চ্যানেল আই অনলাইন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত যুদ্ধবিরতির উদ্যোগ সত্ত্বেও টানা চতুর্থ দিনের মতো সীমান্তে সংঘর্ষে জড়িয়েছে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া। এতে এখন পর্যন্ত ৩২ জন নিহত হয়েছে। ২ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন বলে জানিয়েছে উভয় দেশের কর্তৃপক্ষ।
রোববার (২৭ জুলাই) সংবাদমাধ্যম সিএনএন এ তথ্য জানিয়েছে।
জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের শান্তির আহ্বান সত্ত্বেও এই সংঘাত থামছে না। দুই পক্ষই একে অপরকে সংঘর্ষ শুরু করার জন্য দায়ি করছে।
কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানান, থাইল্যান্ড ড্রোন, ট্যাংক, ক্লাস্টার বোমা ও বিমান হামলার মাধ্যমে কম্বোডিয়ার বিভিন্ন স্থানে আঘাত হানে। এর কিছু অংশ কম্বোডিয়ার উত্তরাঞ্চলের ঐতিহাসিক প্রেয়াহ বিহার মন্দিরের কাছে পড়ে, যা ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান।
যুদ্ধবিরতির আহ্বান ও ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি
শনিবার (২৬ জুলাই) ট্রাম্প ঘোষণা দেন, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনায় বসতে সম্মত হয়েছে এবং যুদ্ধ বন্ধ না হলে উভয় দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য চুক্তি ঝুঁকির মুখে পড়বে।
তিনি জানান, আমি উভয় দেশের সরকার প্রধানদের সঙ্গে কথা বলেছি এবং তারা সম্মত হয়েছেন দ্রুত যুদ্ধবিরতি ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে।
এর আগে ট্রাম্প কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের রপ্তানি পণ্যের ওপর ৩৬ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন, যা আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার কথা।
দুই দেশের অবস্থান
থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, তারা এখনই সামরিক অভিযান থামাতে প্রস্তুত নয়। কম্বোডিয়া বেসামরিক এলাকায় ভারী গোলাবর্ষণ চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছে তারা।
থাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, যতক্ষণ না মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের লঙ্ঘন বন্ধ হচ্ছে, যুদ্ধবিরতির কোনো সুযোগ নেই।
অন্যদিকে, কম্বোডিয়ার লেফটেন্যান্ট জেনারেল মালি সোচেতা বলেন, যুদ্ধবিরতির চেষ্টা সত্ত্বেও থাইল্যান্ড ইচ্ছাকৃতভাবে আগ্রাসন চালাচ্ছে। আমাদের বাহিনী সক্রিয় প্রতিরোধ গড়ে তুলছে এবং নিজেদের ভূখণ্ড রক্ষায় নির্ভীকভাবে লড়ছে।
ক্ষয়ক্ষতি ও বাস্তুচ্যুতি
থাইল্যান্ড বলছে, সংঘর্ষে তাদের ১৯ জন নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। ১ লাখ ৩৮ হাজারের বেশি মানুষকে ৬টি প্রদেশ থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে কাম্বোডিয়া জানিয়েছে, তাদের ১৩ জন নিহত হয়েছে, যার মধ্যে ৮ জন বেসামরিক। ওড্ডার মিনচে প্রদেশে কমপক্ষে ৮০ হাজার মানুষ ঘরছাড়া হয়েছে।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও দ্বন্দ্বের পেছনের কারণ
থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সম্পর্ক আগে ঘনিষ্ঠ ছিল, বিশেষ করে দুই সাবেক নেতা হুন সেন (কম্বোডিয়া) এবং থাকসিন সিনাওয়াত্রা (থাইল্যান্ড) এর ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে। বর্তমানে উভয়েই ক্ষমতায় না থাকলেও রাজনৈতিকভাবে যথেষ্ট প্রভাবশালী।
সম্প্রতি থাকসিনের কন্যা থাই প্রধানমন্ত্রী পায়েতংতার্ন ও হুন সেনের মধ্যে ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়। থাই রাজনীতিতে তা ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি করে এবং প্রধানমন্ত্রীকে আদালত সাময়িক বরখাস্ত করে।
হুন সেন পরে ফেসবুকে থাকসিনকে কটাক্ষ করে বলেন, “এই যুদ্ধের চূড়ান্ত ফলাফল জনগণের দুর্ভোগ।”
মধ্যস্থতায় ট্রাম্প ও মালয়েশিয়া
ট্রাম্পের পাশাপাশি মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমও যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছেন। কম্বোডিয়া জানিয়েছে, তারা মালয়েশিয়ার প্রস্তাব আগে থেকেই গ্রহণ করেছে। তবে থাইল্যান্ড আরও সরলতা ও আন্তরিকতা দেখতে চায় কম্বোডিয়ার পক্ষ থেকে।
উল্লেখ্য, এই সীমান্ত বিবাদ শত বছরের পুরনো, যা ফরাসি ঔপনিবেশিক আমলে নির্ধারিত সীমারেখা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিরোধের সূচনা করে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সামাজিক মাধ্যম এক্সে এক পোস্টে উভয় দেশকে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে এবং আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ মেটানোর আহ্বান জানিয়েছেন।