Google Alert – সামরিক
ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভাষায় দুনিয়ার ‘ট্যারিফ কিং’ বা ‘শুল্ক বসানোর রাজা’ ভারতের ওপর বুধবার ২৫ শতাংশ হারে পাল্টা শুল্ক-আর তার ওপর তথাকথিত ‘রাশিয়া পেনাল্টি’- এ হুকুম জারির কিছুক্ষণের মধ্যেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট পাকিস্তানের সঙ্গে বিরাট এক জ্বালানি সমঝোতার কথা জানান। পাকিস্তানের ‘বিপুল খনিজ তেলের রিজার্ভ’ সদ্ব্যবহার করতে আমেরিকা যে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে, ঘোষণা করেন সে কথাও।
নিজের ট্রুথ সোশ্যাল অ্যাকাউন্ট থেকে এটাও লিখতে ভুললেন না- ‘কে জানে, একদিন হয়তো দেখা যাবে এ পাকিস্তান ভারতেও তেল বিক্রি করছে!’ অথচ ২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম দফার মেয়াদে এ পাকিস্তান সম্বন্ধেই তিনি মন্তব্য করেছিলেন, ‘এরা আমাদের মিথ্যে আর ধোঁকা ছাড়া কিছুই দেয়নি।’ কিন্তু এই দ্বিতীয় মেয়াদে এসে সেই অবস্থান থেকে তিনি শুধু ‘ইউটার্ন’-ই করেননি, ইসলামাবাদের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক দিনদিন ক্রমেই আরও ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। তার পাশাপাশি দিল্লিকে ‘খোঁচা’ দেওয়ার কোনো সুযোগই যেন ট্রাম্প ছাড়তে চাইছেন না! এ ধারাবাহিকতাতেই তিনি বুধবার জানিয়েছেন, পাকিস্তানের বিপুল তেল সম্পদ যৌথভাবে বিকশিত করার জন্য তাদের দুই দেশ সমঝোতায় পৌঁছেছে এবং কোন মার্কিন কোম্পানি এ পার্টনারশিপে নেতৃত্ব দেবে, সেটাও এখন বাছাই করার কাজ চলছে। জ্বালানি খাতের এ সমঝোতা সাম্প্রতিক পাক-মার্কিন সম্পর্কের ডায়নামিক্সে সবশেষ সংযোজন, যদিও পাকিস্তানে এ তেলের রিজার্ভ ঠিক কোথায় সেটা ট্রাম্প কিছু ভেঙে বলেননি। ভূরাজনীতির পর্যবেক্ষকরা অবশ্য এ সম্পর্কের গতিপ্রকৃতি দেখে বলছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে ইসলামাবাদের যে একটা নতুন সমীকরণ তৈরি হচ্ছে, তাতে কোনো ভুল নেই। এ জ্বালানি সমঝোতার ঘোষণাও এমন একটা সময়ে এলো, যখন পাকিস্তান ও আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি নিয়েও আলাপ-আলোচনা চলছে। সম্প্রতি পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশহাক দার তার মার্কিন কাউন্টারপার্ট মার্কো রুবিও-র সঙ্গে দেখা করার পরে জানিয়েছিলেন, দুই পক্ষ চুক্তির ‘খুব কাছাকাছি’ পৌঁছে গেছে এবং দিনকয়েকের মধ্যেই তা চূড়ান্ত হয়ে যাবে। কিন্তু পাকিস্তানের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ও প্রতিবেশী ভারতের জন্য এর অর্থ কী? ঘটনাপ্রবাহ যেভাবে মোড় নিচ্ছে তাতে কি ভারতের বিচলিত হওয়ার কারণ আছে?
মার্কিন জেনারেলকে পাকিস্তানের সামরিক সম্মান : তবে এ তেল সমঝোতা বা সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তির বাইরেও এমন অনেক লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, যা থেকে পরিষ্কার ইসলামাবাদ এবং ওয়াশিংটন পরস্পরের কাছাকাছি আসতে চাইছে। মাত্র কয়েক দিন আগেই মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের (ইউএসসেন্টকম) প্রধান জেনারেল মাইকেল কুরিলাকে পাকিস্তান তাদের অন্যতম শীর্ষ সামরিক খেতাব, ‘নিশান-ই-ইমতিয়াজে’ ভূষিত করেছে। বলা হয়েছে, আঞ্চলিক শান্তির প্রসার এবং পাক-মার্কিন সামরিক সম্পর্কে তার অবদানের স্বীকৃতিতেই এ সম্মান অর্পণ করা হলো। -বিবিসি
তবে এ পদক্ষেপ যে আমেরিকার প্রতি পাকিস্তানের একটা স্ট্র্যাটেজিক বার্তা, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ইসলামাবাদে প্রেসিডেন্টের প্রাসাদে এক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে জেনারেল কুরিলাকে এ খেতাব তুলে দেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি। এ অনুষ্ঠানের কয়েক সপ্তাহ আগেই জেনারেল মাইকেল কুরিলা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইতে পাকিস্তানকে ‘ফেনোমেনাল পার্টনার’ বা অসাধারণ এক সঙ্গী বলে বর্ণনা করেছিলেন। ফলে সামরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রেও দুই দেশ এখন আবার কাছাকাছি আসছে- যে ইঙ্গিত পরিষ্কার।