জনপ্রত্যাশা পূরণে সচেষ্ট হোন

Google Alert – ইউনূস

ইসির নির্বাচনি প্রস্তুতি

দেশের রাজনীতিতে বেশ কিছুদিন ধরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে জাতীয় নির্বাচন। সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ ঘোষণা করা হয়নি বলে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে যে সংশয় তৈরি হয়েছিল, তা এখনও কাটেনি। কিন্তু গত মঙ্গলবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে যে সংশয় ছিল, তা দূর করে দিয়েছেন। সাংবাদিকদের তিনি জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রস্তুতি চলছে ‘ফুল গিয়ারে’ (পুরোদমে)। নির্বাচনের তারিখ ও শিডিউল যথাসময়ে জানানো হবে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করছে, সিইসি নাসির উদ্দিন এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন মহলে যে আলোচনা-গুঞ্জন-সংশয়-সন্দেহ ছিল, সেসব অনেকাংশে দূর হয়েছে।

নির্বাচন নিয়ে এই সংশয় প্রথমে দূর হয় গত ১৩ জুন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের লন্ডন বৈঠকের মধ্য দিয়ে। প্রধান উপদেষ্টা তখন বলেছিলেন, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালের রমজান শুরুর আগের সপ্তাহেও নির্বাচনের আয়োজন করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার এবং বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন হবে। প্রধান উপদেষ্টার এই কথায় তখন জনমনে নির্বাচন নিয়ে স্বস্তি ফেরে।

তবে এর পরই কোনো কোনো মহলকে নির্বাচন নিয়ে নেতিবাচক তৎপরতায় যুক্ত হতে দেখা গেছে। এ রকম পরিস্থিতিতে লন্ডন বৈঠকের ১১ দিন পর গত ২৬ জুন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন। এরপর গুঞ্জন ওঠে, এবার ইসি ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে পারে। কিন্তু সেটা হয়নি। এরই মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা এবং সিইসির মধ্যেকার ‘সৌজন্য’ সাক্ষাতের পাঁচ দিনের মাথায় সিইসি জানিয়ে দিলেন, নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যে নির্বাচন কমিশন জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সংসদ নির্বাচনের প্রশ্নে নির্বাচন কমিশন এবং অন্তর্বর্তী সরকার একই তরঙ্গে রয়েছে। যথাসময়ে নির্বাচনের তারিখ ও শিডিউল জানানো হবে। কমিশনের মনোযোগ এখন জাতীয় নির্বাচনের দিকে। প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা অনুযায়ী তারা স্বাধীন, নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন জাতিকে উপহার দিতে চান।

প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কথা থেকে বোঝা যায়, নির্বাচন কমিশন ফেব্রুয়ারির সম্ভাব্য নির্বাচন নিয়ে পুরোপুরি প্রস্তুত। নির্বাচন উপলক্ষে ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন এবং ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০২৫’ গেজেট আকারেও তারা প্রকাশ করেছেন। এই প্রস্তুতি শুধু ইসির নয়, রাজনৈতিক দলগুলোও নিচ্ছে বলে খবর প্রকাশিত হচ্ছে। কয়েকটি দল এরইমধ্যে প্রার্থী বাছাই ও ঘোষণা করে নির্বাচনের মাঠে নেমে পড়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ফেব্রুয়ারিতেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে- এমনটা ধরে নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়েছেন। এমনকি সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সমন্বয়ে তারা মহড়াও দেবে।

এসব নানামুখী তৎপরতা থেকে স্পষ্ট, দেশ নির্বাচনি সড়কে উঠে পড়েছে। গন্তব্য ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হচ্ছে। আমরাও মনে করি, নির্বাচন নিয়ে সংশয় দূর হওয়া প্রয়োজন। দেশ দীর্ঘদিন ধরে নানা সংকটের মধ্য দিয়ে চলেছে, যত দ্রুত নির্বাচন হবে, তত দ্রুত এই সংকট থেকে মানুষের মুক্তি মিলবে। সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচনই যেকোনো সরকারকে দেশ শাসনের বৈধতা দেয়। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসও জাতির কাছে এ বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা এখন যে অন্তর্বর্তী অবস্থার মধ্য দিয়ে চলেছি, তাও চিরস্থায়ী নয়। নির্বাচনের মাধ্যমেই জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে এর অবসান হওয়া জরুরি। আশা করব, দ্রুত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকারের সহায়তায় নির্বাচন কমিশন এই জনপ্রত্যাশা পূরণে সচেষ্ট থাকবে।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *