Google Alert – ইউনূস
সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : শনিবার, ০২ আগস্ট ২০২৫
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো উপদেষ্টা শেখ হাসিনার দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কথা বলেননি। এমনকি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসও এ বিষয়ে কখনো একটি কথাও বলেননি।
আজ শনিবার রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি) মিলনায়তনে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে আলোচনা সভা ও শহীদ পরিবারবর্গকে সম্মাননা’ অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন তিনি।
হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘এখন যাঁরা উপদেষ্টা রয়েছেন, তাঁদের কেউ গত ১৭ বছর শেখ হাসিনার অত্যাচার-নির্যাতনের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলেননি। একমাত্র আসিফ নজরুল মাঝে মাঝে দু-চারটি কথা বলেছেন। এমনকি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস—দেশ বরেণ্য ব্যক্তি, আমরা সকলে তাঁকে শ্রদ্ধা করি, তিনিও শেখ হাসিনার দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কখনো কিছু বলেননি।’
তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টের শহীদদের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়নি কারণ অভ্যুত্থানের পর যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে, তারা সেই শহীদদের চেতনা ধারণ করে না।
হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘সব সময় বিপ্লবে জীবন দেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু বিজয়ের পরে তাঁদের মূল্যায়ন করা হয় না। কৃতিত্ব নেয় এক শ্রেণির কুটিল রাজনীতিবিদ, যারা জনগণকে ভুল পথে পরিচালিত করতে চায়।’
তিনি বলেন, ‘গণ-আন্দোলনের পটভূমি বিএনপি নির্মাণ করেছে। অথচ যারা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একটি শব্দও বলেনি, তারাই এখন পাদপ্রদীপের আলোয় উদ্ভাসিত। তারাই জাতিকে সবক দিচ্ছে।’
হাফিজ উদ্দিন আরও বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের সংগ্রামে মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন দিয়েছে। তারা পিআর পদ্ধতি বা আসনভিত্তিক নির্বাচন ব্যবস্থার জন্য নয়, গণতন্ত্রের জন্য লড়েছে। আর গণতন্ত্রের একমাত্র পথ হলো সুষ্ঠু নির্বাচন।’
তিনি বলেন, ‘যারা একবার ক্ষমতার স্বাদ পেয়েছে, তারা এখন আর ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। এখন শুধু ঘোরানো আর প্যাঁচানোর রাজনীতি চলছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই সংস্কার হতে হবে।’
সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর ইতিহাসে নেই যে অনির্বাচিত ব্যক্তিরা সংবিধান সংশোধন করে। অথচ এখানে সেটিই প্রস্তাব করা হচ্ছে। জনগণ ও সংসদের সম্মতি ছাড়া সংবিধান পরিবর্তনের চেষ্টা চলছে। ১৯৭২ সালে রক্ত দিয়ে গড়া সংবিধানকে ছুড়ে ফেলতে চায় তারা।’
বীর বিক্রম খেতাবপ্রাপ্ত এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ‘১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে আমরা ছিলাম ৮০ হাজার। এখন মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা হয়েছে আড়াই লাখ। এর কৃতিত্ব আওয়ামী লীগের। তারা আত্মীয়-স্বজনদের তালিকায় ঢুকিয়েছে। লুটপাটও করেছে ভালো মতো। শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যদের দুই দিন আগে বলা হয়েছে, এখন পালাও। কিন্তু কাউকে ধরা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন না হলে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কখনো ঠিক হবে না। বিনিয়োগও কেউ করবে না। এখন দেশে চলছে মবক্রেসি ও অ্যারিস্টোক্রেসি। বিদেশ থেকে ধার করে আনা আঁতেলরা শেখাচ্ছেন বাংলাদেশ কীভাবে চলবে।’
সাবেক বিচারপতি ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সেনানিবাসে আশ্রয় দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জুলাই-আগস্টে এমন আন্দোলন হয়েছিল, মসজিদের খতিব পর্যন্ত পালিয়ে গেছেন। প্রধান বিচারপতি ও ৬০০ পুলিশ কর্মকর্তা, যারা গুলি চালিয়েছেন, সেনানিবাসে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। সেনাবাহিনী তাঁদের আশ্রয় দিয়েছে, এটি ঠিক হয়নি।’
অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির মধ্যে ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। দেশের ভেতর ও বাইরে থেকে এই ঐক্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা চলছে।
তিনি বলেন, ‘পতিত স্বৈরাচার বসে নেই। তাদের হাতে লুণ্ঠিত অর্থ, বেআইনি অস্ত্র, দোসর রয়েছে। কাজেই ঐক্য রক্ষা করতেই হবে।’
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘যারা কথায় কথায় সমালোচনা করেন, আগে আয়নায় নিজেদের মুখ দেখুন। পত্রিকায় অনেক কিছু বেরোচ্ছে, আমরা এসব নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি না। দেশের মানুষ এসব পছন্দ করে না। আগামী দিনের রাজনীতি করতে চাইলে ঐক্য ধরে রাখতে হবে।’