তিন স্পটেই সীমাবদ্ধ খাগড়াছড়ির পর্যটন

Google Alert – পার্বত্য চট্টগ্রাম

আজ বিশ্ব পর্যটন দিবস। দেশের অন্যতম পর্যটন সম্ভাবনাময় জেলা খাগড়াছড়ি। ‘আলুটিলা-রিছাং-গিরি বৈচিত্র্যময় খাগড়াছড়ি’ এই শব্দযুগলের মতো আলুটিলা-রিছাং ঝরনাতেই সীমাবদ্ধ খাগড়াছড়ির পর্যটন সম্ভাবনা। পাহাড়, উপত্যকা, ঝিরি অসংখ্যা ছোট-বড় ঝরনা, আলুটিলা রহস্যময় গুহাসহ বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্র নিয়ে বৈচিত্র্যময় খাগড়াছড়ি। আলুটিলার রহস্যময় সুড়ঙ্গ, রিছাং ঝরনা, খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ পার্কে মূলত পর্যটকদের ভ্রমণ গন্তব্য। এর বাইরে মানিকছড়ি ডিসি পার্ক ও মায়াবিনী কৃত্রিম লেকেই স্থানীয় দর্শনার্থীদের ভ্রমণ সীমাবদ্ধ। পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য পরিকল্পনাহীনতা, সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকা, পর্যাপ্ত প্রচারের অভাবে খাগড়াছড়ি ভ্রমণে এসে অনেকে হতাশ হন। খাগড়াছড়িতে ছোট-বড় দশটি ঝরনা থাকলেও সেখানে যাতায়াত ব্যবস্থা না থাকায় ঝরনার সৌন্দর্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন পর্যটকরা। বেড়াতে আসা পর্যটকদের গন্তব্য থাকে রাঙামাটির সাজেক পর্যটনকেন্দ্র। খাগড়াছড়ি হয়ে সাজেকে যাতায়াত করার কারণে জেলা শহরের হোটেল ও পরিবহণ খাত আর্থিকভাবে লাভবান হয়। তবে তা কাঙ্ক্ষিত নয় বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। জেলার পর্যটনকেন্দ্রগুলো বিকশিত হলে পর্যটকরা খাগড়াছড়িমুখী হবে বলে আশা তাদের।

খাগড়াছড়ির পর্যটন উদ্যোক্তা উজ্জ্বল দে বলেন, ‘খাগড়াছড়িতে যারা বেড়াতে আসেন তাদের ৯০ শতাংশ পর্যটকই সাজেকমুখী। ঢাকা বা দেশের অন্যান্য জেলা থেকে খাগড়াছড়ি পৌঁছানোর পর তারা এখানে প্রাতঃরাশ করে সাজেক চলে যায়। সাজেক থেকে ফেরার পর পর্যটকরা আলুটিলা-রিছাং ঝরনা ঘুরে পুনরায় ঢাকায় চলে যায়। এভাবেই চলছে খাগড়াছড়ি পর্যটন খাত! অথচ পুরো জেলায় বেশকিছু ঝরনা রয়েছে। সেগুলো ব্র্যান্ডিংয়ের কোনো উদ্যোগ নেই। ঝরনায় যাতায়াতের জন্য সড়ক নির্মাণ করলে পর্যটকরা ভ্রমণের সুযোগ পেত। পর্যটনকেন্দ্রের সংখ্যা বাড়লে পর্যটকরা বেড়ানোর সুযোগ পেত। এতে জেলায় পর্যটন খাত লাভবান হতো। লম্বা ছুটির দিনগুলোতে পর্যটকের সংখ্যা বাড়ে এবং তা সাজেককেন্দ্রিক। খাগড়াছড়িতে কেবল কার স্থাপন, ক্যাম্পিং জোন তৈরি করলে তা পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়বে। পর্যটন মৌসুমে প্রতি মাসে আমি অন্তত ৭ থেকে ৮ হাজার পর্যটকবে সেবা দিই। তাদের সবাই মূলত সাজেকের জন্য আসে।’

খাগড়াছড়িতে পর্যটনকেন্দ্র কম থাকায় হতাশ পর্যটকরাও। সম্প্রতি খাগড়াছড়ির আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্রে বেড়াতে আসা পর্যটক জুলফিকার আলীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘দেখেন আমি আরও সাত বছর আগে খাগড়াছড়ি বেড়াতে এসেছি। তখন আলুটিলা, রিছাং ঝরনা আর জেলা পরিষদ পার্কে বেড়িয়েছি। এখনো এগুলোই আছে। আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্রের অনেক উন্নয়ন হয়েছে এটা সত্য। তবে পুরো জেলায় বেড়ানোর মতো স্পট আছে কম। খাগড়াছড়িতে যে বেড়াব সে রকম কোনো নতুন জায়গাই তো নেই।’ আরেক পর্যটক নীলুফার তাহিয়া বলেন, ‘পরিবার নিয়ে বেড়াতে এলাম। সাজেক ছিলাম এক রাত। খাগড়াছড়িতেও রাতযাপনের ইচ্ছা ছিল। কিন্তু বিকালের মধ্যে সব স্পট ঘোরা শেষ। তাই এখানে থাকব না। সন্ধ্যায় রাঙামাটি চলে যাব। যদি পর্যটনকেন্দ্রের সংখ্যা বেশি থাকত। মানুষ বেড়ানোর সুযোগ পেত।’

পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন ঝরনায় ঘুরে বেড়ানো পর্যটক আল কাদেরি বলেন, ‘খাগড়াছড়ি পুরো জেলায় বেশকিছু ঝরনা রয়েছে। এর মধ্যে তৈদুছড়া, শিলাছড়ি, তুয়ারি মাইরাং, তৈছামা অন্যতম। তবে এসব নয়নাভিরাম ঝরনায় যাতায়াতের সড়ক যোগাযোগ নেই। তরুণরা ট্রেকিং করে যেতে পারলে সব বয়সি মানুষের পক্ষে সেটা সম্ভব নয়। খাগড়াছড়িতে ঝরনাকেন্দ্রিক পর্যটনশিল্প গড়ে তুলতে পারলে স্থানীয় পর্যটনশিল্প বিকশিত হবে।’

খাগড়াছড়ি পর্যটন মোটেলের ইনচার্জ উত্তম কুমার মজুমদার বলেন, ‘খাগড়াছড়িতে এখন পর্যটনকেন্দ্রের সংখ্যা খুবই কম। এখানে পর্যটকরা রাতযাপন করতে চায় না। নতুন নতুন ট্যুরিস্ট স্পট বাড়ালে পর্যটক সংখ্যা আরও বাড়বে।’

খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার বলেন, ‘আমরা জেলার পর্যটনশিল্পের উন্নয়নের অংশীজনদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করেছি। সভায় বেশকিছু প্রস্তাব উঠে এসেছে, সেগুলো নিয়ে কাজ করছি। যেহেতু খাগড়াছড়িতে বেশকিছু ঝরনা রয়েছে সেগুলো যাতায়াতের রাস্তা কীভাবে করা যায়। সেই প্রক্রিয়াও চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে রিছাং ঝরনা পর্যন্ত পাকা কার্পেটিংয়ের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে। যাতায়াত আগের চেয়ে সহজ হয়েছে। এছাড়া রিছাং ঝরনার পাশেই আরেকটা ঝরনা আছে। সেটাতে যাওয়ার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এছাড়া দীঘিনালার তৈদুছড়া ঝরনায় যাতায়াতের জন্য একটি পাকা কার্পেটিং সড়কের প্রকল্প এলজিইডি বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পটি বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্রটি পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করার জন্য কাজ চলছে।’

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *