টেকসই ব্যবসায়িক ভবিষ্যতের জন্য রূপান্তরের অগ্রযাত্রা

Dhaka Tribune

পরিবর্তনশীল অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও ক্রমবিকাশমান নীতিমালা কাঠামোয় বিএটি বাংলাদেশ জটিল ও প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসায়িক পরিবেশে দক্ষতা ও স্থিতিশীলতা বজায় রেখে এগিয়ে চলেছে। এই বিশেষ সাক্ষাৎকারে বিএটি বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনীষা আব্রাহাম আলোচনা করেছেন শিল্পের বর্তমান চ্যালেঞ্জ, জাতীয় অর্থনীতিতে কোম্পানির অবদান এবং দীর্ঘমেয়াদী স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে, ব্যবসা ও সরকারি রাজস্ব উভয়ের জন্য, প্রয়োজনীয় কৌশলগত অগ্রাধিকার সম্পর্কে।

বাংলাদেশের ব্যবসায়িক পরিমণ্ডল দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে, যা সারা দেশের শিল্পখাতের জন্য নতুন সুযোগ এবং অনন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। আপনি বিএটি বাংলাদেশ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালন করছেন – এই পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিকে আপনি কীভাবে তামাক শিল্পে প্রভাব ফেলতে দেখছেন?

মনীষা আব্রাহাম: বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে বিনিয়োগ ও ব্যবসার জন্য একটি সম্ভাবনাময় গন্তব্য, যা একটি দৃঢ় অর্থনীতি এবং ক্রমবর্ধমান ভোক্তা ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। গত কয়েক বছরে এখানে শিল্পখাতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে, যা কর্মসংস্থান এবং জাতীয় রাজস্বে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। তবে বর্তমানে দেশটি উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যা বৈদেশিক মুদ্রার সংকট, মুদ্রাস্ফীতি এবং নীতিমালার পরিবর্তনশীল ধারা দ্বারা প্রভাবিত। এসব পরিবর্তন, তামাকসহ, সকল শিল্পখাতের জন্যই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে।

কোভিডকালীন সময় বাদ দিলে, তামাক শিল্পের রাজস্ব বৃদ্ধি ছিল ১২-১৬% এর মধ্যে। তবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এটি নেমে এসেছে প্রায় ৫%-এ। এটি একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয় এবং আরও স্থিতিশীল ও পূর্বানুমানযোগ্য রাজস্ব নীতির প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরে।

সম্প্রতি, আকস্মিকভাবে যে কর ও শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়েছে, তা সামগ্রিকভাবেই শিল্পখাতে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি করেছে; তবে, এক্ষেত্রে আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো দীর্ঘমেয়াদি রাজস্ব রূপরেখার অনুপস্থিতি। সরকারের রাজস্ব আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস হিসেবে শিল্পটির ক্ষেত্রে একটি ভারসাম্যপূর্ণ নীতি গ্রহণ করা প্রয়োজন। ইতোমধ্যেই উচ্চকরের আওতায় থাকা খাতগুলোতে করের বোঝা বাড়ানোর পরিবর্তে করের ভিত্তি সম্প্রসারণ, কাঠামো সহজীকরণ এবং মূল্য সমন্বয়কে মুদ্রাস্ফীতি ও আয় বৃদ্ধির মতো সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকের সঙ্গে যুক্ত করা উচিত।

মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে উচ্চ করের পাশাপাশি মুদ্রাস্ফীতিরও অধিক হারে মূল্যবৃদ্ধি, অবৈধ সিগারেট বাজারের প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করেছে, যা জনস্বাস্থ্য লক্ষমাত্রা ও সরকারি রাজস্ব অর্জন, উভয়কেই ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এ কারণেই আমরা বাস্তবমুখী ও তথ্য-প্রমাণভিত্তিক কর কাঠামো তৈরির পক্ষে, যা একইসাথে সরকারি রাজস্বকে সুরক্ষিত রাখবে এবং বৈধ ব্যবসার জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করবে।

আমি বিশ্বাস করি, দীর্ঘমেয়াদী রূপরেখার সঙ্গে রাজস্বের পূর্বানুমানযোগ্যতা, স্বচ্ছতা এবং নীতিনির্ধারণে সমন্বিতভাবে কাজ করা আমাদের শিল্প এবং বৃহত্তর অর্থনীতির টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য অপরিহার্য।

বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে বিএটি বাংলাদেশের ভূমিকা নিয়ে আপনি কী মনে করেন?

মনীষা আব্রাহাম: ১১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিএটি বাংলাদেশ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে নির্ভরযোগ্য সহযোগী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। শীর্ষ করদাতাদের একজন হিসেবে, বাংলাদেশ সরকারের অভ্যন্তরীণ রাজস্বে আমাদের অবদান প্রায় ৮ শতাংশ। এছাড়াও, বাংলাদেশে একমাত্র শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত তামাক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমাদের বাজার মূলধন দেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ। ২০২৪ সালে আমরা বিশটিরও বেশি দেশে প্রায় ৭ কোটি মার্কিন ডলার সমমূল্যের তামাকপাতা রপ্তানি করেছি, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ে যেমন ভূমিকা রেখেছে, তেমনি বৈশ্বিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করেছে।

আমাদের ভ্যালু চেইনে কর্মী, কৃষক, পরিবেশক, খুচরা বিক্রেতা ও সেবা প্রদানকারীসহ প্রায় ১৬ লাখ মানুষের জীবিকা জড়িত। এটি জাতীয় অর্থনীতির সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত এবং বিভিন্ন খাতে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করছে। একই সঙ্গে, এটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসরত মানুষের জীবন ও জীবিকায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনছে।

অর্থনৈতিকভাবে অবদান রাখা ছাড়াও, আমরা ‘ট্যালেন্ট ইনকিউবেটর’ হিসেবেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পেরে গর্বিত। করপোরেট খাতে দেশের শীর্ষস্থানীয় ভূমিকায় বর্তমানে যারা দায়িত্ব পালন করছেন, তাদের অনেকেই বিএটি বাংলাদেশের মাধ্যমে নিজেদের ক্যারিয়ার শুরু করেছেন এবং যার দরুণ তারা আন্তর্জাতিক মান, কৌশলগত ভাবনা ও কার্যকর ব্যবস্থাপনার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন।  

আমি গর্বিত যে আমি এমন একটি প্রতিষ্ঠানকে নেতৃত্ব দিচ্ছি, যা দীর্ঘদিন ধরে টেকসই উন্নয়নকে ব্যবসায়িক কার্যক্রমের মূল অংশ হিসেবে গ্রহণ করেছে। আমরা বেসরকারি খাত দ্বারা পরিচালিত দেশের সর্ববৃহৎ বৃক্ষরোপন কার্যক্রম এবং বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহের উদ্যোগ পরিচালনা করছি, যা প্রত্যন্ত অঞ্চলে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জীবনের মানোন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। আমাদের গৃহীত এসব উদ্যোগ সামাজিকভাবে ইতিবাচক ভূমিকা রাখার পাশাপাশি, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়েও স্বীকৃতি অর্জন করেছে। এছাড়াও, আমরা বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান যারা ‘অ্যালায়েন্স ফর ওয়াটার স্টুয়ার্ডশিপ’ স্বীকৃতি অর্জন করেছি যা আমাদের দায়িত্বশীল উপায়ে পানি ব্যবস্থাপনা ও বিশ্বমানের অনুশীলনীর প্রতিফলন।

সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে তামাক খাত থেকে সরকারের রাজস্ব প্রবৃদ্ধি কমেছে। এর পেছনে মূল কারণগুলো কী এবং এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?

মনীষা আব্রাহাম: প্রথমত, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে মোট করের হার হঠাৎ করে ৭৭% থেকে ৮৩%-এ বৃদ্ধি, এবং মাত্র ছয় মাসের মধ্যে মুদ্রাস্ফীতির ঊর্ধ্বে ধারাবাহিক মূল্যবৃদ্ধি শিল্পে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। এর মূল কারণ হলো শিল্পের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ও পূর্বানুমানযোগ্য রাজস্ব রোডম্যাপের অনুপস্থিতি। আকস্মিক মূল্যবৃদ্ধি ও কর নীতির পরিবর্তন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অনিশ্চয়তা তৈরির পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও টেকসই বিনিয়োগ করাকে কঠিন করে তোলে। কার্যকর নীতি প্রণয়নের জন্য খাতসংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনদের সাথে উন্মুক্ত আলোচনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অতীতে এমন সম্পৃক্ততা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুপস্থিত ছিল, তবে এখন আমরা অর্থবহ সংলাপের প্রাথমিক ধাপ দেখতে পাচ্ছি। তবে মূল বিষয় হলো, এসব আলোচনাকে অবশ্যই এমন বাস্তব পদক্ষেপ ও ফলাফলে রূপান্তরিত করতে হবে যা শিল্প এবং শেষ পর্যন্ত দেশ, উভয়ের জন্যই সুফল বয়ে আনবে।

ব্যবসা খাতের জন্য আক্রমণাত্মক করনীতির ফলে ভোক্তারা সস্তা ও অনিয়ন্ত্রিত পণ্য কেনার দিকে ঝুঁকছেন; যে কারণে অবৈধ সিগারেটের বাণিজ্য দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুধুমাত্র ২০২৩-২৪ অর্থবছরেই অবৈধ ব্যবসায়ীদের কর ফাঁকির কারণে সরকার প্রায় ৩ হাজার ৭৮৪ কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে।

ঐতিহাসিকভাবে, তামাক খাত জাতীয় কোষাগারে ধারাবাহিকভাবে দুই অঙ্কের শক্তিশালী রাজস্ব বৃদ্ধিতে অবদান রেখে আসছে। এই বছরের মন্দাবস্থা আরও সমন্বিত ও ভারসাম্যপূর্ণ পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তাকে সামনে নিয়ে আসে, যা রাজস্ব লক্ষ্যকে শিল্পের দীর্ঘমেয়াদি স্থায়িত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করবে। অংশীজনদের সাথে অন্তর্ভুক্তিমূলক সংলাপের মাধ্যমে একটি সুস্পষ্ট ও ধারাবাহিক শুল্ক নীতি প্রণয়নে নজর দেয়া উচিত যার মাধ্যমে টেকসই রাজস্ব নিশ্চিত করার পাশাপাশি শিল্পখাতের প্রবৃদ্ধিও নিশ্চিত হবে।

বিএটি বাংলাদেশ সম্প্রতি নিজেদের প্রধান কার্যালয় ও মহাখালী ফ্যাক্টরি স্থানান্তর করেছে। এর ফলে, প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম এবং রাজস্ব করের ওপর কিরূপ প্রভাব পড়েছে?

মনীষা আব্রাহাম: বিএটি বাংলাদেশ ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের সাথে ৯০ বছরের ইজারা চুক্তির আওতায় ১৯৬৪ সাল থেকে মহাখালী ডিওএইচএস -এ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল যেখানে প্রতি ৩০ বছর পরপর চুক্তি নবায়নের ধারা অন্তর্ভুক্ত ছিল।

তবে ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড লিজ নবায়ন না করায়, চুক্তি অনুযায়ী বিএটি বাংলাদেশ এটি নবায়নের জন্য আইনি প্রক্রিয়া শুরু করে। কিন্তু ফলাফল অনুকূলে আসেনি এবং আমরা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের সাথে প্রয়োজনীয় সমন্বয়ের মাধ্যমে আমাদের অফিস ছেড়ে দেই। এত স্বল্প সময়ের মধ্যে এই বৃহৎ স্থানান্তর কার্যক্রমটি দ্রুততা, শৃঙ্খলা ও যত্নের সাথে সফলভাবে সম্পন্ন  করতে পারার জন্য আমি আমার সহকর্মীদেরকে নিয়ে ভীষণ গর্বিত।

পাশাপাশি, আমরা দায়িত্বশীল উপায়ে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এর ধারাবাহিকতায়, তৃতীয় পক্ষের কর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের ওপর প্রভাব হ্রাসে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।

ইতোমধ্যেই আমরা ঢাকার তেজগাঁওয়ে একটি নতুন অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান কার্যালয় থেকে আমাদের কার্যক্রম শুরু করেছি। পাশাপাশি, স্থায়ী কার্যালয়ে নির্বিঘ্নে স্থানান্তরের প্রস্তুতিও চলছে। এছাড়াও, আমাদের দীর্ঘমেয়াদি টেকসই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ভবিষ্যতের অবকাঠামোগত চাহিদা পূর্বানুমান করে সাভার ফ্যাক্টরিতে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করেছি। বর্তমান কার্যক্রম যেন চলমান থাকে এবং ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির কথা চিন্তা করে সময়ের সাথে সাথে এটি ধাপে ধাপে উন্নত করা হয়েছে। সম্প্রতি, ঢাকা ফ্যাক্টরি বন্ধের পর সাভারে উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে প্রায় ২৯৭ কোটি টাকা বিনিয়োগ অনুমোদন করা হয়েছে।

