জুড়ীর সাহিত্য সাংবাদিকতা : প্রাচীনকাল থেকে বিজ্ঞান যুগ

Google Alert – পার্বত্য চট্টগ্রাম

পূর্ব ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে নেমে আাসা জুড়ী নদীকে কেন্দ্র করে জুড়ী জনপদ গঠিত হয়েছে। জুড়ীর দু’পাড়ে বিভক্ত জনপদ স্মরণাতীত কালে কুলাউড়া ও বড়লেখা থানাধীন ছিল। এখন জুড়ী মৌলভীবাজার জেলার একটি উপজেলা। জুড়ীর প্রাচীন ইতিহাস খুবই সমৃদ্ধ। সপ্তম শতকে জুড়ী অঞ্চলের সাগরনালে চন্দ্রপুর নামে একটি রাজ্য ছিল। এখানে হ্রদের মতো নাল ছিল। সেখান থেকে সাগরনাল নামকরণ হয়েছো। চন্দ্রপুরকে কেন্দ্র করে একটি প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়ও ছিল। হ্রদকে সাগরনাল বলা হতো। জুড়ী উপজেলা অঞ্চল ছাড়াও কুলাউড়া ও বড়লেখা উপজেলার কিয়দাংশ নিয়ে গঠিত রাজ্যের সীমানা উত্তর ত্রিপুরার ধর্মনগর পর্যন্ত ছিল বিস্তৃত। একাদশ শতকে সেন রাজাদের হাতে বিক্রমপুরে নির্যাতিত বৌদ্ধরা বর্তমান পাথারিয়া,সাগরনাল ও আসামের পাহাড়ে বসবাস শুরু করেন। বর্তমান জুড়ী উপজেলার সাগরনালের চন্দ্রপুর রাজ্যের সমৃদ্ধির পথ ধরে এই অঞ্চল তখন শিল্প সাহিত্যের ক্ষেত্র হয়ে উঠে। ফলে বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন চর্যাপদ বৌদ্ধ সহজিয়ারা এখানেই লেখা শুরু করে। তাই বর্তমান জুড়ী – কুলাউড়া ও বড়লেখা বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির আদিভূমি। সে ইতিহাস জানতে আমাদের আরেকটু পিছনে ঘুরে আসতে হবে।

সেনদের হাতে কৌলিন্য প্রথা চালু হলে হিন্দুসমাজের জাতপাত সমস্যা ও বৌদ্ধ নির্যাতন চরমে পৌঁছে যায়। ফলে বিক্রমপুর,ওয়ারি বটেশ্বর,দিনাজপুর ও কুমিল্লার ময়নামতি থেকে কিছু সংখ্যক বৌদ্ধ পার্বত্য চট্টগ্রামে আর বাকিরা সিলেটের পাথারিয়া পাহাড় ও জুড়ীর সাগরনালের পাহাড় এবং আসামের পাহাড়ে গিয়ে বসবাস শুরু শুরু করে। তাদের হাতেই তখন এতদঞ্চলে বৌদ্ধ ধর্মের বিস্তার ঘটে। তারা কৌশলী হয় এবং বিহার নির্মাণ না করে পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নেয়। এসব জায়গায় নির্যাতন বেড়ে গেলে শেষপর্যন্ত তারা তিব্বত ও নেপালে গিয়ে আশ্রয় নেয়। সিলেট ও আসাম অঞ্চলে থাকাকালীন তাদের চর্যাপদ লেখার কথা গবেষক মুহাম্মদ আসাদ্দর আলী তাঁর একাধিক গ্রন্থে জোর দিয়ে আলোচনা করেছেন। নালন্দার সমসাময়িক চন্দরপুর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যূসিত সাগরনালের চন্দ্রপুরেও কিছু অংশের বসবাস ছিল। তাই চর্যাপদে সিলেটের মাটি ও মানুষের সন্ধান মিলে। চর্যাচর্যগীতিকার জন্মকাল তাই এ শতাব্দীকালের মধ্যে।নেপালের রাজদরবার থেকে চর্যাপদ উদ্ধার হয় এবং অতিরিক্ত দু’টি পদের সন্ধান মিলে তিব্বতে।

চর্যাপদ বাংলাসাহিত্যের আদি নিদর্শন। তার আগে পরে ছিল দেব নাগরির আধিপত্য। মানে সংস্কৃত ভাষা। সিলেটে প্রাচীন সংস্কৃত কলেজ তারই ইতিহাস বলে। একই সঙ্গে সাগরনালে চন্দ্রগুপ্ত রাজার হাতে নির্মিত চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ধ্বংসাবশেষ আবিস্কার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। করোনার আগে শুরু করে এ কাজটি করোনার কারণে পরে স্থগিত রাখতে হয়। এ কাজটি ভবিষ্যতে সম্পন্ন হলে সিলেটের ইতিহাস বিশেষ করে মৌলভীবাজারের প্রাচীনত্ব আরো সমৃদ্ধ হবে। তাতে জুড়ী অঞ্চলের স্বমহিমা আমরা আরো জানতে পারবো। কুলাউড়ার বরমচালে প্রাপ্ত শিলালিপিতে এরই মধ্যে মৌলভীবাজার জেলার বিশেষত্ব উঠে এসেছে। বরমচালের তাম্রলিপিতে তা বিস্তারিত রয়েছে।

জুড়ী একটি প্রাচীন জনপদ। বরমচালে প্রাপ্ত তাম্রলিপিতে জুড়ী গাঙের কথা পাওয়া যায়। জুড়ী গাঙকে কেন্দ্র করে জুড়ী জনপদ গঠিত। প্রাচীন কাল থেকে শুরু করে সিলেটী নাগরীর মরমী কাল পর্যন্ত জুড়ী অঞ্চলে সাহিত্যচর্চার ইতিহাস পাওয়া যায়। সিলেট নাগরী সিলেট অঞ্চলের আদি বর্ণমায় বাংলা সাহিত্য। সিলেট নাগরী লিপি বলে বাংলা সাহিত্যে তার পরিচয়। শতবছর আগে তার বিলুপ্তি ঘটলেও সম্প্রতি তার উত্থান ঘটেছে। এ লিপির গবেষক ও বর্ণমালার পুস্তক রচনা এবং প্রকাশকারী বন্ধুবর মোস্তফা সেলিম বাংলা মরমি গানের আদি পাণ্ডুলিপি গোলাম হুসনের গান (১৭৭৪) সম্পাদনা করেন ২০২১ সালে। যা বাংলা সাহিত্যে নতুন বার্তা দেয়। তাঁর লেখা থেকেই আমরা প্রথম জানতে পারি রচনার পর ২৪৭ বছর পর্যন্ত তা অপ্রকাশিত ছিল। গবেষকদের কাজ এটাই। তাঁরা অজানা ও অচেনাকে চিনতে জাতিকে তথ্য দিবেন।

তাঁর মতে, সিলেটি নাগরীলিপিতে লেখা এ পাণ্ডুলিপি মরমি গানের ইতিহাসের এক স্বর্ণপালক। আমরাও একমত। বাংলায় মরমীবাদের জন্ম এই সিলেট নাগরী সাহিত্যের মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলে। মহাত্মা গোলাম হুসনের জন্ম মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার লস্করপুর গ্রামে। জুড়ী জনপদের গোয়ালবাড়ী, ফুলতলা, সাগরনাল ও জায়ফরনগর ইউনিয়ন আগে কুলাউড়া উপজেলা এবং তারও পূর্বে ছিল লংলা পরগনাধিন। আর সে জুড়ী অংশেই অনেক মনীষীর জন্ম।

যেমন জুড়ীর গর্ব ইতিহাসবিদ ব্রজলাল বিদ্যাবিনোদ। ‘সিলেটের কথ্যভাষা’; নামে দূর্লভ একখানি গ্রন্থ জুড়ীর এই কৃতী সন্তান রচনা করে রেখে গেছেন। আগেই বলেছি জুড়ী উপজেলার সাগরনালে ছিল চন্দ্রপুর রাজ্য। এ রাজ্যের চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয় এবং পুরো এলাকার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিষ্কার করতে আবারও জোর প্রচেষ্টা চালুর দাবি রাখছি। ব্রজলাল বিদ্যাবিনোদন এ চন্দ্রদ্পুরের কোথায় জন্ম নিয়েছেন তা এখন আর খোঁজে পাওয়া যাবে না হয়তো!

এ ধারাবাহিকতায় সাহিত্য চর্চার প্রাচীন ভূমি জুড়ী। জুড়ী এখন প্রশাসনিক উপজেলা। জুড়ী উপজেলার গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের কচুরগুল গ্রামে মুহাম্মদ আশিদ আলী ছিলেন সিলেটী নাগরী লিপির পুঁথিকার। তিনি লিখেছেন সিলেট নাগরী লিপিতে ‘মহিউস ছুন্নত আলামতে কিয়ামত’ পুঁথি। ভনিতার মাধ্যমে নিজের পরিচয় দিয়েছেন এভাবে -‘কুলাউড়া থানা পং পাথারিয়া কুল/হালতে জমানা দেখি হই ব্যাকুল/দিলকুষা চা বাগানের দক্ষিণে/কচুরগুল মৌজা জানো মুমিনে’।

আমির সাধু লোকসাহিত্যিক ও ভাষা সংগ্রামী। তাঁর জন্ম জায়ফরনগর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর মৌজার ডরির বন্দ গ্রামে। গ্রামটি এখন মৌজার নামে গোবিন্দপুর। তার পরিচয় জাতীয়ভাবে আলোচিত হয়। তাঁর রচিত গান মরমী সাহিত্যের সম্পদ। আমির সাধুর ছোটো ভাই ফারসি গ্রন্থকার মৌলভী ইদ্রিস আলী লিখেছেন ‘বুনিয়াদ ই খাকী’ নামে হজরত শাহ গরীব খাকীর আত্ম পরিচয়মূলক গ্রন্থ। যা মূলতঃ অধ্যাত্মবাদ বা মারফতির গ্রন্থ।

আমি ( হাসনাইন সাজ্জাদী) লোকসাহিত্যিক আমির সাধুর পৌত্র এবং বিজ্ঞান কবিতার প্রবর্তক। আমি বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞান কবিতার আন্দোলনকে ছড়িয়ে দিয়েছি। আমার লেখা প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রন্থ বাংলাসাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। বিশেষ করে ‘বিজ্ঞানবাদ’,’কবিতাবিজ্ঞান, ‘বিজ্ঞানকাব্যতত্ত্ব ও সাবলীল ছন্দ’,’বিজ্ঞানধর্ম মননে অন্বেষনে’ প্রভৃতি বিশ্বসাহিত্যকে বিজ্ঞানমনস্ক করেছে।

১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দের ৭ আগস্ট প্রথম ও ১৪ আগস্ট আমার লেখা দ্বিতীয় ছড়া সাপ্তাহিক সিলেট সমাচারের ছোটোদের পাতা বিভাগে ছাপা হয়। জুড়ী থেকে সাহিত্যপত্র পূর্বাপর ১৯৭৭ -১৯৮৪ পর্যন্ত আমার সম্পাদনায় অনিয়মিত ভাবে প্রকাশিত হতো। যা কুলাউড়ার লংলা প্রেস থেকে ছাপা হতো। শেষের দিকে কিছুদিন আমি মৌলভীবাজার থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক মুক্তিকথার কার্যকরী সম্পাদক হিসেবে কাজ করি। এ-সময়ও পূর্বাপর কয়েক সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে।

১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দে আমি ঢাকা চলে যাই এবং ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা থেকে সাহিত্যপত্র ‘বিস্ফোরণ’ প্রকাশ শুরু করি। ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দে আমার প্রথম কবিতাগ্রন্থ ‘এখানে একদিন’ ঢাকার লেখক প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত আমার ৪৪ টি গ্রন্থ বাংলাদেশ ও কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়েছে।

আমির সাধুর অপর পৌত্র এডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম ১৯৯২ খৃষ্টাব্দে ‘বিশ্বকাপ হাইলাইটস’ প্রকাশের মাধ্যমে লেখালেখি শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি বেশ কয়েকখানি আইনগ্রন্থ ও জমিজমা বিষয়ক পুস্তক রচনা করেন। ‘সম্পত্তি কেনা-বেচার বিধান’, ‘ইন্সুইরেন্স এক্ট ( ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষা), ‘মুসলিম তালাক বিষয়ক ভ্রান্ত ধারণা’, ‘পাওয়ার অব এটর্নি আইনের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ’ তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ। প্রকাশের মিছিলে রয়েছে ‘প্রচলিত আইন বনাম ধর্ম’ এবং ‘ধর্মে দাড়ি টুপি জোব্বা’ গ্রন্থদ্বয়।

মৌলভী ইদরিস আলীর নাতি আমেরিকা প্রবাসী লেখক হিযবুর রহমান জীবন তিনখানি প্রবন্ধ গ্রন্থ রচনা করেছেন যা প্রকাশিত হয়েছে ঢাকার সপ্তবর্ণ, সিটিপাবলিশিং ও পূর্বাপর থেকে। নাম ‘তারুণ্য :স্বপ্ন ও বাস্তবতা’,’ ১৮ থেকে ২১ ‘ ও ‘ সফল হবে তুমিও ‘।

জুড়ীর সাগরনালের সমাই অঞ্চলের আবদুল মজিদ কলম্বি, আবদুল গণি কলম্বি এবং কামিনীগঞ্জ বাজারের আবদুল জলিল ইউসুফী এবং জায়ফর নগরের আমরুজ আলী ছিলেন হাটুরে বা ভাট কবি। কলম্বি ভ্রাতৃদ্বয়ের কথা আধুনিক পুঁথিকার জালাল খান ইউসুফী তাঁর লেখা ‘বাংলাদেশের পুঁথি’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। পারিজাত প্রকাশনী থেকে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের পুঁথি প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে অনেকেই জুড়ীতে কবিতা লিখছেন এবং বইপুস্তকও তাদের প্রকাশিত হচ্ছে। কবি এবিএম নূুরুল ইসলাম এ দলে অগ্রগণ্য।

জুড়ীর সাংবাদিকতার প্রাথমিক ইতিহাস

জুড়ী বর্তমানে একটি উপজেলা শহর এবং এখানে সাংবাদিকতায় বেশ কিছু নবীন প্রবীন যুক্ত আছেন। আমি সকলের নাম যোগাযোগের অভাবে অবহিত নই।ফলে শুরুতেই ক্ষমা চেয়ে নেই। পরবর্তী সময়ে সকলের নাম জেনে নিয়ে এ প্রবন্ধকে সমৃদ্ধ করবো। জুড়ীতে এখন দু’টি প্রেসক্লাব,একটির আবার নিবন্ধনিত অনিবন্ধিত ২টি শাখা বিদ্যমান। তিনটি প্রেসক্লাব সহ শাখা একাধিক সাংবাদিক সংগঠনের জুড়ী শাখা এখানে তৎপর। কর্মাধিকার সংরক্ষণের জন্য সংগঠন ও প্রেসক্লাবের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে অনৈক্য থেকে অনেক সংগঠন প্রতিষ্ঠা পেলে তা হবে আত্মঘাতী।

আমি বিশ্বাস করতে চাই,জুড়ীর সাংবাদিকেরা যদি পেশাগতভাবে সংগঠিত হন এবং নীতিগতভাবে অন্যায়ের সাথে আপোষহীন থাকতে পারেন,তবে বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে জুড়ী উপজেলা মাইলফলক হতে পারবে।

আমি স্মরণ করতে চাই জুড়ীর সাংবাদিকতার উন্মেষকালকে,যখন জুড়ীর প্রথম সাংবাদিক হিসাবে প্রয়াত রফিক আহমদ ছিলেন সুপরিচিত। তিনি আমিনূর রশীদ চৌধুরী সম্পাদিত সাপ্তাহিক যুগভেরীর জুড়ী প্রতিনিধি ছিলেন। একই সঙ্গে মৌলভীবাজার থেকে প্রকশিত এডভোকেট হারুনূর রশীদ সম্পাদিত সাপ্তাহিক মুক্তকথার জুড়ী প্রতিনিধি ছিলেন। তবে কুলাউড়া উপজেলা ইত্তেফাক প্রতিনিধি বাবু সুশীল সেনগুপ্ত ও মৌলভীবাজার ইত্তেফাক প্রতিনিধি এবং মুক্তকথা সম্পাদক হারুনূর রশীদ জুড়ীতে এসে রফিক আহমেদকে নিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতেন। গাছ ও বাঁশ ব্যাবসার প্রধান কেন্দ্র হওয়াতে জুড়ী সংবাদপত্রের কাছে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা ছিল। কিন্তু ছোট জনপদ হবার কারণে তাঁকে জুড়ীর ইত্তেফাক প্রতিনিধি করা হয়নি। জুড়ীর দ্বিতীয় সাংবাদিক কন্দর্প দে। তাকে কেউ সাংবাদিক হিসাবে চিনতো না। তার বাবার পান বিড়ির দোকান ছিল জুড়ী বাস স্ট্যান্ডে এবং সেখানে সিলেট থেকে আব্দুল ওয়াহেদ খান সম্পাদিত ও নতুন প্রকাশিত সিলেট সমাচার বিক্রয় হতো। কন্দর্প দে জূড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ে আমার সহপাঠী শিশির দে ও তপন দে’র তিনি বড়ো ভাই। আমার সহপাঠী হওয়াতে তাদের দোকানে আমার যাতায়াত ছিল। অবসরে শিশির ও তপন কেউ সে দোকানে বসতো। আমি সিলেট সমাচার কিনে নিতাম।

আমি একসময় সিলেট সমাচারের জুড়ী প্রতিনিধি হবার চেষ্টা করি। তখন জানতে পারি কন্দর্প দে এ কাগজের জুড়ী প্রতিনিধি।তবে তিনি জায়ফরনগর উচ্চবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা পেলে সেখানে শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন এবং জুড়ীর তৃতীয় সাংবাদিক হিসাবে আমার নাম সিলেট সমাচার প্রতিনিধি হিসাবে যুক্ত হয়। চতুর্থ সাংবাদিক হিসাবে ঢাকার মীর্জা খবির সম্পাদিত সাপ্তাহিক জয়যাত্রা ও মাহবুব আলম চাষী সম্পাদিত সাপ্তাহিক আমার দেশের পরিচয়পত্র লাভ করেন বর্তমান বিএনপি নেতা ফখরুল ইসলাম শামীম। পঞ্চম সাংবাদিক হলেন সাপ্তাহিক জালালাবাদ -এর জুড়ী প্রতিনিধি প্রয়াত অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম (নেওয়ার মিয়া)।বেশ কিছু দিন আমরা একসাথে সাংবাদিকতা করি।

