চ্যানেল আই অনলাইন
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যকার বৈঠকে ইউক্রেন যুদ্ধসংক্রান্ত উচ্চপর্যায়ের আলোচনায় উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি না হলেও বেশ কিছু সম্ভাবনার ইঙ্গিত মিলেছে।
আজ (১৯ আগস্ট) মঙ্গলবার প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, বৈঠকে অংশ নিতে ইউরোপের শীর্ষ নেতারাও হাজির ছিলেন ওয়াশিংটনে। বৈঠকে উঠে এসেছে যুদ্ধবিরতি, নিরাপত্তা নিশ্চয়তা ও ভবিষ্যৎ শান্তি আলোচনার বিভিন্ন দিক।
পুতিন-জেলেনস্কি বৈঠকের ইঙ্গিত
বৈঠকের পর ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে জানান, তিনি পুতিনকে ফোন করে একটি সরাসরি বৈঠকের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন, যাতে তিনি নিজেও যুক্ত হয়ে ত্রিপাক্ষিক আলোচনার আয়োজন করতে পারেন।
পরে ক্রেমলিনের উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ জানান, পুতিন ও ট্রাম্পের মধ্যে প্রায় ৪০ মিনিটের ফোনালাপ হয়েছে।
তবে পুতিন-জেলেনস্কি মুখোমুখি বৈঠকের সম্ভাবনা এখনও অনিশ্চিত। ক্রেমলিন একাধিকবার এমন বৈঠকের প্রস্তাব নাকচ করেছে।
যুদ্ধবিরতির প্রশ্নে মতবিরোধ
বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আমি জানি না এটা (যুদ্ধবিরতি) দরকার আছে কি না।
অন্যদিকে ইউরোপীয় নেতারা স্পষ্টভাবে যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। সবচেয়ে জোরালো বক্তব্য দেন জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মার্জ। তিনি বলেন, আমি কল্পনাও করতে পারি না, পরবর্তী বৈঠক যুদ্ধবিরতি ছাড়া হবে। আমাদের এটি নিয়ে কাজ করতে হবে এবং রাশিয়ার ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে।
জেলেনস্কি নিজেও এ প্রসঙ্গে আগের মতো জোর দেননি, তবে কিছুটা কূটনৈতিক ভাষায় বিষয়টি এড়িয়ে যান।
নিরাপত্তা নিশ্চয়তা ও অস্ত্রচুক্তি
বৈঠকে ট্রাম্প ইউক্রেনের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তার আশ্বাস দেন। যদিও তিনি মার্কিন সেনা মোতায়েনের বিষয়ে নিশ্চিত কোনো অবস্থান জানাননি, তবে সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি। তিনি বলেন, আমরা জোরদার সুরক্ষা দেব।
জেলেনস্কি জানান, নিরাপত্তা নিশ্চয়তার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ৯০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্রচুক্তি হবে। এতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ প্রযুক্তি এবং অন্যান্য গোপন অস্ত্র।
যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনীয় ড্রোন কিনবে, যা দেশটির নিজস্ব ড্রোন উৎপাদন খাতে অর্থায়ন করবে এবং আগামী ১০ দিনের মধ্যে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা বিষয়ে বিস্তারিত চূড়ান্ত হবে বলেও জানান তিনি।
জেলেনস্কির কূটনীতি
গত ফেব্রুয়ারিতে ওভাল অফিসে সফরের সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশে ঘাটতির অভিযোগে সমালোচিত হয়েছিলেন জেলেনস্কি। এবার সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে তিনি শুরুতেই ছয়বার ‘ধন্যবাদ’ শব্দটি উচ্চারণ করেন।
এছাড়া তিনি এবার সামরিক পোশাকের পরিবর্তে গাঢ় রঙের স্যুট পরেন, যা নিয়ে আগেরবার ট্রাম্প কটাক্ষ করেছিলেন। এই সফরে তিনি ট্রাম্পের স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্পের উদ্দেশে ইউক্রেনের ফার্স্ট লেডির লেখা একটি চিঠিও হস্তান্তর করেন।
ইউরোপীয় নেতাদের কৌশলী অবস্থান
বৈঠকের আগে ইউরোপীয় নেতারা ট্রাম্পকে প্রশংসায় ভাসিয়ে আলোচনা এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। ন্যাটো প্রধান মার্ক রুটে বলেন, আপনার নেতৃত্বের জন্য ধন্যবাদ।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলেন, আগে যখন মনে হচ্ছিল রাশিয়া শান্তির পথে নেই, এখন ট্রাম্পের কারণে কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে।
তবে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ জোর দিয়ে বলেন, যখন আমরা নিরাপত্তা নিশ্চয়তার কথা বলি, তখন ইউরোপের সামগ্রিক নিরাপত্তার কথাও বলি।