আমাদের ব্যবসার পরিসর বিবেচনায় এই আকস্মিক পরিবর্তনের কারণে সরকারের রাজস্ব আয়ে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে আমরা দায়িত্বশীলভাবে সম্ভাব্য ক্ষতি কমিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করছি। একই সময়ে, এই অভিজ্ঞতা একটি পূর্বানুমানযোগ্য এবং সহায়ক ব্যবসায়িক পরিবেশের গুরুত্বকে পুনর্ব্যক্ত করে। শুধুমাত্র আমাদের মতো বিদ্যমান বিনিয়োগকারীদের জন্য নয়, বরং বাংলাদেশের সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী আস্থা গড়ে তুলতে নিয়ন্ত্রক বিষয়গুলিতে স্পষ্টতা নিশ্চিত করা এবং আইনি প্রক্রিয়াগুলি সুনিশ্চিত রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।

ভবিষ্যতের নেতৃত্ব গড়ে তোলার জন্য সুপরিচিত বিএটি বাংলাদেশ। দক্ষতা বিকাশ এবং পরবর্তী প্রজন্মের নেতৃত্ব প্রস্তুত করতে কোন কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে?

মনীষা আব্রাহাম: বাংলাদেশের কর্মীরা বৈশ্বিক মঞ্চে যেভাবে নিজেদের প্রমাণ করছে, তা নিয়ে আমরা ভীষণ গর্বিত। বিএটি বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে মানব সম্পদ উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে, যার সুফল পাচ্ছে সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন শিল্পখাত। বিএটি বাংলাদেশের প্রাক্তন কর্মীরা বিভিন্ন খাতে বর্তমানে সি-স্যুট এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসবে দায়িত্ব পালন করছেন।

বিএটি গ্রুপের মধ্যেই বর্তমানে ৫০ জনেরও বেশি বাংলাদেশি ম্যানেজার এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল ও ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত রয়েছেন। ব্যবস্থাপনা পর্যায় ছাড়াও, আমাদের ফ্যাক্টরির কর্মীদের নিয়েও আমরা গর্ববোধ করি যারা ব্রাজিল, সিঙ্গাপুর, পোল্যান্ড ও নাইজেরিয়ার মতো দেশে গিয়ে সেখানকার স্থানীয় টিমকে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা প্রদান করে বাংলাদেশের বৈশ্বিক খ্যাতি আরও দৃঢ় করেছে।

বর্তমানে ৭০০-এর বেশি ম্যানেজার বিএটি বাংলাদেশে নিয়োজিত রয়েছেন। তারা এমন নেতৃত্ব কাঠামোর মধ্যে কাজ করছেন যা তাদের পূর্ণ সক্ষমতা বিকাশে ভূমিকা রাখে। আমাদের সমন্বিত মানবসম্পদ নীতি ও কর্মীদের উন্নয়নের প্রতি অঙ্গীকারের কারণে আমরা ‘টপ এমপ্লয়ার’ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছি। একটি ‘ব্যালেন্স স্কোরকার্ড’ -এর মাধ্যমে বিএটি বাংলাদেশে পারফরমেন্স মূল্যায়ন করা হয়। এক্ষেত্রে, যেখানে ব্যবসায়িক ফলাফল যেমন বিবেচনায় নেওয়া হয়, তেমনি নেতৃত্বের গুণাবলীও গুরুত্ব পায়। সহানুভূতিশীলতা, অনুপ্রেরণা দেওয়ার সক্ষমতা এবং আন্তরিকতা ও সততার সাথে টিমের নেতৃত্ব দেয়ার গুণাবলীকে আমরা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করি।

যা আমাকে সবচেয়ে অনুপ্রাণিত করে, তা হলো বাংলাদেশের স্থানীয় প্রতিভার মান। তাদের মধ্যে কাজের উদ্যম রয়েছে, তারা দায়িত্বশীলতা ও নিষ্ঠার সাথে নিজেদের কর্মসম্পাদন করে। আমি আমাদের কর্মীদের মধ্যে অসাধারণ উৎসাহ, লক্ষ্যবোধ এবং গভীর দায়িত্ববোধ দেখেছি। এই গুণাবলী কেবল আমাদের ব্যবসাকে এগিয়ে নিয়ে যায় না, বরং যেকোনও চ্যালেঞ্জিং পরিবেশে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্যও প্রস্তুত করে।

তামাক খাত থেকে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি রাজস্ব নিশ্চিত করতে কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি বলে আপনি মনে করেন?

মনীষা আব্রাহাম: তামাক খাত ঐতিহাসিকভাবেই জাতীয় রাজস্ব, রপ্তানি, কর্মসংস্থান ও জীবিকার উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে আসছে। কার্যকর বিকল্প ছাড়া আকস্মিক কোন সিদ্ধান্ত এই ইকোসিস্টেমকে দুর্বল করে দিতে পারে যার নেতিবাচক প্রভাব জাতীয় অর্থনীতিতেও পড়বে।

এক্ষেত্রে, টেকসই উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিতে পূর্বানুমানযোগ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ‘ফিসকাল রোডম্যাপ’ দরকার। আকস্মিক বা অতিরিক্ত কর বৃদ্ধি শিল্পখাতে ভারসাম্যহীনতা তৈরি করবে এবং অবৈধ বাণিজ্যকে উৎসাহিত করবে। তামাক খাত থেকে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি রাজস্ব নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনদের সাথে গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ‘ফিসকাল ফ্রেমওয়ার্ক’ তৈরি করা প্রয়োজন, যা রাজস্ব বৃদ্ধিতে কর ফাঁকি হ্রাসে এবং সবার জন্য ‘লেভেল প্লেইং ফিল্ড’ তৈরিতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এছাড়াও, বড় ধরনের কোনো আর্থিক বা নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করা জরুরি, যাতে গৃহীত নীতিমালা বাস্তবসম্মত ও কার্যকর হয়। পাশাপাশি, ক্রমবর্ধমান অবৈধ বাজার মোকাবিলায় আরও কঠোর নীতি এবং মাঠপর্যায়ে এর বাস্তবায়ন প্রয়োজন যার মাধ্যমে ন্যায্য প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

করনীতির পাশাপাশি, রেগুলেটরি পলিসি প্রণয়ণে জনস্বাস্থ্য নিয়ে সরকারের লক্ষ্য ও অর্থনৈতিক বাস্তবতার মধ্যে ভারসাম্য বজায়ে গুরুত্ব দিতে হবে। ২০০৫ সালের ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন’ এর আসন্ন সংশোধনী হতে হবে বাস্তবসম্মত, প্রয়োগযোগ্য এবং বাংলাদেশের সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। অতিরিক্ত কঠোর ব্যবস্থা তামাক খাতের ‘সাপ্লাই চেইন’ ও সরকারের রাজস্ব আয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।  

তামাক শিল্প বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন কার্যকরী খাত, যার বিস্তৃত ‘সাপ্লাই চেইন’ প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষের জীবন ও জীবিকায় প্রভাব ফেলে। ‘লজিস্টিকস’ খাতে উদ্ভাবনের অগ্রণী ভূমিকা পালন করলেও সামগ্রিকভাবে তামাকখাতে উদ্ভাবন, ডিজিটালাইজেশন ও আধুনিকায়নের আরও অনেক সুযোগ রয়েছে যা নিশ্চিত করা গেলে, শিল্পখাতের সক্ষমতা বাড়ার পাশাপাশি কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যাবে এবং এর ফলে এ খাত জাতীয় কোষাগারেও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারবে।

আমরা আমাদের অংশীজনদের অব্যাহত সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য তাদের প্রতি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ এবং গুরুত্বপূর্ণ এ খাতের টেকসই উন্নয়নে একসাথে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিএটি বাংলাদেশ গুণগত প্রবৃদ্ধি, টেকসই ভবিষ্যৎ আর আধুনিক ব্যবসায়িক মডেল অনুসরণ করে সরকারের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করার মাধ্যমে একটি সম্ভাবনাময় আগামী বিনির্মাণে অঙ্গীকারবদ্ধ। 

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *