থাই পরিবারতন্ত্রে বড় ধাক্কা

Google Alert – সেনা

দীর্ঘদিন ধরে থাইল্যান্ডের রাজনীতিতে একচ্ছত্র প্রভাব বিস্তার করে আসছে সিনাওয়াত্রা পরিবার। তবে এবার বড় ধাক্কা লেগেছে সেই পরিবারতন্ত্রে। একদিকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা (৩৮) বরখাস্ত (সাময়িক)। অন্যদিকে তার বাবা থাকসিন সিনাওয়াত্রার রাজদ্রোহের মামলার বিচার। আর ফুপু সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী (২০১১-২০১৪) ইংলাক সিনাওয়াত্রা (৫৮)-প্রায় একদশক ধরেই পলাতক। ভাতিজির মতো মেয়াদ শেষের আগে (৭ মে ২০২৪) তাকেও বরখাস্ত করেন দেশটির সাংবিধানিক আদালত। সব মিলিয়ে সিনাওয়াত্রা পরিবারের প্রভাব ও রাজনৈতিক ক্ষমতার খুঁটি অনেকটাই নড়বড়ে হয়ে পড়েছে থাইল্যান্ডে। থাইল্যান্ডের একসময়ের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা সিনাওয়াত্রা পরিবারের এখন দিন কাটছে ‘আদালত চত্বরে’। বুধবার সকালেও আদালতে হাজিরা দিয়েছেন বাবা-মেয়ে। সিনাওয়াত্রা পরিবারের এই ‘খেই হারা দশা’ দেশটির রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এএফপি।

মঙ্গলবার এক বিপর্যের মুখোমুখি হয় থাইল্যান্ডের ক্ষমতার শীর্ষে থাকা সিনাওয়াত্রা পরিবার। এ দিন ফোনালাপ ফাঁসের অভিযোগে সামরিক বরখাস্ত হন থাই প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা। একই দিনে তার বাবা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রা রাজদ্রোহের মামলায় হাজির হন আদালতে। থাইল্যান্ডের রাজনীতি গত দুই দশক ধরে সেনাসমর্থিত রাজতন্ত্রপন্থি এলিট ও সিনাওয়াত্রা পরিবারের মধ্যে বিভক্ত। ৭৫ বছর বয়সী থাকসিন সিনাওয়াত্রার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ২০১৫ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার এক মিডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে থাইল্যান্ডের রাজাকে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন। মঙ্গলবার সকালে ব্যাংককের একটি আদালতে হাজির হন তিনি। বুধবার দ্বিতীয় দিনের মতো আদালতে হাজির হন থাকসিন সিনাওয়াত্রা। বিচারকার্য চলবে এক সপ্তাহ। রায় ঘোষণা করা হবে আগামী মাসে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে সর্বোচ্চ ১৫ বছরের কারাদন্ড দেওয়া হবে।

অন্যদিকে, পেতংতার্নের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তিনি এক কূটনৈতিক ইস্যুতে ‘নৈতিকতা ভেঙেছেন’। কম্বোডিয়ার সঙ্গে সীমান্ত বিরোধে একজন সেনা নিহত হওয়ার পর পেতংতার্ন সাবেক কম্বোডিয়ার সাবেক নেতা হুন সেনকে ফোন করে তাকে চাচা সম্বোধন করেন এবং এক থাই সেনা কর্মকর্তার সমালোচনা করেন। এই ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। থাইল্যান্ডের সংবিধান অনুযায়ী, মন্ত্রীদের মধ্যে ‘স্পষ্ট সততা’ ও ‘নৈতিক মানদণ্ড’ থাকা আবশ্যক। এই অভিযোগে সংবিধান আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়। সম্প্রতি একটি জরিপে দেখা গেছে, মাত্র ৯ শতাংশ জনগণ পেতংতার্নের নেতৃত্বে সন্তুষ্ট। অথচ তিন মাস আগেও এই হার ছিল ৩০ শতাংশ। ৩৮ বছর বয়সী পেতংতার্ন গত আগস্টে রাজা মহা বজিরালংকর্নের অনুমোদনে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন। রাজনীতিতে প্রবেশ করেছিলেন ২০২২ সালের শেষ দিকে। পরিবারের প্রভাবশালী নেতাদের ছায়ায়। থাইল্যান্ডের সবচেয়ে কম বয়সী এবং সিনাওয়াত্রা পরিবারের তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তিনি দলকে পুনর্জীবিত করার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। কিন্তু ক্যাম্বোডিয়ার সঙ্গে সীমান্ত নিয়ে সাবেক নেতা হুন সেনের সঙ্গে তার ফোনালাপ ফাঁস হওয়ায় নৈতিকতার অভিযোগে মঙ্গলবার সংবিধান আদালত তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। বুধবার আদালতে হাজির হন পেতংতার্নও। তার ওই ফোনালাপটি নিয়ে তদন্ত চলছে। উল্লেখ্য, ২০০১ সালে প্রধানমন্ত্রী হন থাকসিন সিনাওয়াত্রা। তিনি থাইল্যান্ডের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রথম প্রধানমন্ত্রী। ২০০৫ সালে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে পুনরায় নির্বাচিত হন। তবে ২০০৬ সালে সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে থাকসিন সিনাওয়াত্রাকে সরানো হয়। ২০১৪ সালে তার বোন ইংলাক সিনাওয়াত্রাও একই পরিণতি ভোগ করেন।

বুধবার এক বিবৃতিতে থাইল্যান্ডের উপ-প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই জানান, প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা সংবিধান আদালতের চলমান তদন্ত প্রক্রিয়া সফলভাবে অতিক্রম করবেন। ফুমথাম বলেছেন, তিনি সম্প্র্রতি থাকসিন সিনাওয়াত্রার সঙ্গে এই বিষয়ে কোনো সাক্ষাৎ করেননি। তবে তিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জানিয়েছেন, ফেউ থাই নেতৃত্বাধীন সরকার পুরো চার বছরের মেয়াদ পূর্ণ করবে এবং প্রতিটি আইনি চ্যালেঞ্জ ধাপে ধাপে মোকাবিলা করবে। তিনি আরও বলেছেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি আদালতের রায় আমাদের পক্ষেই আসবে।’

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *