‘তেহরান ছেড়ে নিরাপদ শহরে যাচ্ছি’, টেলিফোনে বাংলাদেশের সাবেক শুটিং কোচ

Bangla Tribune

ইসরায়েল-ইরান সংঘাত তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। হামলা-পাল্টা হামলায় প্রতিদিনই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে ইরানের রাজধানী তেহরানে। বিস্ফোরণের শব্দ আর যুদ্ধের শঙ্কায় দলে দলে মানুষ শহর ছেড়ে যাচ্ছেন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। এই বিপদের সময় তেহরানে রয়েছেন বাংলাদেশে কাজ করা দুই ইরানি কোচও।

২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকে বাংলাদেশ শুটিং দলের দায়িত্বে ছিলেন ইরানি কোচ জায়ের রেজাই। অলিম্পিক শেষ করে তিনি ঢাকায় না ফিরে নিজ দেশে ফিরে যান। ফলে তার সঙ্গে বাংলাদেশের আর চুক্তি নবায়নও হয়নি।

সংঘাতের শুরুতে জায়ের অবস্থান করছিলেন জার্মানির মিউনিখে, বিশ্ব শুটিং চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিতে গিয়ে। সেখান থেকে তুরস্ক হয়ে ট্রেনে তেহরানে ফেরেন। কিন্তু পরিস্থিতি ঘনিয়ে আসায় আজ (সোমবার) পরিবার নিয়ে তেহরান ছেড়ে গেছেন তিনি।

তেহরান থেকে বাংলা ট্রিবিউনকে জায়ের রেজাই বলেন, ‘পরিস্থিতি খুবই খারাপ। আজই আমরা পরিবারসহ তেহরান ছেড়ে বের হয়েছি। আপাতত আমরা ভালো আছি। নিরাপদ একটি শহরের দিকে যাচ্ছি। এখনই তেহরানে থাকার মতো অবস্থা নেই।’

এরপর তার সঙ্গে আর যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। তবে আরেক ইরানি কোচ, বাংলাদেশ জাতীয় ভলিবল দলের পরিচিত মুখ আলীপোর মুসলিমির সঙ্গে কিছুটা বিস্তারিত কথা হয়েছে। তিনি জানান, তেহরানজুড়ে এখন নিরাপত্তাহীনতা, যার কারণে অসংখ্য মানুষ রাজধানী ছাড়ছেন। ফলে শহরের প্রধান সড়কগুলোতে তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে।

আলীপোর মুসলিমি পরিবার নিয়ে থাকেন তেহরানের উত্তর অংশে। এক ছেলে ও এক মেয়ে পড়াশোনা করে, স্ত্রীও আছেন সঙ্গে। তার বাসার আশপাশের পরিস্থিতি এখনও ততটা খারাপ হয়নি, তবে সামনে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে ভেবে তিনি শহর ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

‘যে কোনও যুদ্ধই ভয়ংকর। তাই পুরো পরিবার নিয়ে তেহরান ছেড়ে যাচ্ছি। আত্মীয়স্বজনও সঙ্গে রয়েছে। কয়েকদিনের জন্য নিরাপদ শহরে যাব। ঝুঁকির মধ্যে অনেক মানুষ আছে। রাস্তায় তীব্র যানজট, আর ইন্টারনেটও ভালো কাজ করছে না,’— বলেন আলীপোর মুসলিমি।

এই যুদ্ধের মাঝেও বাংলাদেশ প্রসঙ্গে কথা বলেন অভিজ্ঞ এই কোচ। তিনি বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের ভলিবল দলের সঙ্গে ১০ বছর ধরে যুক্ত। বহুবার কোচিং করিয়েছি, অনেক সাফল্যও এসেছে। এবার অক্টোবরে নতুন চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। ঢাকায় আমাকে জানানো কথা ছিল, এখনও কিছু জানায়নি। তবে আমি অপেক্ষায় আছি।’

আলীপোর মুসলিমির আশা, যুদ্ধ থামলে তিনি আবারও কোচিংয়ে ফিরতে পারবেন। তবে তার আগে সবার মতো তারও একটাই প্রত্যাশা—যুদ্ধের অবসান।

এদিকে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ইরানে নিহতের সংখ্যা ৪৫০ ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির একটি মানবাধিকার সংগঠন। শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া হামলায় এখন পর্যন্ত ৪৫২ জন নিহত ও ৬৪৬ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যাকটিভিস্টস ইন ইরান (এইচআরএনএ)।

জনশূন্য তেহরান

সোমবার ইসরায়েল তেহরানের উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দাদের সরে যেতে সতর্ক করে দেয়। এরপরই তারা রাষ্ট্রায়ত্ত সম্প্রচার সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে হামলা চালায়। এতে তিনজন নিহত হন বলে জানিয়েছে ইরানি টেলিভিশন।

এর দুই দিন আগে ইসরায়েল ঘোষণা দেয়, তারা ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে তেহরানে যাওয়ার পথ খুলে দিয়েছে। এই ঘোষণার পর রাজধানীর রাস্তায় ভয়, অচলাবস্থা এবং প্রতিবাদের মিশ্র চিত্র ফুটে উঠেছে।

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর, মঙ্গলবার সকালে তেহরানের রাস্তায় রুটির দোকান, পেট্রোল পাম্পে লম্বা লাইন দেখা গেছে। কোথাও কোথাও কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত দীর্ঘ ছিল তা। অল্প কিছু মুদি দোকান ও ফার্মেসি খোলা থাকলেও জুয়েলারি ও খুচরো দোকানগুলো ছিল বন্ধ।

নগরীর বিভিন্ন জায়গায় নিরাপত্তা চৌকি বসানো হয়েছে। পুলিশের উপস্থিতি ও তল্লাশি আরও বাড়ানো হয়েছে। অনেকেই পানি সরবরাহ বন্ধ থাকায় সাময়িকভাবে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন।

তেহরানের প্রধান সড়কগুলোতে যান চলাচল কম। কিছু এলাকায় ওষুধের দোকানের বাইরে লাইন দেখা গেলেও শহরের বড় অংশ নিস্তব্ধ। সামাজিক যোগাযোমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কিছু যাচাই করা না ভিডিওতে বাড়িঘরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, জানালার কাচ ভেঙে পড়া এবং ঘরে ধ্বংসস্তূপের চিত্র দেখা গেছে।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *