jagonews24.com | rss Feed
মন্দার কারণে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের আবাসন বাজারের টালমাটাল অবস্থা। ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে দেশটিতে বাড়ির দাম কিছুটা কমেছে, বিশেষ করে গত তিন মাসে বেশিরভাগ শহরেই দাম হ্রাস পেয়েছে। ফেডারেল রিজার্ভের কঠোর মুদ্রানীতির কারণে সুদের হার বেশি থাকায় আবাসন বাজারে এর প্রভাব পড়ছে। এছাড়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতিও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলছে।
করোনা মহামারির সময় আটলান্টা, অস্টিন ও মায়ামির মতো শহরে সস্তা সুদে (২ শতাংশের মতো) যারা বাড়ি কিনে রেখেছিলেন, তারা গত কয়েক বছরে দারুণ লাভবান হয়েছেন। সে সময় রোদ, বড় জায়গা আর করোনার কড়াকড়ি থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই এসব শহরে চলে আসেন।
তবে এখন পরিস্থিতি বদলেছে। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ শহরে বাড়ির দাম কমেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কড়া নীতির কারণে সুদের হার বেশি থাকায় ঋণ নিয়ে বাড়ি কেনা কঠিন হয়ে পড়েছে। এর সঙ্গে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতিও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমিয়ে দিচ্ছে, যা আগে বিক্রি বাড়াতে সাহায্য করছিল।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের সব এলাকার পরিস্থিতি এখন একরকম নয়। উত্তর-পূর্ব ও মিডওয়েস্টে দাম কিছুটা বাড়লেও পশ্চিম ও দক্ষিণে, বিশেষ করে সানবেল্ট অঞ্চলে দাম কমছে। ডালাস বা ফিনিক্সের মতো শহরে যারা গত বছর সাত শতাংশ সুদে বাড়ি কিনেছেন, তাদের বাড়ির মূল্য এরই মধ্যে কয়েক শতাংশ কমে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার সময় যেমন মানুষ দক্ষিণের অঙ্গরাজ্যে বেশি যাচ্ছিল, এখন তা অনেক কমে গেছে। এছাড়া সীমান্তে কড়াকড়ি হওয়ায় বিদেশি ক্রেতাও কমেছে। পাশাপাশি করোনার সময় যে বিপুল সংখ্যক বাড়ি নির্মাণ হয়েছিল, এখন সেগুলোর চাহিদাও কমে গেছে। অস্টিন ও মায়ামি প্রত্যাশিত বড় প্রযুক্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে আকর্ষণ করতেও ব্যর্থ হয়েছে।
এছাড়া উত্তর-পূর্বের শহর যেগুলো ছুটি কাটানোর জন্য বেশ জনপ্রিয় যেমন ন্যানটাকেট, মার্থাস ভিনইয়ার্ড ও মেইনের সমুদ্রতীরবর্তী এলাকাতেও বাড়ির দাম কমছে। তবে বড় শহরের আশপাশের উপশহরগুলো তুলনামূলক ভালো অবস্থায় আছে।
সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে ফ্লোরিডা, যেখানে গত এক বছরে বাড়ির দাম চার শতাংশ কমেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বীমা খরচ বেড়ে বছরে গড়ে প্রায় ১১ হাজার ডলার হয়েছে, যা জাতীয় গড়ের তুলনায় অনেক বেশি। ধনী কানাডিয়ান ক্রেতার সংখ্যা কমে গেছে এবং ২০২১ সালে মায়ামিতে নতুন নিরাপত্তা নীতির কারণে খরচও বেড়েছে।
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, আমেরিকার আবাসন বাজার অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচক। উচ্চ সুদের হার কেনা-বেচা কমিয়ে দিচ্ছে, নতুন নির্মাণ কমছে এবং চাকরির বাজারেও প্রভাব ফেলতে পারে। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সুদের হার বেড়েছে, তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে বড় প্রযুক্তি কোম্পানির বিনিয়োগ অর্থনীতিকে কিছুটা স্থিতিশীল রাখতে সক্ষম হচ্ছে। গত দশক আমেরিকার বাড়ির মালিকদের জন্য স্বর্ণযুগ ছিল। সম্ভবত উচ্চাকাঙ্ক্ষী ক্রেতারা কিছুটা বিরতি নিতে চলেছেন।
টিটিএন