Google Alert – সেনাবাহিনী
একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার নাম ভাঙ্গিয়ে জামালপুরের মাদারগঞ্জের পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খালেদ মাসুদ তালুকদার সোহেলের চাঁদাবাজির স্বীকারোক্তিমূলক একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
সোমবার (১৮ আগস্ট) রাতে বিভিন্ন পেইজ ও প্রোফাইল থেকে ছড়িয়ে পড়ায় অডিওটি বর্তমানে জেলা ছাড়িয়ে এখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’তে পরিণত হয়েছে।
দলের সাধারণ সম্পাদক হয়ে তার এমন কাণ্ডে নেটিজনদের তীব্র সমালোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এদিকে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে মাদারগঞ্জ বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে।
ভাইরাল হওয়া ৬ মিনিট ১০ সেকেন্ড অডিওতে ৩/৪ জনের কথোপকথনে শোনা যায়, এক ব্যবসার থেকে ১০ লাখ টাকার মধ্যে ৬ লাখ টাকা দিছে। আর তা ছাড়া ‘প্রতি মাসে ১ লাখ করে টাকা দেয়। এদিকে আরেকজন বলে উঠে, তুমি তো ডিআইজির নামসহ পচায় ফেলছো; এর উত্তরে বিএনপি নেতা খালেদ মাসুদ তালুকদার সোহেল বলেন, ডিআইজির নাম কইয়াইতো খাই আমি।
এরপর হাসি তামাশা করে বিএনপি নেতা আরও বলেন, আমি পৌর বিএনপির সেক্রেটারি আর ডিআইজির বইনতে (বোন জামাই) আমি খাব না তাইলে কেরা খাব। এখন অনেকেই এসে বলে ভাই এইল্লা দেইখেন, তারপর আরেকজন ২ লাখ টাকা দিয়ে গেছে দেখবার জন্য, আমি দেখলাম। আমার ২ লাখ টাকা হজম হলো না?
এদিকে তার এমন কথাতে আরেকজন বলে উঠলো, তুমি পৌর বিএনপি সেক্রেটারি তুমি। খাও এটা কি মানুষে জানে না কবার চাও? উত্তরে বিএনপি নেতা বলে, আমার অতহানি ক্ষমতা আছে তো তাই আমি খাই। তোমার নাই তুমি খাবার পাওনা। হাসি আড্ডার মধ্যে তিনি আবারও বলে উঠল, ভাই, আমার কি দোষ। ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থেকে ওসি আসছে; বলে ভাই, ২ লাখ টাকা থাকল-একটু দেইখেন। আমি ২ লাখ টাকা নিয়ে ওরে ভালো করে দেখলাম। শেষ! ওসিরা আমাক টাকা দিয়ে গেলে কি আমি না করমু?
এদিকে হেসে আরেক নেতা বলে উঠে, সুযোগ কি বার বার আসে? সে সময় বিএনপি নেতা আবারও বলেন, আমি হালাল করেই খাই। যে মনে করেন, আমায় ৬ লাখ টাকা দিছে, সে প্রতিমাসে আমায় ১ লাখ করে টাকা দেয় নইলে গাড়ী বন্ধ। ময়মনসিংহ এর সব বালু আমার এখান থাইকা নিয়ে যায়।
সে সময় আরেক নেতা বলে উঠল, এগুলা সব বাবুল ভাই জানে? তিনি উত্তরে রাগান্বিত হয়ে বলে উঠল, বাবুল জানুকগা থাইকা বাবুলের বাপ জানুকগা তা আমার কি? আমি আমার হেডামে চলি। আমি বাবুলের হেডামে কি আটকায়ছি। আমার ক্ষমতায় আমি আটকায়ছি। আমার নাম কইয়া চান্দা তুলবার গেছিল ৩ টারে আটকায় থুইছি জেল খানার মধ্যে। আমার ক্ষমতা আছে আমি আটকামু না কি করমু। আজ ক্ষমতা আছে আজ দেখামু, কাল থাকব না কাল দেখামু না। অডিওতে আরও শুনা যায় বিএনপি নেতার কণ্ঠে খামুই তো।
এদিকে আরেক কর্মী বলে উঠল, আপনি তো সোহেল না একটা সংগঠন এর সেক্রেটারি। উত্তরে তিনি বলে উঠলেন, বহিষ্কার করে দাও। ক্ষ্যাম থাকলে চান্দাবাজি করবার লাগছে, ধান্দাবাজি করবার লাগছে বলে বহিষ্কার করে দাও।
এদিকে আরেক কর্মী বলে উঠে, সেদিন আমাগোরে মুখলেসে ধরছে বলে সোহেলের নাম তো সেনাবাহিনীর কাছে আমাদের কাছে রিপোর্ট আইছে। পরে বিএনপি নেতা উত্তর দিয়ে বলে উঠে, কয় সেনাবাহিনী তো আমাক কোনোদিন ডাকে না। আমার বিরুদ্ধে সরাসরি সেনাবাহিনীর কাছে অভিযোগ দিয়েনছে। কয়েকজনে দিছে। কয় সেনাবাহিনী তো আমাক কোনোদিন ডাহে না। আরেকজনে বলে উঠলো, তুমি নিজেই স্বীকার করছ ভাই সব এর জন্য ধন্যবাদ। এটা শুনেই বিএনপি নেতা বলে উঠল আমি ৫ লাখ টাকার গাড়ীতে চড়ি আপনি ঠাপুর পান না।
এলাকাবাসী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, তিনি (সোহেল তালুকদার) গত বছর আগস্ট থেকে চাঁদাবাজির টাকায় তিনি অল্প দিনেই জামালপুরে প্লট, ঢাকায় ফ্লাট, ব্যাংকে কয়েক কোটি এফডিআর করে রেখেছেন। এ ছাড়া তিনি নামে বেনামে টাকা রেখেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সোহেল তালুকদারের বিরুদ্ধে সমবায় সমিতির পরিচালক ও মালিকদের কাছ থেকে কোটি টাকা নিয়ে তিনি পুলিশি হয়রানী থেকে বাঁচিয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে, তার জন্য সমবায় সমিতির গ্রাহকরা বঞ্চিত হয়। সে জুয়া ও মাদক ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত বলে অভিযোগ আছে।
পৌর ও উপজেলা বিএনপির একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন তার মতো চাঁদাবাজ নেতা কমিটিতে থাকলে দল জনবিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। এই নেতা এখন এলাকায় চান্দা ভাই বলে পরিচয় লাভ করেছে। তাকে দল থেকে দ্রুত বহিষ্কার করার দাবী জানিয়েছেন।
অভিযুক্ত মাদারগঞ্জ পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খালেদ মাসুদ তালুকদার সোহেল স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, তার দলের একজন ( সভাপতি আ. গফুর) এ সব অপপ্রচার চালাচ্ছে।
এ বিষয়ে মাদারগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি এডভোকেট মঞ্জুর কাদের বাবুল খান জানান, আমি এখনো তেমন কিছু দেখিনি বা শুনিনি। আগেই মন্তব্য করা উচিৎ হবে না।
এ ব্যাপারে মাদারগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ সাইফ বলেন, এ বিষয়ে আমি কোনো অভিযোগ পায়নি। অভিযোগ পেলে সে যেই হোক না কেন আইনের আওতায় আনা হবে।