ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনায় আস্থা নেই গাজাবাসীর

Google Alert – সশস্ত্র

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে তীব্র সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার বাসিন্দারা। যুদ্ধ বন্ধ হবে, রক্তপাত থেমে যাবে, চোখের সামনে প্রিয়জনের লাশ দেখতে হবে না আর, একবেলার খাবার জোগাতে হাঁটতে হবে না মাইলের পর মাইল, ওষুধ-চিকিৎসার অভাবে হাসপাতালের মেঝেতে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ার দিন শেষ হবে, ছায়ার মতো তাড়া করে ফেরা মৃত্যু-আতঙ্কের দিন উড়ে যাবে-চোখের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সেই চরম সত্যটিকে কিছুতেই বিশ্বাসের ঘরে ঠাঁই দিতে পারছেন না গাজাবাসী। দশকের পর দশক পশ্চিমা ষড়যন্ত্রে পোড় খাওয়া বিশ্বের উন্মুক্ত কারাগারের এ কয়েদিদের একেবারেই আস্থা নেই ইসরাইলপন্থি বিশ্বনেতৃত্বে। সোমবার হোয়াইট হাউজের যৌথ ভাষণে যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের ২০ দফা ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় সেই সত্যটিই বেরিয়ে এসেছে গজাবাসীর মুখ থেকে। তাদের বিশ্বাস, প্রস্তাবটি বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন, ইসরাইলের হাত থেকে মুক্তির সুনির্দিষ্ট কোনো নিশ্চয়তা নেই। আলজাজিরা, এএফপি।

দক্ষিণ গাজার আল-মাওয়াসি আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ৩৯ বছর বয়সি ইব্রাহিম জুদেহ এএফপিকে বলেছেন, ‘এটা স্পষ্ট যে এই পরিকল্পনাটি অবাস্তব। এটি এমন শর্ত দিয়ে তৈরি করা হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল জানে যে হামাস কখনোই মেনে নেবে না।’ উত্তর গাজা থেকে বাস্তুচ্যুত ৫২ বছর বয়সি আবু মাজেন নাসর বলেছেন, ‘সবই কারসাজি। কোনো যুদ্ধ সমাপ্তির সরকারি নিশ্চয়তা ছাড়াই বন্দি হস্তান্তরের অর্থ কী? জনগণ এই ভণ্ডামি মেনে নেবে না।’ কেন্দ্রীয় গাজায় আশ্রয় নেওয়া ২৯ বছর বয়সি নাজওয়া মুসলিম বলেছেন, ‘আমি শুধু এই চুক্তির ওপরই নয়, জীবনের ওপর থেকেও বিশ্বাস হারিয়েছি। যদি সত্যিই যুদ্ধ থামানোর ইচ্ছা থাকত, এত দেরি হতো না।’ হোয়াইট হাউজে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকের পর সোমবার ২০ দফা পরিকল্পনা ঘোষণা করেন ট্রাম্প। যেখানে নেতৃত্ব দেবেন ট্রাম্প নিজেই। পরিকল্পনায় স্পষ্ট করা হয়েছে, গাজার প্রশাসনে হামাস বা অন্য কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠীর কোনো ভূমিকা থাকবে না। এ উদ্যোগকেই প্রতারণা বলেই মনে করছেন গাজাবাসী। এদিকে এ পরিকল্পনা নিয়ে বেশ আশাবাদী ইসরাইলের বাসিন্দারা।

২০ দফার মূল বিষয়

১. গাজাকে সন্ত্রাসমুক্ত করা হবে।

২. জণগণের জন্য গাজা পুনর্গঠন করা হবে।

৩. উভয় পক্ষ রাজি হলে যুদ্ধ সঙ্গে সঙ্গেই শেষ হবে।

৪. চুক্তি মানার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সব জিম্মিকে মুক্তি।

৫. যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত ২৫০ ফিলিস্তিনি ও আটক ১,৭০০ গাজাবাসীকেও মুক্তি।

৬. যেসব হামাস সদস্য শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান মেনে অস্ত্র ত্যাগ করবে, তারা সাধারণ ক্ষমা পাবেন।

৭. চুক্তি মেনে নিলেই গাজায় পুরোপুরি মানবিক সহায়তা প্রবেশ করবে।

৮. জাতিসংঘ, রেড ক্রিসেন্ট সহায়তা করবে। রাফাহ সীমান্ত খোলা হবে।

৯. সাময়িকভাবে একটি ফিলিস্তিনি টেকনোক্র্যাট কমিটির হাতে থাকবে, কমিটির প্রধান ডোনাল্ড ট্রাম্প ও সদস্য টনি ব্লেয়ার।

১০. গাজায় বৈশ্বিক বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ করা হবে।

১১. বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে শুল্ক প্রবেশাধিকারের বিষয়ে আলোচনা।

১২. কাউকে গাজা ছাড়তে বাধ্য করা হবে না।

১৩. হামাস গাজার প্রশাসনে অংশ নেবে না। তাদের অস্ত্র কারখানা ধ্বংস করা হবে।

১৪. হামাসের প্রতিশ্রুতির নিশ্চয়তা দেবে আঞ্চলিক অংশীদাররা।

১৫. গাজার জন্য অস্থায়ী বাহিনী ‘ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাবিলাইজেশন ফোর্স (আইএসএফ)’ গঠন।

১৬. ইসরাইল গাজা দখল বা সংযুক্ত করবে না।

১৭. হামাস পরিকল্পনায় রাজি না হলে দখলকৃত স্থানগুলো আইএসএফ-এর হাতে তুলে দেওয়া হবে।

১৮. গাজায় সহনশীলতা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ভিত্তিতে একটি আন্তঃধর্মীয় সংলাপ চালু।

১৯. সংস্কার প্রক্রিয়া বাস্তবায়িত হলে ফিলিস্তিনের আত্মনিয়ন্ত্রণ ও রাষ্ট্র গঠিত হবে।

২০. যুক্তরাষ্ট্র ভবিষ্যতে শান্তির জন্য ইসরাইল ও ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংলাপ করবে।

পরিকল্পনার ভালো, খারাপ ও কুৎসিত দিক

ভালো দিক : ১. ইসরাইল গাজা দখল বা সংযুক্ত করবে না। ২. গাজা থেকে কাউকে জোর করে তাড়ানো হবে না। ৩. যারা গাজার বাইরে যাবে, তারা ফেরার অধিকার পাবে। ৪. গাজায় জাতিসংঘের মাধ্যমে অবাধে ত্রাণ ঢুকবে। ৫. ইসরাইল যে বিকল্প সংস্থা চাপাতে চেয়েছিল, তা ব্যর্থ হবে।

খারাপ দিক : ১. নতুন সংস্থা ‘বোর্ড অব পিস’ নেতৃত্বে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র। ২. টনি ব্লেয়ারের ইসরাইলপন্থি মনোভাব গাজার জন্য ক্ষতিকর। ৩. দুর্নীতিও অপরাধচক্রের সক্রিয়তার ভয়। ৪. প্রতিরোধগোষ্ঠী হামাস নিরস্ত্র হবে। ৫. আত্মরক্ষার সুযোগ থাকবে না।

কুৎসিত দিক : ১. বারবার যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ হলেও যুক্তরাষ্ট্র চুপ থেকেছে। ২. এবারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। ৩. যুক্তরাষ্ট্র পক্ষপাতদুষ্ট। ৪. এই পরিকল্পনা কেবল প্রতিরোধকে দুর্বল করার ফাঁদ।

হামাসকে ৩-৪ দিনের সময় দিলেন ট্রাম্প : ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার জবাব দেওয়ার জন্য হামাসকে তিন থেকে চার দিনের সময় বেঁধে দিলেন ট্রাম্প। মঙ্গলবার হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এই হুঁশিয়ারি দেন ট্রাম্প। বলেন, ‘আমি হামাসকে ৩-৪ দিন সময় দিচ্ছি। বাকি সব পক্ষ এতে সই করেছে, শুধু হামাসের সিদ্ধান্ত বাকি। সব আরব দেশ এতে রাজি, মুসলিম দেশগুলো রাজি, ইসরাইল রাজি শুধু হামাসকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যদি না নেয়, তাহলে এর পরিণতি হবে অত্যন্ত দুঃখজনক।’

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *