দীঘিনালা-খাগড়াছড়ি-রাঙামাটিতে হামলার ঘটনায় ইউপিডিএফের মানবাধিকার পরিবীক্ষণ সেলের রিপোর্ট প্রকাশ

CHT NEWS

দীঘিনালা, খাগড়াছড়ি সদর ও রাঙামাটিতে হামলার কিছু চিত্র


নিজস্ব প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর ২০২৪

সম্প্রতি খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা ও স্বনির্ভরে এবং রাঙামাটিতে পাহাড়িদের
ওপর সাম্প্রদায়িক সেনা-সেটলার হামলা, গুলি বর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার ওপর একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর মানবাধিকার পরিবীক্ষণ
সেল।

পাহাড়ে উগ্র সাম্প্রদায়িকতার লেলিহান শিখা শিরোনামে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত ১৯-২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খাগড়াছড়ি জেলার
দীঘিনালা ও স্বনির্ভরে এবং রাঙামাটি শহরে পাহাড়িদের ওপর ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক হামলার
ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় চার জন নিহত ও কমপক্ষে ১৩৮ জন আহত হন, যাদের অধিকাংশই হলেন পাহাড়ি।
সংজ্ঞাহীন গুরুতর আহত দু
জন চট্টগ্রামে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ৪৮ ঘন্টা ধরে চলা এই বর্বরোচিত হামলায়
দীঘিনালায় ১৯০টি দোকান ও রাঙামাটিতে ছোট-বড় অন্তত ১০০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুড়ে গেছে
অথবা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হামলাকারী সেটলার বাঙালিরা রাঙামাটিতে পার্বত্য চটগ্রাম আঞ্চলিক
পরিষদের অফিসেও হামলা চালায় এবং সেখানে গ্যারেজে রাখা ৯টি গাড়ি ও একটি মোটর সাইকেল
পুড়িয়ে দেয়। এছাড়া ১৮টি বসতবাড়ি, ৮৫টি ভাসমান দোকানে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ, ৪৬টি যানবাহন,
৮টি ব্যাংক, দুটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ২টি বৌদ্ধ বিহারে ভাংচুর করা হয়।

হামলা শেষ হওয়ার পরই কেবল প্রশাসন রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে
১৪৪ ধারা জারি করে। সেনাবাহিনী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা পাওয়ার পরও হামলাকারীদের নিবৃত্ত
করতে তা প্রয়োগ করেনি।

ঘটনার পর ২১ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তিন
উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ (স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়), লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম
চৌধুরী (স্বরাষ্ট্র) ও সুপ্রদীপ চাকমা (পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক) রাঙামাটি সফর করেন।
তারা একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন। অন্যদিকে তথ্য উপদেষ্টা
নাহিদ ইসলাম দীঘিনালায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন এবং স্থানীয় জনগণ ও ক্ষতিগ্রস্তদের
সাথে মত বিনিময় করেন।

সরকার গত ২৬ সেপ্টেম্বর
পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নিয়ে সাত সদস্য বিশিষ্টে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে,
তবে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) তা প্রত্যাখ্যান করে।  অন্যদিকে হামলা, খুন ও লুটপাটের সাথে জড়িত কাউকে
এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়নি, যদিও ইতিমধ্যে রাঙ্গামাটিতে নিহত অনিক কুমার চাকমার
পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে। হামলার দশ দিন পরও পাহাড়িদের মধ্যে এখনও ভয় ও
আতঙ্ক কাটেনি; যারা হামলার ঘটনা সোস্যাল মিডিয়ায় লাইভ শেয়ার করেছিলেন তাদের পুলিশ গ্রেফতারের
জন্য খুঁজছে বলে জানা গেছে।

রিপোর্টে খাগড়াছড়ি
জেলার দীঘিনালা ও স্বনির্ভর এবং রাঙামাটি শহরে সংঘটিত হামলার বিস্তারিত বিবরণ তুলে
ধরা হয়েছে। এতে দীঘিনালায় ধন রঞ্জন চাকমা নামে একজন নিহত ও ১০ জন আহত; খাগড়াছড়ি সদরের
স্বনির্ভর এলাকায় সেনাবাহিনীর গুলিতে জুনান চাকমা ও রুবেল ত্রিপুরা নামে দুজন নিহত
ও ২১ জন আহত এবং রাঙামাটিতে অনিক কুমার চাকমা নামে এক ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা এবং ৬৯ জন পাহাড়ি ও ৩৮ জন বাঙালি আহত হওয়ার তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

রিপোর্টে ঘটনার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে,

ক) বিগত হাসিনা সরকারের রেখে যাওয়া ফ্যাসিস্ট নীতি
পার্বত্য চট্টগ্রামে সাম্প্রতিক হামলার অন্যতম প্রধান কারণ। এই ফ্যাসিস্ট নীতির অংশ
হিসেবে খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে বেশ কয়েকটি ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী গঠন করা হয়, যারা সাধারণ
জনগণের কাছে তারা মগ পার্টি ও “নব্য মুখোশ বাহিনী” নামে অধিক পরিচিত। এই ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী
হাসিনা সরকারের নিয়োগকৃত কতিপয় সেনা কর্মকর্তার পৃষ্ঠপোষকতায় সারা পার্বত্য চট্টগ্রামে
অবাধে খুন, অপহরণ ও সন্ত্রাস চালায় এবং আওয়ামী লীগ তাদেরকে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে
দমন ও নির্বাচনে ভোট ডাকাতির কাজে ব্যবহার করে। নব্য মুখোশ ঠ্যাঙাড়েদের অনেক খুনের
মধ্যে দুটি বহুল আলোচিত ঘটনা হলো ২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট খাগড়াছড়ি শহরের স্বনির্ভরে পুলিশ
ও বিজিবির সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে ব্রাশ ফায়ার করে ৭ জনকে হত্যা এবং ২০২৩ সালের ১১
ডিসেম্বর রাতে পানছড়ির অনিল পাড়ায় সশস্ত্র হামলা চালিয়ে ৪ যুব নেতাকে হত্যা। এছাড়া
বান্দরবানে বম জাতিসত্তার বিরুদ্ধে গণহত্যা চালাতেও এদের ব্যবহার করা হয়।

হাসিনার পতনের পরও পার্বত্য চট্টগ্রামে তার ফ্যাসিস্ট
নীতি এখনো অব্যহাত রয়েছে। কিছু বাঙালি সেটলারও এই ঠ্যাঙাড়ে বাহিনীর সাথে যুক্ত হয়েছে
এবং তারা নিজেদের মধ্যেকার ব্যক্তিগত বা পারিবারিক বিরোধে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য
ঠ্যাঙাড়ে বাহিনীকে ব্যবহার করছে। খাগড়াছড়িতে ১৮ সেপ্টেম্বর মামুন হত্যা তার একটি দৃষ্টান্ত।
অন্যদিকে ঠ্যাঙাড়েদের বিরুদ্ধেও নানা কারণে অনেক বাঙালি সেটলারের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ
থাকা অস্বাভাবিক নয়। আর তারা এই ক্ষোভ কায়েমী স্বার্থবাদী মহলের ষড়যন্ত্রে সাম্প্রদায়িক
দাঙ্গার মাধ্যমে পুরো পাহাড়িদের বিরুদ্ধে উগড়ে দিচ্ছে।

খ) দ্বিতীয় কারণ হলো সেনাবাহিনী ও সেটলারদের মধ্যেকার
একটি বিশেষ গোষ্ঠীর কায়েমী স্বার্থ সৃষ্টি হওয়া। ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পর পার্বত্য
চট্টগ্রাম থেকে সেনাশাসন তুলে নেয়ার দাবি জোরদার হয়ে উঠছে। ৫ আগস্ট দেশে ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের
প্রত্যক্ষ প্রভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি ছাত্ররা “সংঘাত ও বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি
ছাত্র আন্দোলনের” ব্যানারে সংগঠিত হয়ে আন্দোলন করছে। তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে সমগ্র
পাহাড়ি জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করার ডাক দিয়েছে। ফলে ছাত্র সমাজ তথা জনগণের মধ্যে তাদের দাবি
জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। ১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে তাদের বিশাল সমাবেশ তাদের দাবির প্রতি
সাধারণ মানুষের সমর্থনেরই বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু সেনা-সেটলারদের কায়েমী স্বার্থবাদী অংশটি
চায় না পাহাড়িরা ঐক্যবদ্ধ হোক এবং পাহাড়ে সেনাশাসন বন্ধ হোক। তাই তারা সংঘাত ও বৈষম্য
বিরোধী পাহাড়ি ছাত্রদের আন্দোলন প্রতিহত করার জন্য মরিয়া চেষ্টা হিসেবে সেটলারদের উগ্র
সাম্প্রদায়িক সংগঠনকে ব্যবহার করছে এবং দাঙ্গার আশ্রয় নিচ্ছে। এই পরিস্থিতি আমাদেরকে
১৯৯০ দশকের পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিস্থিতির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। তখন স্বৈরাচার এরশাদের
পতনের পর পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতৃত্বে গণ আন্দোলন গড়ে উঠেছিল
এবং সেই আন্দোলন দমনের জন্য সেনা শাসকরা বাঙালি ছাত্র পরিষদ ও পার্বত্য গণপরিষদকে হাতিয়ার
হিসেবে ব্যবহার করেছিল, যার পরিণামে ১৯৯২ সালের ২০ মে রাঙামাটি শহরে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক
দাঙ্গা সংঘটিত হয়েছিল এবং ১৯৯২ সালের ১৩ অক্টোবর দীঘিনালায় পিসিপির সমাবেশে যোগ দিতে
এসে ভরদ্বাজ মুনি চাকমা সেনা-সেটলার হামলায় নিহত হয়েছিলেন।

গ) পাহাড়িদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলার একটি বড় কারণ
হলো সেটলারদের প্রতি নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষপাতিত্ব। ১৯৮০ সালের কলমপতি গণহত্যা থেকে
শুরু করে গত সাড়ে চার দশকে এমন কোন নজীর নেই, যেখানে নিরাপত্তা বাহিনী সেটলারদেরকে
পাহাড়িদের ওপর হামলা থেকে নিবৃত্ত করতে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নিয়েছে; বরং প্রায় ক্ষেত্রে
তারা হামলায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগি হিসেবে কাজ করেছে। এবারের হামলায়ও তা আরও একবার
প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশ আর্মিসহ নিরাপত্তা বাহিনী যদি হামলাকারীদের বিরুদ্ধে তা
ক্ষণিকভাবে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ
করতো, তাহলে সেটলাররা কখনই পাহাড়িদের ওপর আক্রমণ করতে সাহস পেতো না।

গত ১৭ সেপ্টেম্বর সরকার দাঙ্গা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের
মোকাবিলার জন্য সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়। এখানে প্রশ্ন হলো, সেনাবাহিনীর
সদস্যরা খাগড়াছড়িতে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদরত পাহাড়িদের লক্ষ্য করে গুলি করেছে, অথচ
দীঘিনালা ও রাঙামাটিতে দাঙ্গাকারী সেটলারদের নিবৃত্ত করতে তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা
প্রয়োগ করল না কেন? নিরাপত্তাবাহিনীর এ ধরনের পক্ষপাতমূলক আচরণ পাহাড়ে শান্তিশৃ্ঙ্খলা
প্রতিষ্ঠা ও সব সম্প্রদায়ের আস্থা অর্জনের ক্ষেত্রে একটি বড় ধরনের অন্তরায়, যা কাটিয়ে
উঠতে না পারলে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে না।

ঘ) বারংবার একই প্যাটার্ণে সেটলার হামলার অন্য একটি
প্রধান কারণ হলো হামলাকারীদের শাস্তি না হওয়া। পার্বত্য চুক্তির পর ২১টি বড় ধরনের সাম্প্রদায়িক
হামলাসহ (সম্প্রতি ১৯-২০ সেপ্টেম্বরের হামলা বাদে) পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের ওপর
কয়েক ডজন সেটলার হামলায় আজ পর্যন্ত কারোর শাস্তি হওয়ার দৃষ্টান্ত নেই। এই বিচারহীনতা
পাহাড়িদের ওপর সেটলার হামলায় বড় ধরনের ‍উ
সাহ যোগায়। অপরাধ করেও যদি কেউ শাস্তি না পায়, তাহলে সে আরও অপরাধ করতে
সাহিত
হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।

এতে বলা হয়েছে
ভবিষ্যতে এ ধরনের হামলা রোধ করতে অন্তর্বর্তীকালীন
সরকারকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে হবে এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কিত রাষ্ট্রীয়
নীতির ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আনতে হবে।

রিপোর্টে ৭ দফা সুপারিশ করা হয়েছে। এগুলো হলো:

ক) পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাকে সামরিক বাহিনীর মান্ধাতা
আমলের কাউন্টার-ইন্সার্জেন্সির লেন্স দিয়ে দেখার ও বিচার করার পদ্ধতি বাদ দিতে হবে
এবং রাজনৈতিক সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে। সামরিক বাহিনীর উপস্থিতি না থাকলে পার্বত্য
চট্টগ্রাম বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে, জুম্মদের মধ্যে আন্তঃসংঘাত আরও বেড়ে যাবে এবং সেখানে
শান্তি বিঘ্নিত হবে – এ ধরনের যুক্তি আদৌ ঢোপে টেকে না। বরং বলা উল্টো করে বলা যায়,
সামরিক বাহিনীর একটি বিশেষ গোষ্ঠীই নিজেদের কায়েমী স্বার্থে পাহাড়ে তাদের উপস্থিতি
অব্যাহত রাখার যৌক্তিকতা সৃষ্টির জন্য নানা ষড়যন্ত্র করে সংঘাতকে জিইয়ে রাখতে চায়।

খ) পাহাড়িদেরকে সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশের জনগণের অংশ
বলে মনে করতে হবে এবং তাদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে রাখা চলবে না। তাই বিগত
সরকারগুলো পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম দিয়ে জুম্ম ধ্বংস করার যে জঘণ্য নীতি গ্রহণ করে
তা একেবারে পরিহার করতে হবে। বিগত খালেদা ও হাসিনা সরকারের এ নীতির কারণে পার্বত্য
চট্টগ্রামে শান্তি সুদূর পরাহত থেকে যায়। “শান্তি চুক্তি” সম্পাদন করেও পার্বত্য চট্টগ্রামে
অশান্তির কারণ হলো ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের এই “ভাগ করে শাসন করার” উপনিবেশিক নীতি।

ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার জনসংহতি সমিতিকে তার রাজনৈতিক
প্রতিপক্ষকে দমনের জন্য একচেটিয়া সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছিল এবং পরে ২০১৭ সালে পাহাড়িদের
মধ্য থেকে বখাটে, উচ্ছন্নে যাওয়া সমাজ-বিরোধী ও বিভিন্ন মামলার দাগি আসামীদের দিয়ে
ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী গঠন করেছিল। এর ফলে পাহাড়ে অশান্তি ও অরাজক অবস্থা সৃষ্টি হয়, যার
রেশ এখন বর্তমান রয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে তাই ফ্যাসিস্ট হাসিনার পার্বত্য চট্টগ্রাম
সম্পর্কিত ঘৃন্য নীতি বর্জন করে সকল জাতিসত্তা ও সম্প্রদায়ের শান্তি, সমৃদ্ধি ও বিকাশের
সহায়ক নীতি গ্রহণ করতে হবে। মনে রাখা দরকার কেন্দ্রীয় পর্যায়ে যে নীতি গৃহীত হয় মাঠ
পর্যায়ে তার প্রতিফলন ঘটে থাকে। উল্টোভাবে বললে, মাঠ পর্যায়ে কী অবস্থা বিরাজ করছে
তা দেখে কেন্দ্রের নীতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

গ) এটা মনে রাখতে হবে যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাশাসন
জারী রেখে দেশে কখনই গণতন্ত্র ও সুশাসন কায়েম করা সম্ভব নয়। পার্বত্য চট্টগ্রামকে অশান্ত
রেখে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টাও বিফল হতে বাধ্য। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের
গত ৫৩ বছরের ইতিহাস এ সত্যকেই অভ্রান্তভাবে তুলে ধরে। তাই দেশের সামগ্রিক স্বার্থেই
পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাশাসন তুলে নিতে হবে এবং পাহাড়ি জনগণকে তাদের ন্যায্য অধিকার
প্রদান করে শান্তি ফিরিয়ে আনতে হবে।

ঘ) পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসনকে
শক্তিশালী করতে হবে। এ জন্য প্রশাসনের উচ্চপদে পাহাড়িদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
বর্তমানে এসব পদে তাদের অংশগ্রহণ শূন্য।

ঙ) পাহাড়ি ও বাঙালিদের সমন্বয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের
জন্য একটি বিশেষ পুলিশ বাহিনী গঠন করতে হবে এবং তিন পার্বত্য জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষার
দায়িত্ব এই বাহিনীর হাতে ন্যস্ত করতে হবে। এই বাহিনীকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যাতে
তারা পক্ষপাতহীনভাবে কাজ করতে পারে।

চ) জাতিসংঘের মাধ্যমে দীঘিনালা, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি
হামলার ঘটনার তদন্ত করতে হবে এবং তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করে প্রকৃত দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত
করতে হবে। এছাড়া ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের আমলে পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডসহ
পার্বত্য চট্টগ্রামে এ যাবত সংঘটিত সকল গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্ত করতে
জাতিসংঘকে আহ্বান জানাতে হবে।

ছ) দীঘিনালা, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত
পরিবারগুলোর জন্য যথাযথ ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে এবং আহতদের চিকি
সার খরচ পরিশোধ ও কর্মঅক্ষম হলে
তাদেরকে পুনর্বাসন করতে হবে।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *