Google Alert – BD Army

বাংলাদেশ কেবল একটি ভৌগোলিক সীমানার নাম নয়, এটি এক রক্তস্নাত ইতিহাস, গৌরবময় পরিচয়ের প্রতীক। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা শুধু কাগজে লেখা কোনো দলিল নয়- এটি আমাদের আত্মমর্যাদা, আমাদের জাতীয় চেতনা এবং সংগ্রামী ঐতিহ্য।

কিন্তু আজ ২০২৫ সালে এসে আমরা এক গভীর সঙ্কটের মুখোমুখি। স্বাধীনতাবিরোধী চক্র, দেশবিরোধী দালাল এবং পরাশক্তির এজেন্টরা নানা মুখোশ পরে বিভিন্ন রূপে, জাতির ভিত নাড়িয়ে দিতে উঠেপড়ে লেগেছে। এদের কেউ মিডিয়ায়, কেউ প্রশাসনে, কেউ তথাকথিত সুশীল সমাজের লেবাসে, কেউ আবার ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে কিংবা মুক্তিযুদ্ধের নাম ভাঙিয়ে দেশকে পরাধীনতার পথে ঠেলে দিতে চাচ্ছে।

ভারতের আধিপত্যবাদ ও দেশীয় দালালদের ষড়যন্ত্র এখন বাংলাদেশের নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব ও ভবিষ্যতের জন্য এক গভীর হুমকিতে পরিণত হয়েছে। এ কেবল একটি কূটনৈতিক সমস্যা নয়; বরং এটি একটি সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও মনস্তাত্তি¡ক আগ্রাসন- যার লক্ষ্য বাংলাদেশকে একটি নির্ভরশীল, দুর্বল ও নিয়ন্ত্রণযোগ্য রাষ্ট্রে পরিণত করা।

ভারতের শাসকগোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ এশিয়ায় আধিপত্যবাদী নীতি অনুসরণ করছে। বাংলাদেশ হচ্ছে তাদের এই নীতির প্রথম শিকার।

পানি চুক্তি

তিস্তা চুক্তি বছরের পর বছর ঝুলে আছে, অথচ ভারত অভ্যন্তরীণ নদীগুলোর গতি নিয়ন্ত্রণ করে একতরফাভাবে বাংলাদেশের কৃষি ও জীবিকা বিপর্যস্ত করছে। ফারাক্কা, গজলডোবা, টিপাইমুখ প্রতিটি প্রকল্পে বাংলাদেশ বঞ্চিত, ক্ষতিগ্রস্ত।

সীমান্ত হত্যা

প্রতি বছর ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ বাংলাদেশীদের হত্যা করছে। বিশ্বে এমন আর কোনো প্রতিবেশী নেই যারা নিয়মিতভাবে সীমান্তে এত হত্যা চালিয়েও দায়মুক্তি পায়।

বাণিজ্য বৈষম্য

বাংলাদেশী পণ্য ভারতে প্রবেশে নানা শুল্ক ও অশুল্ক বাধা থাকলেও ভারতীয় পণ্য বাংলাদেশের বাজারে সহজে প্রবেশ করে।

রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ

২০০৮ সাল থেকে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা সরাসরি বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়া, রাজনৈতিক প্রকৌশল এবং ক্ষমতার ভারসাম্য নির্ধারণে ভূমিকা রেখেছে। মিডিয়া পরিচালনা, এনজিও ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মতামত গঠন- এসবই ভারতের নিয়ন্ত্রণের অংশ।

দেশীয় দালালদের ভূমিকা

এই আগ্রাসী নীতি বাস্তবায়নে ভারতকে সাহায্য করেছে বাংলাদেশের ভেতর থেকেই কিছু মুখোশধারী দালাল ও বিশ্বাসঘাতক। এরা বিভিন্ন রূপে সক্রিয়।

মিডিয়া ও বুদ্ধিজীবী শ্রেণী

কিছু কথিত বিশ্লেষক, কলামিস্ট ও টকশো বক্তা নিরপেক্ষ মতামতের ছদ্মাবরণে ভারতের স্বার্থের পক্ষে জনমত প্রভাবিত করছে। ‘ভারতের সাথে বন্ধুত্ব ছাড়া উপায় নেই’, ‘আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য ভারত দরকার’-এমন বক্তব্যের মাধ্যমে জাতীয় আত্মবিশ্বাস ধ্বংস করছে।

এনজিও ও সুশীলসমাজ

ভারতের প্রভাবাধীন কিছু এনজিও মানবাধিকার, উন্নয়ন বা নারী অধিকার ইস্যুর নামে দেশের ভেতরে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে হস্তক্ষেপ করছে। এসব প্রতিষ্ঠান বিদেশী ফান্ডের মাধ্যমে দেশে আদর্শিক উপনিবেশ গড়ে তুলছে।

ইতিহাস বিকৃতি ও মনস্তাত্তি¡ক যুদ্ধ

পাঠ্যপুস্তক, গণমাধ্যম ও সংস্কৃতির মাধ্যমে বাংলাদেশকে ভারতের অনুসারী রাষ্ট্র হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। বাংলাদেশের স্বাধীন পরিচয়, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, আদর্শিক মূল্যবোধের ওপর হামলা চালিয়ে জাতিগত আত্মপরিচয় মুছে ফেলার অপচেষ্টা চলছে।

এই দালালচক্রের মূল উদ্দেশ্য সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার মনোবল নষ্ট করে রাষ্ট্রীয় কাঠামো দুর্বল করা। গণতান্ত্রিক ও মুক্তচিন্তার পরিবর্তে অনুগত, দমনমূলক প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করে জনগণকে নিয়ন্ত্রণে রাখা। পররাষ্ট্রনীতি, প্রতিরক্ষা ও অর্থনীতিকে ভারতের স্বার্থের অনুকূলে পরিচালিত করা।

এভাবে আবারো স্বাধীনতা হারানোর ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে জনগণকে সচেতন করা জরুরি। মিডিয়া ও একাডেমিয়ায় ভারতের দালালদের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে, নিরাপত্তাবাহিনীর মনোবল বৃদ্ধি ও পেশাদারিত্ব রক্ষায় জাতীয় ঐক্য গঠন করতে হবে, কূটনৈতিকভাবে ভারতকে কঠোর বার্তা দিতে হবে যে, বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র, কারো উপনিবেশ নয়।

ইতিহাস সাক্ষী, যারা ভারতের চক্রান্তে জাতিকে বিক্রি করেছে, তারা কখনো টিকতে পারেনি। এখনই সময়, জাতি হিসেবে আমাদের জেগে ওঠার, আত্মমর্যাদা রক্ষার এবং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি স্বাধীন ও সম্মানিত বাংলাদেশ গড়ে তোলার।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও জাতীয় নিরাপত্তা

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতির সম্মান, গৌরব ও অস্তিত্ব রক্ষার অন্যতম প্রধান স্তম্ভ। যারা আধিপত্যমুক্ত দেশের জন্য জীবন দিয়েছে, তাদের উত্তরাধিকার রক্ষা করাই এ বাহিনীর নৈতিক দায়িত্ব। আর সে দায়িত্ব পালনে অঙ্গীকারাবদ্ধ থাকলেই সেনাবাহিনীর প্রতি নাগরিক সমাজের আস্থা অটুট থাকবে। অতএব, সেনাবাহিনী কোনো দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের হাতিয়ার হতে পারে না।

সেনাবাহিনীর মূল দায়িত্ব

দেশের সার্বভৌম সীমান্ত রক্ষা করা। বিদেশী হুমকি ও আগ্রাসন প্রতিহত করা। অভ্যন্তরীণ সঙ্কটকালীন সময়ে সরকারকে সহায়তা প্রদান করা। দুর্যোগ ও বিপর্যয়ের মুহূর্তে জনগণের পাশে দাঁড়ানো। জাতিসঙ্ঘ মিশনে অংশগ্রহণ করে আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখা। এই সমস্ত কার্যক্রমে সেনাবাহিনীর নিষ্ঠা, পেশাদারিত্ব ও আত্মত্যাগের উদাহরণ বহুবার প্রমাণিত হয়েছে। তবে দুঃখজনকভাবে, কিছু রাজনৈতিক গোষ্ঠী বা চক্রান্তকারী মহল সময় সময়ে সেনাবাহিনীর ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করেছে মিথ্যা প্রচার, বিভ্রান্তিকর তথ্য ও অযৌক্তিক সমালোচনার মাধ্যমে। এ ধরনের আচরণ কেবল সেনাবাহিনী নয়, গোটা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকেই দুর্বল করে।

জাতির শত্রুরা সবসময় জানে একটি শক্তিশালী, ঐক্যবদ্ধ ও মর্যাদাসম্পন্ন সেনাবাহিনী থাকলে বাংলাদেশকে কখনোই পরাজিত করা যাবে না। তাই তাদের প্রথম লক্ষ্য সেনাবাহিনীর উপর আঘাত হানা, মনোবল ভাঙা, বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা, বাহিনীর মধ্যে বিভেদ সঞ্চার করা। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ এখন অনেক সচেতন। সেনাবাহিনীকে সম্পূর্ণ রাজনীতিমুক্ত রাখতে হবে।

সাম্প্রতিক সময় লক্ষ করা যাচ্ছে, একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে কিছু মিডিয়া হাউজ, ইউটিউব চ্যানেল, কথিত বক্তা ও কথিত বিশ্লেষক সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ধারাবাহিক অপপ্রচার চালাচ্ছে। কিছু বিভ্রান্তিকর ও বিকৃত তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। এটি সেনাবাহিনীর প্রতি জনগণের আস্থা দুর্বল করার চেষ্টা। এতে শেষ পর্যন্ত ভারত ও দেশবিরোধী আওয়ামী গোষ্ঠী লাভবান হবে। এই অপতৎপরতায় জড়িত ব্যক্তিরা হয়তো নিজেরাও জানে না তারা দেশের শত্রুদের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।

একটি বিষয়ে আমাদের সবাইকে সজাগ থাকতে হবে এই বাহিনী কারো ব্যক্তিগত নয়, এটি জাতির। এখানে যারা সেবা দেয়, তারা একদিন অবসর নেন, চলে যান, কিন্তু বাহিনী থাকে জাতির অংশ হয়ে। এখন সময় সতর্ক হওয়ার, দেশপ্রেমে উদ্দীপ্ত হওয়ার। জনগণেরও উচিত সেনাবাহিনীর পাশে দাঁড়ানো।

বাংলাদেশের জনগণ জেগে উঠেছে

দেশের মানুষ দেশপ্রেমিক, সাহসী ও আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ। তারা কারো গোলামি করে না; বরং দেশের জন্য জীবন দিতেও প্রস্তুত। আজ আমাদের সামনে দু’টি পথ : ১. স্বনির্ভর, স্বাধীন ও আত্মমর্যাদা নিয়ে বাঁচার পথ; ২. দালালি, বিদেশী গোলামি ও পরাধীনতার কলঙ্কিত পথ।

গত দেড় দশকের বেশি সময় ধরে দেশের অভ্যন্তরে ও বাইরের নানা ষড়যন্ত্র, অপশাসন, বিশ্বাসঘাতকতা এবং দুর্বল রাষ্ট্র পরিচালনার কারণে জাতি আজ ক্লান্ত, ক্ষুব্ধ ও আশাহীন অবস্থার কাছাকাছি। কিন্তু এখনই সময় নতুনভাবে পথ নির্ধারণ করার, এখনই সময় জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে একটি সাহসী ও সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার।

ভারতের দালালদের কাঠগড়ায় তুলতে হবে

যারা ভারতের হয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করেছে, নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করেছে, সীমান্ত হত্যা ও পানিচুক্তি নিয়ে নীরব থেকেছে, এমন ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে হবে এবং রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় বিচারের আওতায় আনতে হবে। এ দেশ কারো গোলামির জন্য নয়।

‘বাংলাদেশ ফার্স্ট’ নীতিকে জাতীয় দর্শন হিসেবে গ্রহণ করতে হবে : রাজনীতি, অর্থনীতি, কূটনীতি সব কিছুতেই ‘সবার আগে বাংলাদেশ’-এই নীতি অনুসরণ করতে হবে। দল, গোষ্ঠী, মতবাদ, বিদেশী মিত্র- সব কিছুর ঊর্ধ্বে রাখতে হবে জাতীয় স্বার্থকে। বাংলাদেশ কারো করুণা বা চক্রান্তে গড়া দেশ নয়, এটি গড়া হয়েছে রক্ত দিয়ে, বিশ্বাস দিয়ে, সাহস দিয়ে। তাই এর রক্ষা ও পুনর্গঠনের দায়িত্বও আমাদেরই নিতে হবে। এই যাত্রা কঠিন, তবে সম্মানের। শত্রু যত শক্তিশালীই হোক, ঐক্যবদ্ধ জাতির বিরুদ্ধে তাদের কোনো ষড়যন্ত্রই সফল হবে না।

বাংলাদেশের জনগণ এখন চোখে চোখ রেখে কথা বলে, আত্মমর্যাদার পতাকা উঁচু করে ধরে। বাংলাদেশ থাকবে মাথা উঁচু করে স্বাধীন, মর্যাদাসম্পন্ন ও অপ্রতিরোধ্য। যদি কেউ ষড়যন্ত্র করে, আমরা রুখে দাঁড়াব। আমরা হারব না, বাংলাদেশ হারবে না।

লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *