Google Alert – সামরিক
ইসরায়েল চলতি বছরের ডিসেম্বরের আগেই ইরানের সঙ্গে নতুন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে। এমনকি চলতি আগস্টের শেষ দিকেই তেল আবিব বড় ধরনের সামরিক অভিযান শুরু করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িকী ফরেন পলিসি। ইরানও এ ধরনের হামলার আশঙ্কা থেকে নিজেকে প্রস্তুত করছে।
বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, গত জুন মাসের যুদ্ধে ইরান দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নিয়ে ধীরে ধীরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল। তবে এবার তেহরান শুরু থেকেই শক্তিশালী ও নির্ণায়ক আঘাত হানতে পারে। তাদের প্রধান লক্ষ্য হবে—‘ইসরায়েলের সামরিক আধিপত্য অপ্রতিরোধ্য’—এমন ধারণা ভেঙে দেওয়া। এতে নতুন সংঘাত আগের তুলনায় অনেক বেশি রক্তক্ষয়ী ও প্রাণঘাতী হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
ফরেন পলিসির মতে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি ইসরায়েলের চাপে পড়ে আবারও যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন, তবে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সঙ্গে এমন এক পূর্ণাঙ্গ সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে, যার তুলনায় ইরাক যুদ্ধকেও ওয়াশিংটনের কাছে সহজ বলে মনে হবে।
ইসরায়েলের লক্ষ্য জুনের যুদ্ধ
গত জুন মাসে শুরু হওয়া ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ আসলে কেবল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস করার প্রচেষ্টা ছিল না। বরং ইসরায়েলের মূল লক্ষ্য ছিল মধ্যপ্রাচ্যের শক্তির ভারসাম্য নিজেদের পক্ষে পাল্টে দেওয়া। এজন্য তারা দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রকে চাপ দিয়ে আসছিল, যাতে ইরান দুর্বল হয় এবং ইসরায়েল আঞ্চলিক প্রভাব বজায় রাখতে পারে।
তখন ইসরায়েলের তিনটি বড় লক্ষ্য ছিল, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা দুর্বল করা; যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি যুদ্ধে টেনে আনা; ইরানের শাসকগোষ্ঠীকে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশটিকে সিরিয়া বা লেবাননের মতো দুর্বল রাষ্ট্রে পরিণত করা।
এর মধ্যে ইসরায়েল কেবল যুক্তরাষ্ট্রকে আংশিকভাবে সম্পৃক্ত করতে পেরেছিল। ট্রাম্প সীমিত আকারে বোমাবর্ষণ চালালেও পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে যেতে রাজি হননি। স্বল্পমেয়াদে এ সিদ্ধান্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখলেও দীর্ঘমেয়াদে যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনার এক চক্রে জড়িয়ে পড়ে।
আংশিক সাফল্য ও ব্যর্থতা
যুদ্ধ চলাকালে ইসরায়েল ইরানের অন্তত ৩০ জন জ্যেষ্ঠ কমান্ডার এবং ১৯ জন পারমাণবিক বিজ্ঞানীকে হত্যা করে। তবে এসব হত্যাকাণ্ড ইরানের কমান্ড কাঠামোকে মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্য ব্যাহত করতে পেরেছিল। দ্রুত বিকল্প কমান্ডার নিয়োগ দেওয়া হয় এবং ইরান পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, যা ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় গুরুতর ক্ষতি করে।
ইসরায়েল আশা করেছিল, এসব আঘাত ইরানের শাসকগোষ্ঠীর ভেতর বিভক্তি তৈরি করবে। এমনকি মোসাদের এজেন্টরা জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের ফোনে হুমকি দিয়েছিল বলে ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে। কিন্তু এসব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। বরং শাসকগোষ্ঠীর সংহতি আরও দৃঢ় হয় এবং সাধারণ ইরানিরা জাতীয়তাবাদের স্রোতে ঐক্যবদ্ধ হয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক নারগেস বাজোগলির ভাষায়, ‘আগে আমি সরকারের বিদেশে অতিরিক্ত ব্যয়ের বিরোধিতা করতাম, কিন্তু এখন বুঝতে পারছি আমাদের প্রতিরক্ষাই আসল। শক্ত প্রতিরক্ষা ছাড়া যুদ্ধ সরাসরি আমাদের ঘরে চলে আসে।’
ইসরায়েলের সীমাবদ্ধতা
জুনের যুদ্ধে ইসরায়েল ইরানকে সিরিয়ার মতো দুর্বল রাষ্ট্রে পরিণত করতে পারেনি। আংশিকভাবে ইরানের আকাশসীমা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেও তা স্থায়ী ছিল না। বরং ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েল দীর্ঘমেয়াদি ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়ে।
যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ছাড়া যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া ইসরায়েলের পক্ষে প্রায় অসম্ভব ছিল। উদাহরণস্বরূপ, মাত্র ১২ দিনের যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরবরাহ করা থাড ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ২৫ শতাংশ ব্যবহার করে ফেলে তেল আবিব।
সামনে কী অপেক্ষা করছে
এখন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ এবং সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইঙ্গিত দিয়েছেন, জুনের যুদ্ধ কেবল প্রথম ধাপ ছিল, এখন দেশটি ‘সংঘাতের নতুন অধ্যায়ে’ প্রবেশ করছে। তাদের মূল যুক্তি হলো, ইরানকে পুনরায় ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার গড়ে তোলা বা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করার সুযোগ দেওয়া যাবে না। এই যুক্তির ওপর দাঁড়িয়ে ইসরায়েলের পুরনো ‘ঘাস কাটা কৌশল’ আবারও সক্রিয় হতে পারে—অর্থাৎ প্রতিপক্ষকে বারবার আঘাত করে সামরিক সক্ষমতা গড়ে তোলার আগেই দুর্বল করে দেওয়া।
অন্যদিকে, ইরান এবার শুরুতেই ভয়াবহ ও নির্ণায়ক হামলা চালাতে পারে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি এক্স-এ লিখেছেন, ‘আবার আগ্রাসন হলে আমরা আরও কঠিন প্রতিক্রিয়া জানাবো, আর তা আড়াল করা সম্ভব হবে না।’
যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা
সবচেয়ে বড় প্রশ্ন এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অবস্থান। তিনি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে জড়াতে অনিচ্ছুক হলেও সীমিত হামলা চালিয়ে ইতোমধ্যে ইসরায়েলের ফাঁদে পা দিয়েছেন। মাত্র ১২ দিনের যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডারের দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। তাই এবার তার সামনে দুটি পথ খোলা—পুরোপুরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া বা একেবারে সরে দাঁড়ানো।
তবে সরে দাঁড়ানো মানে কেবল একবার অস্বীকার নয়; বরং ইসরায়েলের চাপে ধারাবাহিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। এখন পর্যন্ত ট্রাম্প সে ধরনের দৃঢ়তা দেখাতে পারেননি। ফলে আসন্ন কয়েক মাস মধ্যপ্রাচ্যে নতুন যুদ্ধের আশঙ্কা আরও প্রবল হয়ে উঠছে।