দুর্গাপূজায় ২ লক্ষাধিক আনসার-ভিডিপি মোতায়েন

The Daily Ittefaq

বাংলাদেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা নিরাপদ ও নির্বিঘ্নভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

গত ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়ে আগামী ২ অক্টোবর পর্যন্ত টানা নয় দিন সারাদেশের ৩১ হাজার ৫৭৬ পূজামণ্ডপে দুই লক্ষাধিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আনসার-ভিডিপি সদস্য-সদস্যা মোতায়েন থাকবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী সদর দপ্তর থেকে শুরু করে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা, কর্মচারী, ব্যাটালিয়ন আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের যথাযথ দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। দায়িত্ব পালনে সতর্কতা, আন্তরিকতা ও জনবান্ধব মনোভাবের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।

বাহিনীর চলমান সংস্কার কার্যক্রমের আওতায় প্রায় দুই লক্ষ তরুণকে গণপ্রতিরক্ষার নতুন ধারায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নব সংযোজিত AVMIS সফটওয়্যার এর মাধ্যমে সকল সদস্যের নিবন্ধন ও হালনাগাদ তথ্য যাচাই করে পূজার নিরাপত্তা দায়িত্ব নির্ধারণ করা হচ্ছে। পূজামণ্ডপে গুজব প্রতিরোধ ও তাৎক্ষণিক ঘটনাপ্রবাহ মোকাবেলার লক্ষ্যে ‘ইন্সিডেন্ট রিপোর্ট’ ব্যবস্থা কার্যকর করা হয়েছে, যা নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও দৃঢ় করেছে। তদুপরি, জেলা কমান্ড্যান্ট ও উপজেলা আনসার-ভিডিপি কর্মকর্তারা মাঠে থেকে সরাসরি পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করছেন এবং পূজা উদযাপন কমিটির সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করছেন।

এবারের দুর্গাপূজায় পূজামণ্ডপগুলোকে নিরাপত্তা ঝুঁকির ভিত্তিতে তিন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে অধিক গুরুত্বপূর্ণ ৭ হাজার ৫৪টি পূজামণ্ডপে আটজন করে, গুরুত্বপূর্ণ ১০ হাজার ৯৭২টি পূজামণ্ডপে ছয়জন করে এবং সাধারণ ১৩ হাজার ৫৫০টি পূজামণ্ডপে ছয়জন করে আনসার-ভিডিপি সদস্য মোতায়েন রয়েছেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্যরা ২৪ ঘণ্টা শিফট অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছেন।

এছাড়া দেশের ৬৪ জেলায় ৯২টি ব্যাটালিয়ন আনসার স্ট্রাইকিং ফোর্স টিম মোতায়েন করা হয়েছে, যারা নিয়মিত টহল পরিচালনার পাশাপাশি যেকোনো আপদকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত আছে।

এই নিরাপত্তা কার্যক্রমকে আরও কার্যকর ও প্রযুক্তিনির্ভর করতে চালু করা হয়েছে ‘শারদীয় সুরক্ষা অ্যাপস’। এর মাধ্যমে মোতায়েনকৃত সদস্যরা দুর্ঘটনা, গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তাৎক্ষণিকভাবে রিপোর্ট করছেন এবং এসব তথ্য অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ভাগাভাগি করা হচ্ছে।

প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়নের অংশ হিসেবে গত এক বছরে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৫০০ জনকে ভিডিপি মৌলিক প্রশিক্ষণ এবং ১৫ হাজার ৮০৭ জনকে উপজেলা আনসার প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। আগামী জানুয়ারির মধ্যে আরও ১ লাখ ১৪ হাজার জনকে ভিডিপি মৌলিক প্রশিক্ষণ এবং ৩৭ হাজার ৪২৬ জনকে উপজেলা আনসার প্রশিক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

এসব প্রশিক্ষণে তারুণ্য, মেধা ও যোগ্যতাকে মাপকাঠি হিসেবে ধরা হয়েছে; কোনো প্রকার সুপারিশকে প্রাধান্য দেওয়া হয়নি। প্রশিক্ষিত সদস্যরা শুধু পূজার নিরাপত্তায় নয়, জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনসহ রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে স্বল্পকালীন মোতায়েনেও দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া AVMIS-এর অধীনে ধাপে ধাপে ৬০ লক্ষ সদস্যের ডাটাবেজ অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে এবং STDM সফটওয়্যার থেকে স্বচ্ছতার সঙ্গে সদস্য বাছাই করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে দায়িত্বশীল ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন সমাজে আস্থা, স্বচ্ছতা ও গণতন্ত্রকে সুদৃঢ় করে। আমরা সাংবাদিক সমাজকে আমাদের অগ্রযাত্রার গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী হিসেবে বিবেচনা করি এবং আশা করি স্থানীয় প্রতিনিধি ও কেন্দ্রীয় সাংবাদিক সমাজ যাচাই করা তথ্য ও ইতিবাচক উপস্থাপনার মাধ্যমে জনগণের কাছে সত্যনিষ্ঠ সংবাদ পৌঁছে দেবেন।

বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি সর্বদা জনগণের নিরাপত্তা, শান্তি ও সম্প্রীতি রক্ষায় নিবেদিত। আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজাকে ঘিরে গৃহীত সর্বাত্মক ও প্রযুক্তিনির্ভর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মাধ্যমে একটি নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ ও আনন্দমুখর পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে—এ ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। আমরা বিশ্বাস করি গণমাধ্যমের সহযোগিতা ও দায়িত্বশীল উপস্হাপনা আমাদের প্রচেষ্টাকে আরও শক্তিশালী ও ফলপ্রসূ করে তুলবে।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *