Samakal | Rss Feed
তিস্তা পরিকল্পনা থেকে খাল খনন—নদী রক্ষায় নানা উদ্যোগ
বাংলাদেশ
সমকাল প্রতিবেদক 2025-08-09
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর গত এক বছরে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় নদী দখল, দূষণমুক্ত পানি প্রবাহ পুনরুদ্ধার, বন্যা ও ভাঙনরোধ, জলাবদ্ধতা নিরসন এবং পানি ব্যবস্থাপনায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা—সব ক্ষেত্রেই একাধিক গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেছে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এক বছরের অগ্রগতির এসব তথ্য গণমাধ্যমকে জানিয়েছে।
মন্ত্রণালয় জানায়, দেশের সব জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে অন্তত একটি করে নদী দখল ও দূষণমুক্ত করার কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ১৩টি পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়েছে, যার মধ্যে দেশের সবচেয়ে দূষিত নদী লবণদহ, সুতাং ও হাড়িধোয়া রয়েছে। এ তিন নদীর প্রথম পর্যায়ের প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে, বর্ষার পরপরই কাজ শুরু হবে।
আরও জানানো হয়, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে ১৯৯২ সালের ওয়াটার কনভেনশনে সই করেছে, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। নদ-নদীর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ, সুন্দরবন ও পার্বত্য এলাকার নদীর জরিপ এবং হাওরের তালিকা প্রণয়ন—এসব উদ্যোগকে তথ্যভিত্তিক পানি ব্যবস্থাপনার নতুন মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ভাঙনরোধে স্থানীয় জনগণের চাহিদা বিবেচনায় জরুরি মেরামতের আবেদন দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। বড়াল নদীর চারঘাট ও আটঘরিয়া এলাকায় স্লুইসগেট অপসারণ করে পানি প্রবাহ ফিরিয়ে আনা হয়েছে। বগুড়ায় করতোয়া নদীর দখলদার উচ্ছেদ করে নদীর প্রবাহ পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। মগড়া নদীর উৎসমুখের রেগুলেটর সরিয়ে সেখানে বেইলি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে।
লবণদহ, হাড়িধোয়া ও সুতাং নদীর দখলমুক্ত ও দূষণ নিয়ন্ত্রণে কাজ চলছে। রংপুরের শ্যামাসুন্দরী খাল ও গাজীপুরের গাছা খাল পুনরুদ্ধারে প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। তুরাগ নদী ও গোড়ান-চটবাড়ি রিটেনশন পয়েন্ট পুনরুদ্ধারে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় পাইলট প্রকল্প চূড়ান্ত হয়েছে, যা প্রশাসনিক অনুমোদনের অপেক্ষায়।
তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে চীনের সহায়তায় প্রকল্প নকশা প্রণয়ন করা হয়েছে। যেখানে স্থানীয় জনগণ ও বিশেষজ্ঞদের মতামত অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ভাঙনরোধে ২৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৩ কিলোমিটার এলাকায় বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। ভবদহ এলাকার দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা নিরসনে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১৭ হাজার ৬২২ হেক্টর জমি চাষাবাদের আওতায় আনা হয়েছে। সেনাবাহিনীর সহায়তায় আমডাঙ্গা খালসহ তিনটি নদী খননের প্রকল্পও অনুমোদিত হয়েছে।
ফেনীর মুহুরী নদীর বাঁধ পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণে। নোয়াখালীর বামনী ক্লোজার ও মুসাপুর রেগুলেটর নির্মাণের প্রকল্প চূড়ান্ত পর্যায়ে। ঢাকা শহরের ১৯টি খাল খননের কাজ দুই সিটি করপোরেশন বাস্তবায়ন করছে। কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা খাল খননেও সেনাবাহিনী যুক্ত হচ্ছে।
বন্যা পূর্বাভাস ব্যবস্থার উন্নতিতে যুক্তরাজ্যের মেটা অফিসের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি চূড়ান্ত হচ্ছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রায় ৩০০ একর জমি পুনরুদ্ধার করে জনস্বার্থে ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আড়িয়াল বিল, বেলাইবিল ও চলনবিল রক্ষায় বিশেষ প্রকল্পও চূড়ান্ত পর্যায়ে।
এ ছাড়া সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিভার রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বাজেট বাড়ানো হয়েছে এবং সুন্দরবন ও পার্বত্য এলাকার নদী জরিপ ও সংকটাপন্ন নদী চিহ্নিতকরণে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এসব উদ্যোগকে বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘমেয়াদি ও স্থায়ী পরিবর্তনের প্রতিফলন হিসেবে দেখছেন। যা নদী, জলাশয় ও পানি ব্যবস্থাপনায় ভবিষ্যতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।