Google Alert – সেনা
থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যকার বিতর্কিত সীমান্তে তৃতীয় দিনের মতো চলছে সংঘর্ষ। কম্বোডিয়ার ওডার মিনচে প্রদেশে গোলার আঘাতে আহত সেনারা হাসপাতালের করিডরে চিকিৎসার অপেক্ষায় রয়েছেন। সীমান্তবর্তী গ্রামগুলো থেকে পালিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে জড়ো হচ্ছেন হাজারো বেসামরিক মানুষ। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
এক কম্বোডিয়ান সেনা আল জাজিরাকে বলেন, আমার পিঠে থাই গোলার ধাতব টুকরো রয়ে গেছে। এখনও অস্ত্রোপচার করানো যায়নি। এক্স-রে মেশিন না থাকায় প্রথমে মিলিটারি হাসপাতালে কিছুই করা যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, থাই সেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষে তা মোয়ান থম ও তা ক্রাবেই প্রাচীন মন্দিরসংলগ্ন এলাকাগুলোতে একাধিক কম্বোডিয়ান সেনা আহত হন। কম্বোডিয়া দাবি করছে, তারা এসব এলাকা দখলে নিয়েছে। তবে স্বতন্ত্র সূত্র থেকে এই দাবি যাচাই সম্ভব হয়নি।
সীমান্ত এলাকায় সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত উভয়পক্ষ মিলিয়ে ৩০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে বেশিরভাগই বেসামরিক মানুষ। কম্বোডিয়ায় অন্তত ১৩ জন এবং থাইল্যান্ডে প্রায় ২০ জন নিহত হয়েছে বলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
কম্বোডিয়ার ওডার মিনচে প্রদেশের সীমান্তবর্তী গ্রাম থেকে পালিয়ে আসা চেং ডিয়াব জানান, আমার বাড়ি সীমান্ত থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে। গোলাগুলির শব্দে আমরা ঘুমোতে পারি না। এখন একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিয়েছি।
ডিয়াব বলেন, খাবার ফুরিয়ে আসছে। যদি যুদ্ধ আরও চলে, তাহলে খাওয়ার কিছু থাকবে না। স্থানীয়রা নিজেদের মধ্যে চাল ও সরবরাহ ভাগাভাগি করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছেন।
এক গ্রামপ্রধান বলেন, সরকারি সহায়তা সীমিত। বহু মানুষ বিপদ মাথায় নিয়ে বাড়ি ফিরে গৃহপালিত প্রাণী দেখাশোনা ও অবশিষ্ট মালপত্র নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনী সীমান্তবর্তী আটটি জেলায় সামরিক শাসন জারি করেছে। প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার থাই নাগরিক নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। অপরদিকে, কম্বোডিয়ার তিনটি প্রদেশ থেকে ৩৮ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
সংঘাতের সূত্রপাত মে মাসে। ওই সময় কম্বোডিয়ার এক সেনা থাই বাহিনীর সঙ্গে গোলাগুলিতে নিহত হন। এরপর চলতে থাকা কূটনৈতিক উত্তেজনা চূড়ান্তে পৌঁছে কয়েকজন থাই সেনা সীমান্তে পুঁতে রাখা স্থলমাইনে আহত হন। থাইল্যান্ড দাবি করেছে, এগুলো নতুনভাবে পুঁতে রাখা হয়েছে। কিন্তু কম্বোডিয়া তা অস্বীকার করে বলেছে, মাইনগুলো ৮০ ও ৯০ দশকের গৃহযুদ্ধের সময়ের।
পরিস্থিতির অবনতিতে থাইল্যান্ড ও কাম্বোডিয়া একে অপরের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করে এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক অবনমিত হয়।
থাইল্যান্ড অভিযোগ করেছে, কম্বোডিয়া আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ ক্লাস্টার বোমা ব্যবহার করেছে। অন্যদিকে, কম্বোডিয়া বলেছে, থাইল্যান্ড তাদের হাসপাতালসহ বেসামরিক স্থাপনায় ইচ্ছাকৃত হামলা চালিয়েছে।
থাইল্যান্ডের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই কম্বোডিয়াকে যুদ্ধাপরাধের জন্য অভিযুক্ত করেছেন। কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত থাইল্যান্ডকে ‘উস্কানিমূলক, পূর্বপরিকল্পিত ও ইচ্ছাকৃত’ হামলার দায়ে অভিযুক্ত করেছেন।