে বলে আস্থা প্রকাশ করেন।

মালয়েশিয়া সফর শেষে দেশে ফিরলেন প্রধান উপদেষ্টা : প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফর শেষে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। গতকাল বুধবার মালয়েশিয়ার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটটি কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের আমন্ত্রণে প্রধান উপদেষ্টা গত সোমবার কুয়ালালামপুরে আসেন। তিন দিনের এই সফর চলাকালে প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকসহ উচ্চ পর্যায়ের একাধিক বৈঠকে অংশ নেন প্রফেসর ইউনূস।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *