Google Alert – সেনাবাহিনী
৫ আগস্টকে সামনে রেখে বড় ধরনের নাশকতার আশংকা করছেন গোয়েন্দারা। নাশকতার মাধ্যমে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে দেশের ভেতর-বাইরে থেকে বেশ সক্রিয় পতিত আওয়ামী লীগের গডফাদাররা। গত ২৩ জুলাই সচিবালয়ের ভেতরে ভাংচুর, বিশৃংখলা তৈরির মাধ্যমে আগুন লাগিয়ে বড় ধরনের নাশকতা তৈরির পরিকল্পনা ছিল দুস্কৃতকারীদের। কিন্তু সেনাবাহিনী ও পুলিশের দ্রুত কঠোর পদক্ষেপ গ্রহন করায় তাদের ওই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। একই দিনে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিদর্শনে গিয়ে তোপের মুখে পড়েন আইন উপদেষ্টা, শিক্ষা উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব। সাড়ে ৯ ঘন্টা আটকে রাখার পর সেনাবাহিনী ও পুলিশের কঠোর পদক্ষেপে রাত সাড়ে ৭টায় সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন তারা। রাত বাড়ার সাথে সাথে অতর্কিত হামলা ও শক্তি প্রয়োগ করে দু’উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবকে হত্যার পরিকল্পনা ছিল দুস্কুতিকারীদের।
সচিবালয় ও মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বড় ধরনের হামলা, অগ্নিসংযোগ এবং নাশকতার তথ্য গোয়েন্দাদের হাতে আসার পর সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহন করেন অন্তর্বতীকালিন সরকার। ফলে পতিত আওয়ামী গডফাদার ও দুস্কৃতকারীদের এ সব পরিকল্পনা সফল হয়নি। তবে পুলিশ প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থায় এখনও পতিত আওয়ামী সরকারের অতি ঘনিষ্ট কর্মকর্তারা গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল রয়েছেন। এসব কর্মকর্তারা সরকারের কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত। তারা পলাতক দুস্কৃতকারীদের নানাভাবে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচার করছে। গত সপ্তাহে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে পাঠানো একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে এ সব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই বর্তমান সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে একের পর এক চক্রান্ত শুরু করে পরাজিত রাজনৈতিক শক্তি। নানা ইস্যুতে গড়ে তোলা হয় একের পর এক অন্দোলন। এসব অন্দোলনের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নেপথ্যে রয়েছে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা টেলিফোন বা গ্রুপ কলে উসকে দিয়েছেন এসব অন্দোলন। নাশকতার কাজে ব্যবহার করা হতে পারে আওয়ামী নেতাকর্মীদের হাতে থাকা সাড়ে ৫ হাজার আগ্নেয়াস্ত্র। ফ্যাসিবাদ সরকারের ১৫ বছরে ইস্যু করা এসব অস্ত্র অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষিত নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জমা পড়েনি। ফলে এগুলো ইতোমধ্যেই অবৈধ হয়েছে। এছাড়া পুলিশের কাছ থেকে লুট হওয়া এক হাজার ৩৭৫ অস্ত্র এবং দুই লাখ ৫৭ হাজার ৮৪৯ রাউন্ড গোলা-বারুদ এখনো উদ্ধার হয়নি। এর বড় অংশই চলে গেছে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও যুবলীগ ক্যাডারদের হাতে-এমনটি মনে করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সংশ্লিষ্টরা। পুলিশ প্রশাসনের মতো গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার দায়িত্বশীল পদে বসে এখনও তথ্য পাচার করছেন পতিত আওয়ামী সরকারের অতিঘনিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা। তারা সরকারের অতি গোপণীয় তথ্য নাশকতাকারীদের সরবরাহ করছেন। ফলে আন্দোলন ও নাশকতা প্রতিরোধে অন্তর্বতীকালিন সরকারকে বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করা প্রয়োজন।
মাঠ পর্যায়ের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, আওয়ামী লীগের পলাতক গডফাদাররা বড় ধরনের নাশকতার মাধ্যমে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চায় বলে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে। তারা পার্শ্ববর্তী একটি দেশে বসে নিয়মিতভাবে গোপন বৈঠক করছেন। আমরা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা পলাতক থাকলেও দেশের ভেতরেই অবস্থান করছে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। এদের মাধ্যমেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে। আওয়ামী লীগের যেসব নেতার হাতে অবৈধ অস্ত্র আছে তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। এদের গ্রেফতার করা জরুরী।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দেশ-বিদেশে বসে নাশকতাকারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুরুপের তাস বানিয়েছে। যে যার খুশি অনুযায়ী নানা তথ্য তৈরি করে ফেসবুকসহ নানা যোগাযোগে প্রচার করছে। দেশে কোনো ঘটনা ঘটলেই গুজবকারীদের তৎপরতা বেড়ে যাচ্ছে। যারা এসব নাশকতার সাথে সম্পৃক্ত আছে তাদের খুঁজে বের করতে না পারলে বড় ধরনের ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা আছে। নাশকতার পরিকল্পনাকারী, নির্দেশদাতা, নির্দেশ পালনকারী, কিসের বিনিময়ে তারা এসব কাজে জড়াচ্ছেন, কোন কোন এলাকায় করার সম্ভাবনা বেশি- এসব বিষয় চিহ্নিত করা হচ্ছে।
ক্ষমতাচ্যুত হাসিনা পালিয়ে দিল্লি যাওয়ার পর থেকে ভারত নানাভাবে বাংলাদেশে বিশৃংখলা সৃষ্টির চেস্টা করে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে টার্গেট করা হয় এবং জুডিশিয়াল ক্যু, সংখ্যালঘু নির্যাতন, আনসার বিদ্রোহ, গার্মেন্টেস সেক্টরে বিশৃংখলা এবং পাহাড়ে অশান্তির চেষ্টাসহ নানা অপকান্ড ঘটানোর চেষ্টা করে। আইন শৃংখলা বাহিনী, সেনাবাহিনী এবং রাজনৈতিক দলগুলো ঐকবদ্ধভাবে ভারতের সেই ষড়যন্ত্র প্রতিহত করছে।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মতো স্পর্শকাতর ইস্যুগুলোকে ব্যবহার করে সরকারবিরোধী বড় ধরনের বিক্ষোভ সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে। গত এক বছরে অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে ছাত্র, শিক্ষক, শ্রমিক, পেশাজীবীসহ বিভিন্ন গোষ্ঠীর আন্দোলনে এমন প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে।
ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এস এন মো: নজরুল ইমলাম ইনকিলাবকে বলেন, যারা নাশকতায় জড়িত তাদের তথ্য সংগ্রহ করনা হচ্ছে। নাশকতাকারী বা অপরাধীর কোনো দল নেই। তাদের আইনের আওতায় এনে পুলিশ জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে চায়। এজন্য পুলিশ কঠোর পরিশ্রম করছে। নাশকতাকারীদের আইনের আওতায় আনতে দুর্বলতা, অবহেলা ও অদক্ষতা দেখানোর কোন সুয়োগ নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন।
গত মঙ্গলবার সকালে উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এবং সি আর আবরার। তখন তাদের সঙ্গে ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমসহ প্রেস উইংয়ের আরও তিন সদস্য। টানা ৯ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সহায়তায় তারা সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন। মাইলস্টোনের ঘটনাস্থলে এসেই তোপের মুখে পড়েন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। এসময় তাকে দেখে শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া, ভুয়া’ স্লোগান দেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়ি দেখেও একই স্লোগান দেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। তারা ‘উই ওয়ান্ট, জাস্টিস’, ‘আমার ভাই মরল কেন, প্রশাসন জবাব চাই’ প্রভৃতি স্লোগান দেন। তারা আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবারারের পদত্যাগ দাবি করেন। দুস্কৃতকারীদের টার্গেট ছিল স্কুলে গভীর রাতে ব্যাপক হামলা চালানো এবং দু’উপদেষ্টা ও প্রেস সচিবকে হত্যা করা। এদিকে দাবি মানার পরেও সচিবালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর পতিত হাসিনার দোসর নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। শুধু সচিবালয়েই নয় সেনাবাহিনীর সহায়তায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের বের করে দিলে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা জিরো পয়েন্টের গুলিস্থান সড়কে ব্যাপক তা-ব চালায়। গত ২৩ জুলাইয়ের এ ঘটনায় গুলিস্তান-জিরো পয়েন্ট সড়ক রণক্ষেত্রে পরিনত হয়। তাদের হামলায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ সাধারণ মানুষজনও আহত হন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে। এদের মধ্যে সচিবালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের তিন সক্রিয় ক্যাডারকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ। এরা হলেন, অভিষেক সিকদার, আবু সুফিয়ান এবং আশিকুর রহমান।