Bangla News
১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী। এ বছর তার মৃত্যুবার্ষিকীতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কোনো কর্মসূচি পালন করবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
সাংগঠনিকভাবে কোনো কর্মসূচি নেওয়ার সুযোগ নেই দলটির। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচারকাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দলটির যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
এমন পরিস্থিতিতে এবার ১৫ আগস্টে দলের নেতাকর্মীদের ঝুঁকি নিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে গিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর সম্ভাবনা নেই বলে জানা গেছে। তবে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এক ভিডিও বার্তায় ৩২ নম্বরের বাড়িতে গিয়ে সবাইকে শ্রদ্ধা জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, “সব বাঙালির কাছে আমার আহ্বান আপনারা যদি স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাস করেন আগামীকাল সেই ঐতিহাসিক ৩২ নম্বরের বাড়িতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করবেন, সেই বাড়ির সামনে ফুলের তোড়া রাখবেন এবং মোমবাতি জ্বালাবেন। ৩২ নম্বর একটি বাড়ি, সেই বাড়ি আর নেই, তবে ৩২ নম্বর ঠিকানাটি আছে, মাটি এখনো আছে। আর মাটি কোনোদিন, চেতনা কোনোদিন মুছে ফেলা যায় না। বাংলাদেশের মাটি থেকে একাত্তরের ইতিহাস মুছে ফেলা যাবে না, বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলা যাবে না। ”
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ১৫ আগস্ট উপলক্ষে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর গত বছরের ১৫ আগস্টে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জোরালোভাবে আহ্বান জানানো হয়েছিল সারা দেশ থেকে নেতাকর্মীদের ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে আসার। শেখ হাসিনা দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ফোনে কথা বলে নির্দেশ দিয়েছিলেন। দলের পক্ষ থেকে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিন্তু তাতে সাড়া মেলেনি। দলীয় প্রধানের আহ্বান সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল না ৩২ নম্বরে।
সেদিন আওয়ামী লীগের কর্মসূচি প্রতিহত করতে ৩২ নম্বর এবং দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ছাত্র-জনতা অবস্থান নেয়। ১৫ আগস্ট ঘিরে আওয়ামী লীগের তৎপরতা প্রতিহত করতে ‘রেজিস্ট্যান্স উইক’ পালন করে ছাত্র-জনতা। ভোর থেকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের আশেপাশে অবস্থান নিয়েছিলেন শিক্ষার্থী ও কয়েকটি রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সকালে ৩২ নম্বরে যাওয়া ব্যক্তিরা হামলা ও হেনস্তার শিকার হন। ওই দিন সকালে কেউ কেউ নিজ উদ্যোগে ৩২ নম্বরে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাদের ধরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়। কয়েকজন মারধরেরও শিকার হন।
চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। ওই দিন রাত ৮টা থেকে পর দিন বেলা ১১টা পর্যন্ত এক্সকাভেটর, ক্রেন ও বুলডোজার দিয়ে বাড়িটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর ভাঙার কাজ বন্ধ থাকলেও দিনভর ওই বাড়ি ঘিরে ছিল বিক্ষুব্ধ ও উৎসুক জনতার ভিড়। ভারতে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার বক্তৃতা প্রচারের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ওই রাতে ধানমন্ডির বাড়িটি ঘিরে ব্যাপক বিক্ষোভ করে। এক পর্যায়ে বাড়িটিতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। তারপর ক্রেন, এক্সকাভেটর, বুলডোজার এনে বাড়ি ভাঙা হয়।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পতন ঘটে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের। ওই দিন দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের মধ্য দিয়ে পতন হয় টানা প্রায় ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকা সরকারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগেরও। পদত্যাগের পর দ্রুত দেশত্যাগ করে শেখ হাসিনা ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেন। এখনও সেদেশেই তিনি অবস্থান করছেন। তবে তিনি ভারতের কোথায় আছেন, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কেউ কিছু বলতে পারেননি। শেখ হাসিনার অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন সময় ভরতের গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে একাধিক স্থানের নাম শোনা গেলেও কোনো তথ্যই নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ বিষয়ে ভারত সরকার অত্যন্ত গোপনীয়তা রক্ষা করে চলেছে। দিল্লিতেই শেখ হাসিনাকে কড়া নিরাপত্তা দিয়ে রাখা হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে। তবে ভারতে যাওয়ার কয়েক দিন পর থেকেই তিনি দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মোবাইল ফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে যোগাযোগ রাখছেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিনই দলটির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা নিজেদের রক্ষা করতে আত্মগোপনে চলে যান। শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ও সাবেক এমপি-মন্ত্রীদের অনেকেই ওইদিন বা ওই দিনের পরপরই চলে যান দেশের বাইরে। আবার কেউ কেউ আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি ও পরিস্থিতি বুঝতে পেরে ৫ আগস্টের আগেই দেশ ছাড়েন। এর ফলে ৫ আগস্টেই দলটি অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ে। সরকার পতনের পর দলের সভাপতি শেখ হাসিনাসহ কেন্দ্র থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত অধিকাংশ নেতাকর্মীর নামে মামলা হয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার এক বছর হলো, এখনো আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীকেই আত্মগোপনে থাকতে হচ্ছে।
আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানান, এখনও অনেকের নামে মামলা হচ্ছে এবং গ্রেপ্তার অব্যাহত আছে। শেখ হাসিনার নামে এখন পর্যন্ত আড়াইশ’র মতো মামলা হয়েছে। শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের কারো কারো নামে অর্ধশতাধিক মামলা রয়েছে। তৃণমূলের বিভিন্ন পর্যায়ের যেসব নেতাকর্মীর নামে মামলা হয়েছে, তাদের অর্ধিকাংশের একাধিক, কারো কারো নামে চার-পাঁচটি করেও মামলা হয়েছে।
গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ও মন্ত্রীদের মধ্যে ২৫ জনের বেশি গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। গ্রেপ্তার হয়েছেন কেন্দ্র থেকে ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। তবে মোট কত জন গ্রেপ্তার হয়েছেন, তার সুনির্দিষ্ট তথ্য কেউ দিতে পারছেন না। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, দলটির ৭০ থেকে ৮০ হাজারের মতো নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। নেতাদের কারো কারো মতে গ্রেপ্তারের সংখ্যা আরও বেশি।
এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে ১৫ আগস্ট উপলক্ষে আওয়ামী লীগের কোনো কর্মসূচি পালন করবে কি না জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলটির নেতাকর্মীরা বলেন, দলীয়ভাবে সংগঠিত হয়ে কর্মসূচি পালন করতে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সরকার দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ রেখেছে। তাছাড়া এই পরিস্থিতিতে ঝুঁকি নিয়ে ব্যক্তি উদ্যোগে কেউ যাবে বলেও মনে হয় না। এ ধরনের কোনো উদ্যোগ নেওয়ার কথা শুনিনি।
এসকে/এমজেএফ