তারপর সংশ্লিষ্টরা নানা কারণে ব্যাস্ত হয়ে পড়লে আমি সিলেট সমাচারের সঙ্গে তাদের হয়ে জালালাবাদ, জয়যাত্রা ও আমারদেশ প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করি।আসে সমাচার হাউজ থেকে দৈনিক জালালাবাদী। দৈনিক জালালাবাদীর জুড়ী প্রতিনিধি ছাড়াও এ সময় সাপ্তাহিক মুক্তকথার বিশেষ প্রতিনিধি নিয়োগ লাভ করি।তখন বিনা বেতনের এ চাকরি করার অন্য কেউ না থাকাতে একজন অনেক কাগজে কাজ করতে অসুবিধা হয়নি। তারপর কার্যকরী সম্পাদক হিসাবে আমি মুক্তকথার মৌলভীবাজার কার্যালয়ে যোগদান করি।

জুড়ী সাংবাদিকতার ইতিহাসের পঞ্চপাণ্ডব বলা যায় আমাদেরকে। ১৯৭৭ থেকে ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দ সময়টা ছিল আমার জুড়ীতে সাংবাদিকতার কাল। এ সময় আমরা সততা ও এলাকার সুখ -দুঃখকে তুলে ধরার জন্যেই সাংবাদিকতা করেছি।

মৌলভীবাজার ছেড়ে ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকায় চলে যাই এবং ১৯৯১ সালে সাপ্তাহিক খোঁজখবর এবং মাসিক পূর্বাপর এর ডিক্লারেশন নিয়ে নিজে পত্রিকার মালিক হই। এর মধ্যে জুড়ীতে আস্তে আস্তে সাংবাদিকদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। আমি এক সময় ঢাকার শীর্ষস্থানীয় দৈনিকে কাজ করতে গেলে আমার চাচাতো ভাই এডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম ঢাকায় আমার সম্পাদিত সাপ্তাহিক খোঁজখবর এ কিছু দিন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসাবে কাজ করেন। তারপর জুড়ী এসে প্রেসক্লাব জুড়ী প্রতিষ্ঠা করে। অনেক দিন এ প্রেসক্লাব এককভাবে সাংবাদিকদের নেতৃত্ব দেয়। জুড়ী উপজেলা হবার পর জুড়ী উপজেলা প্রেসক্লাব নামে আরেকটি প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠা লাভ করে। পরে আবার দু’টোকে সমন্বয় করে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু মোহাইমিন সালহ’র আগ্রহে জুড়ী প্রেসক্লাব নামে এক করা হয়। কিন্তু একসময় এ ঐক্য আর টিকে থাকেনি। এখন বিভিন্ন নামে তিনটি প্রেসক্লাব ও এবং এর বাইরেও নানা সংগঠনের অস্তিত্ব রয়েছে। এখন সাংবাদিকদের পদচারণায় প্রাণ চঞ্চল জুড়ী। রুবিনা সাজ্জাদী আমার সহধর্মিণী। তিনি কিছুদিন দৈনিক সংবাদের ঢাকা অফিসে জলসা বিনোদন বিভাগে প্রদায়ক ছিলেন।


জুড়ী উন্নয়ন ও জনসচেনতা বৃদ্ধিতে সাংবাদিকদের বিশাল অবদান রয়েছে। জাতীয় ও আঞ্চলিক কাগজের স্থানীয় প্রতিনিধি ছাড়াও অনলাইন ভিত্তিক কয়েকটি কাগজ স্থানীয়ভাবে জুড়ী অঞ্চল থেকে প্রকাশিত হয়।

এই হলো জুড়ী সাংবাদিকতার প্রাথমিক ইতিহাস। প্রাচীন জনপদ হিসেবে জুড়ীর সাহিত্য ও সাংবাদিকতার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে। এর পথ ধরেই আমাদের আগামী দিনের সাফল্যগাথা রচিত হবে।

আমার বার্তা/হাসনাইন সাজ্জাদী/এমই

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *