Google Alert – সেনাবাহিনী
চলতি বছরের ৫ আগস্ট রাতে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ঘোষণা করেন। আগামী বছরের (২০২৬ সাল) ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের কথা উল্লেখ করেন তিনি। সে লক্ষ্য নিয়েই আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে সংসদ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বলেছেন, ‘‘ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করার জন্য আমাদের চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলছে। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে রমজানের আগে নির্বাচন করার জন্য যা যা প্রস্তুতি নেওয়া দরকার, আমরা জোরেসোরে নিচ্ছি।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘আমরা কারও কোনও কথায় চলতে চাই না। বিবেকের তাড়ণায় চলি। আইন-কানুন মতো চলতে চাই। কনস্টিটিউশন (সংবিধান) মতো চলতে চাই। একটা সরল সোজা পথে চলতে চাই, কোনও বাঁকা পথে নয়। কাউকে কোনও ফেভার করার জন্য না, একবারে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে চাই।’’
জানতে চাইলে ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘আমাদের যে কর্মপরিকল্পনা দিয়েছে, সেই কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী কার্যক্রম চলছে। আমরা ডিসেম্বরকে সামনে রেখে প্রস্তুতি নিয়েছি। ডিসেম্বর এ কারণে যে, প্রধান উপদেষ্টা প্রথমে বলেছিলেন, ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুন মাসের মধ্যে নির্বাচন হবে। তাই আমরা আর্লিয়েস্ট হিসাব করে ডিসেম্বরকে ধরে নিয়েছিলাম। পরবর্তীকালে বলা হলো এপ্রিল, এখন বলা হয়েছে ফেব্রুয়ারি। তো ডিসেম্বর যদি আমাদের টার্গেট হয়ে থাকে প্রস্তুতির, তাহলে তো এখন একটু সময় পাওয়া গেছে।’’
নির্বাচনকালীন সময়ের নিরাপত্তা ও সেনাবাহিনী মোতায়ন করার প্রসঙ্গে ইসির সিনিয়র এই সচিব বলেন, ‘‘সেনাবাহিনী মোতায়েনের ব্যাপার আরপিও’তে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটা বলতে পারবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ ব্যাপারটা তাদের। আমাদের রিকোয়ারমেন্ট হচ্ছে— আমরা আইনশৃঙ্খলা সুষ্ঠু দেখতে চাই, ভালো দেখতে চাই। সবাই যেন নির্বিঘ্নে ভোট দিতে আসতে পারে এবং নির্বিঘ্নে ভোট দিয়ে বাসায় যেতে পারে সেটা। আর ফলাফল যা হবে, সেটা সবাই যেন মানে। কারণ, একটা খেলায় ড্র হতে পারে। কিন্তু নির্বাচনে একজনই জিতবে। একজন জেতার অর্থ হলো বাকিরা হারবে। এই হারটাকে স্বীকার করে নেওয়ার মতো বড় মানসিকতা যদি না থাকে, তাহলে কোনও জায়গায় কোনও কিছু হবে না।’’
ইসির সূত্র বলছে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ, ভোটার তালিকা তৈরি, নির্বাচনি সরঞ্জাম কেনাকাটার মতো বেশ কয়েকটি কাজ প্রায় সম্পন্ন করেছে কমিশন। পাশাপাশি সুশীল সমাজ, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, রাজনৈতিক দল, নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের নিয়ে নির্বাচনি সংলাপের আয়োজনও করছে ইসি।
সংসদীয় সীমানা নির্ধারণ
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ৩০০ আসনের সীমানা ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করে গত ৪ সেপ্টেম্বর গেজেট প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। চূড়ান্ত সীমানার এই তালিকায় পরিবর্তন এসেছে ৪৬টি সংসদীয় নির্বাচনি আসনে। এতে গাজীপুরের ৫টি আসনকে বাড়িয়ে ৬টি এবং বাগেরহাটের ৪টি আসন থেকে একটি কমিয়ে ৩টি করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকার ২০টি আসনের মধ্যে ৬টি আসনের সীমানায় কমবেশি পরিবর্তন করা হয়েছে।
ওইদিন ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেছিলেন, ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য ৩০০ সংসদীয় এলাকার সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে।
তবে এরপর, ফরিদপুরে সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তন নিয়ে সর্বশেষ ১৫ সেপ্টেম্বর বিক্ষোভকারীরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়, উপজেলা নির্বাচন অফিসারের কার্যালয়, ভাঙ্গা থানা, হাইওয়ে পুলিশের কার্যালয় ও সরকারি গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এছাড়া বিক্ষোভকারীরা সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে রাখে। পরে সেখানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়।
এমন পরিস্থিতিতে আসন পুনর্নির্ধারণের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) এক চিঠিতে অনুরোধ জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান মোল্যা।
তবে এই বিষয়ে আখতার আহমেদ বলেন, যেহেতু রিটের ব্যাপারটা আছে, অতএব কমিশন এটা রিট এবং ডিসি সাহেবের যে সুপারিশ— এগুলো বিবেচনায় নিয়ে যেটা আইনগতভাবে প্রযোজ্য, সেটাই ব্যবস্থা নেবেন।
আবার ইসির সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে একটি রিট আবেদন করেন এলাকাবাসী। গত ১৬ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ সংক্রান্ত একটি রিট পিটিশনের শুনানি শেষে রুল জারি করেন। রুলে জানতে চাওয়া হয়েছে, এই প্রজ্ঞাপন (সীমানা পুনর্নির্ধারণের) কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না। এই রুলের জবাব দিতে সংশ্লিষ্টদের আগামী ১০ দিনের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার হুমায়ুন কবির পল্লব।
আসন পুনর্নির্ধারণ নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনের প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেছিলেন, ‘‘আইন অনুযায়ী আন্দোলন করে বা দেশের কোনও আদালতে গিয়ে কোনও লাভ হবে না।’’
প্রবাসী ভোট নিশ্চিত করতে কাজ করছে ইসি
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেসব ভোটার দেশের বাইরে বা দেশের ভেতরে থেকেও পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে চান, তাদের তালিকা করতে নিবন্ধন কার্যক্রম ১১ নভেম্বর থেকে শুরু করবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আর এই কার্যক্রম শেষ হবে আগামী ৩০ নভেম্বর।
ইসি সচিব জানান, এই লক্ষ্যে প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিবন্ধনের জন্য তৈরি হচ্ছে ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ নামের অ্যাপ। নিবন্ধিতদের নির্ধারিত পদ্ধতিতে যথাসময়ে পোস্টাল ব্যালট পেপার পাঠানোর পর ভোট দিয়ে ফেরত আনা হবে দেশে। এর মাধ্যমে কেবল প্রবাসীরাই না, দেশের অভ্যন্তরে ভোটে নিয়োজিত কর্মকর্তা, সরকারি কর্মকর্তা ও আইনি হেফাজতে থাকা ব্যক্তিরা পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারবেন। এরইমধ্যে প্রবাসীরা কীভাবে ভোট দেবেন, সে পদ্ধতিও জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো, সানাউল্লাহ জানিয়েছেন, আগামী নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার অ্যাপ ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ উদ্বোধন করা হবে।
তিনি বলেন, ‘‘আউট অব কান্ট্রি ভোটিং রেজিস্ট্রেশনের জন্য আমরা একটা অ্যাপ ডেভেলপ করছি। নভেম্বরের দ্বিতীয় বা তৃতীয় সপ্তাহে এই অ্যাপটা উদ্বোধন হবে। প্রবাসীরা এতে নিবন্ধন করতে ১০ দিন সময় পাবেন বলেও জানান এই কমিশনার।
আরও জানানো হয়, ডাক বিভাগের মাধ্যমে ব্যালট পেপার পাঠানো হবে ভোটারের কাছে এবং প্রবাস থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে সেটা আসবে। তবে এটা কবে পাঠানো হবে, তা তফসিল ঘোষণার ওপর নির্ভর করছে।
জানা যায়, একটা বড় খামের ভেতরে তিনটা খাম দিয়ে প্রবাসীদের ঠিকানায় পোস্ট করা হবে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের মাধ্যমে। একটা ব্যালট পেপার আরেকটা খামের ভেতরে ভরা থাকবে। ভোট দেওয়ার পর আরেকটা খাম ফেরত পাঠাবেন ওই ভোটার। এরমধ্যে নির্দেশনাও থাকবে।
চূড়ান্ত ভোটার তালিকা ১৮ নভেম্বর
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃতীয় ধাপের চূড়ান্ত ভোটার তালিকা আগামী ১৮ নভেম্বর প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
ইসি থেকে জানানো হয়, খসড়া তালিকার পিডিএফ ও মাঠ পর্যায়ে লিংক পাঠানোর শেষ তারিখ ২৫ অক্টোবর। মুদ্রণপূর্বক খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে ১ নভেম্বর। দাবি-আপত্তি ও সংশোধনের আবেদনের শেষ সময় ১৬ নভেম্বর। দাবি ও আপত্তি নিষ্পত্তির শেষ তারিখ ১৭ নভেম্বর এবং চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে ১৮ নভেম্বর।
এর আগে গত ৩১ আগস্ট সম্পূরক চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করে ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেছেন, দেশে এখন ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৬৩ লাখ ৭ হাজার ৫৯৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৪১ লাখ ৪৫৫ জন ও নারী ভোটার ৬ কোটি ২২ লাখ ৫ হাজার ৮১৯ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছে ১ হাজার ২৩০ জন।
তিনি জানান, চলতি বছরের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত যাদের বয়স ১৮ হবে, তাদের অন্তর্ভুক্ত করে আরও একটি ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে।
নির্বাচন সংক্রান্ত ৭০ শতাংশ কেনাকাটা শেষ
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন-সামগ্রীর মূল কেনাকাটা চলতি সেপ্টেম্বরে শেষ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ।
তিনি জানান, ইতোমধ্যে মার্কিং সিল, গালা, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের লক, হেসিয়ান ব্যাগসহ বেশ কিছু সরঞ্জাম এসেছে। ৭০ শতাংশ কেনাকাটার কাজ শেষ হয়েছে। সেপ্টেম্বরের মধ্যে চাহিদা অনুযায়ী সব সামগ্রী পৌঁছে যাবে। এসময় নির্বাচনি প্রস্তুতি পুরোদমে চলছে বলেও জানান সচিব।
অক্টোবরজুড়ে চলবে নির্বাচনি সংলাপ
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এ এম এম নাসির উদ্দিন নেতৃত্বাধীন কমিশন প্রথম কোনও নির্বাচনি সংলাপের আয়োজন করতে যাচ্ছে। আগামী রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) থেকে নির্বাচন কমিশন এই সংলাপ শুরু করতে চায় বলে জানিয়েছে ইসি সচিবালয়। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রথমে সংলাপে বসতে চায় ইসি।
এ বিষয়ে ইসি সচিব আখতার আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘আমাদের জনসম্পৃক্ততার যে বিষয়টা আছে, বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারস যারা আছেন, যেমন- সিভিল সোসাইটি, শিক্ষাবিদ, নারী নেতৃবৃন্দ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক, রাজনৈতিক দল, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, জুলাই যোদ্ধা— এদের সঙ্গে পর্যাক্রমে আলোচনাগুলো শুরু করবো।
নাম প্রকাশ না করে ইসির এক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘নির্বাচনি আইন সংস্কার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, পোস্টাল ব্যালট ও ভোটসহ সার্বিক বিষয় এই সংলাপে স্থান পাবে। আর নির্বাচনি রোডম্যাপ অনুযায়ী অক্টোবর মাসজুড়েই এই সংলাপ চলার কথা রয়েছে।’’