দুই সন্তানের বাবাকে শিশু দেখিয়ে জামিন

Bangla News


পলাশ রানা

গাইবান্ধায় দুই সন্তানের বাবাকে শিশু দেখিয়ে জামিন করানোর ঘটনায় আদালতপাড়ায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ভুয়া জন্মসনদ তৈরি করে ২৫ বছরের আসামিকে শিশু হিসেবে উপস্থাপন করে জামিনে মুক্ত করা হয়েছে।

এতে আদালতের নথি জালিয়াতি, আসামির পরিচয় পরিবর্তন ও শিশু আদালতকে বিভ্রান্ত করার বিষয়টি সামনে এসেছে।

বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) আদালতের সঙ্গে প্রতারণার ঘটনাটি গণমাধ্যমকর্মীদের নজরে আসে।


মামলার নথি ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ জুলাই সেনাবাহিনীর অভিযানে জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার তালুক কানুপুরে শ্বশুরবাড়ি থেকে পলাশ রানাসহ চারজনকে সরকারি ভাতা হ্যাক করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে আটক করা হয়। পরদিন আদালত তাদের কারাগারে পাঠান। এজাহারে পলাশ রানার বয়স ২৫ বছর উল্লেখ ছিল।


পরে ফৌজদারি মামলা নম্বর ৯৩৫/২৫ গাইবান্ধা দায়রা জজ আদালতে জামিন শুনানির অপেক্ষায় ছিল। ওই মামলার এলসিআর (নিম্ন আদালতের রেকর্ড) আদালতে সংযুক্ত ছিল। কিন্তু ৩ আগস্ট ২০২৫ তারিখে একই আইনজীবী ও ল-ক্লার্কের সহায়তায় পলাশ রানার নাম পরিবর্তন করে ‘পলাশ মিয়া’ বানানো হয় এবং নতুন জন্মসনদ তৈরি করে তাকে শিশু দেখিয়ে গাইবান্ধা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এ জামিন আবেদন করা হয়।


অভিযোগ অনুযায়ী, শিশু আদালতে ওই মামলার এলসিআর না থাকলেও বিচারক মামলাটিকে ‘পেটি কেস’ (ছোটখাটো অপরাধ) ভেবে এবং আইনজীবীর কথায় আস্থা রেখে ‘গুড ফেইথে’ জামিন মঞ্জুর করেন।


১২ আগস্ট ধার্য তারিখে পলাশ রানার হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেদিন আদালতে জানা যায়, তিনি শিশু আদালত থেকে জামিন নিয়ে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। খবরটি ছড়িয়ে পড়তেই আদালতপাড়ায় তোলপাড় শুরু হয়।

অভিযুক্তের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শেফাউল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এই প্রতারণার সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। নিয়ম মেনেই জামিন আবেদন করা হয়েছে।


এ ঘটনায় গাইবান্ধা সদর উপজেলার দক্ষিণ ধানঘড়া গ্রামের মো. রহমত আলী বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগে নারী ও শিশু আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবু বকর সিদ্দিক ছানা এবং অ্যাডভোকেট শেফাউল ইসলামের বিরুদ্ধে গুরুতর পেশাগত অসদাচরণের অভিযোগ এনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।


আইনজীবী মহল মনে করছে, আদালতে এমন জালিয়াতি হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। তাদের মতে, সুষ্ঠু তদন্ত হলে গাইবান্ধা আদালতের বহু অনিয়ম প্রকাশ পাবে। তারা জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।


এ বিষয়ে নারী ও শিশু আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত পিপি আবু বকর সিদ্দিক ছানা বলেন, দুই সন্তানের বাবা ও ২৫ বছরের যুবককে শিশু দেখিয়ে জামিন করানোর বিষয়টি আমি কিছুই জানি না। এমন কিছু ঘটে থাকলে আইনি পদ্ধতিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *