জনস্বাস্থ্য নিয়ে সিএপিএইচআরএর উদ্বেগ

RisingBD – Home

বাংলাদেশে ভেপিং ডিভাইসসহ নিরাপদ নিকোটিন পণ্য নিষিদ্ধ করতে আইন সংশোধনের প্রস্তাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কোয়ালিশন অব এশিয়া প্যাসিফিক টোব্যাকো হার্ম রিডাকশন অ্যাডভোকেটস (সিএপিএইচআরএ)। বিদেশি গোষ্ঠীর চাপে অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই জনস্বাস্থ্য উপেক্ষা করে এমন প্রস্তাব করা হয়েছে বলে মনে করছে সংগঠনটি।

সম্প্রতি সিএপিএইচআরএর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ সংশোধনের প্রস্তাব করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এতে ভেপিং ডিভাইস ও ধূমপানের ওরাল অল্টারনেটিভসহ সব ধরনের নিরাপদ নিকোটিন পণ্যের (এসএনপি) ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। উদ্বেগজনক বিষয় হচ্ছে, বিদেশি গোষ্ঠীর প্রভাবে অংশীজনের সঙ্গে কোনো আলোচনা করা ছাড়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় এ প্রস্তাবটি করা হয়েছে। এতে নীতি নির্ধারণ ও আইনি প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে।

এতে বলা হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোলের (এফসিটিসি) ৫.৩ নম্বর ধারা দেখিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, ভোক্তা এবং ধূমপানের ক্ষতি কমানোর পক্ষের লোকদের নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করছে। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, এমন পদক্ষেপের মাধ্যমে ভিন্নমত রোধ ও বৈজ্ঞানিক বিতর্ক বন্ধ করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। এফসিটিসির ৫.৩ ধারার অপব্যবহারও করা হচ্ছে এতে।

সংগঠনটি বলেছে, নিরাপদ তামাক পণ্য নিষিদ্ধের প্রস্তাবের পেছনে বিদেশি একটি গোষ্ঠীর প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রোপিস এবং তাদের যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অনুদান গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো-ফ্রি কিডস (সিটিএফকে) নীতিনির্ধারক মহলকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০০৮ সাল থেকে ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রোপিস বিশ্বজুড়ে নিকোটিনবিরোধী নীতি প্রচারে সিটিএফকে ২৩২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি অনুদান দিয়েছে। এই তহবিলের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে এনজিওকে সহায়তা করা হয়, সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এমনকি মন্ত্রণালয়গুলোতে উপদেষ্টাও বসিয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে তাদের নিয়ে একটি প্রভাবশালী নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠে, যারা জাতীয় সার্বভৌমত্বকে পাশ কাটিয়ে নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব বিস্তার করে।

সিএপিএইচআরএ জানায়, ঢাকায় ব্লুমবার্গের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিসের একটি কার্যালয় রয়েছে। সেখানে বেশ কয়েকজন সাবেক সরকারি কর্মকর্তা কাজ করেন। অন্যদিকে সিটিএফকে এবং তাদের সহযোগী বিভিন্ন সংস্থাকে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের (এনটিসিসি) অফিসিয়াল পার্টনার হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বিদেশি অর্থায়নে পরিচালিত গোষ্ঠীগুলো নীতিনির্ধারণে সরাসরি প্রভাব বিস্তার করতে পারছে। এতে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বা জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত বাস্তবতা উপেক্ষিত হচ্ছে।

সিএপিএইচআরএর এক্সিকিউটিভ কোঅর্ডিনেটর ন্যান্সি লুকাস বলেন, “এটা মূলত তামাক নিয়ন্ত্রণ নয়, বরং নীতিনির্ধারণের বৈদেশিক আউটসোর্সিং। এতে বাংলাদেশ ঝুঁকির মুখে পড়ছে। কারণ এর মাধ্যমে বিদেশি অর্থায়নে পরিচালিত এনজিওগুলো দেশের নিজস্ব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে উপেক্ষা করে মানুষকে ধূমপানের ক্ষতি হ্রাসকারী নিরাপদ পণ্যের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।”

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিরাপদ নিকোটিন পণ্য সম্পূর্ণ নিষিদ্ধের প্রস্তাব দিলেও এশিয়ার অনেক দেশে উল্টোটি ঘটছে। সম্প্রতি পাকিস্তান ও ফিলিপাইনেও বিদেশি গোষ্ঠীর প্রভাবে এ ধরনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু জনস্বার্থবিরোধী এমন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে সেখানকার কর্তৃপক্ষ। বৈজ্ঞানিক প্রমাণভিত্তিক জনস্বাস্থ্য নীতিকেই অগ্রাধিকার দিয়েছে তারা। এমনকি পাকিস্তানে আর্থিক অনিয়ম ও আইন না মানার অভিযোগে ব্লুমবার্গের অর্থায়নে পরিচালিত বেসরকারি সংস্থা ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো-ফ্রি কিডস (সিটিএফকে) এবং ভাইটাল স্ট্র্যাটেজির কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে দেশটির সরকার।

নিরাপদ নিকোটিন পণ্যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে নানা ধরনের ঝুঁকি তৈরি হয় বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, ভারত ও অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি দেশে এসব পণ্যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর সেখানে অবৈধ বাজার ও অনিয়ন্ত্রিত পণ্যের বিস্তার দেখা যাচ্ছে। এতে জনস্বাস্থ্যের উন্নতির চেয়ে ক্ষতিই বেশি হচ্ছে।

সংগঠনটি বলেছে, বিশ্বে তামাকজনিত অসুস্থতার হার যেসব দেশে বেশি তার অন্যতম বাংলাদেশ। তাই একটি নিয়ন্ত্রিত ক্ষতি হ্রাস কৌশলের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাপকভাবে উপকৃত হতে পারে। বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, নিরাপদ নিকোটিন পণ্য (এসএনপি) ধূমপায়ীদের ধূমপান ছাড়তে সাহায্য করে এবং ক্ষতির ঝুঁকি অনেক কমিয়ে দেয়। অন্যদিকে এসব পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ ধূমপানের ক্ষতি হৃাসে কোনো ভূমিকা রাখবে না। বরং ধূমপানের ক্ষতি কমানোর ক্ষেত্রে আরেক ধাপ পিছিয়ে যাবে দেশ।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *