দৃষ্টিনন্দন টানেলে ছিদ্র, বৃষ্টি হলেই ঝরছে পানি

Google Alert – পার্বত্য চট্টগ্রাম

নির্মাণের তিন বছর না পেরোতেই বান্দরবানে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ও আধুনিক পৌর বাস টার্মিনালে সংযোগ স্থাপনে এগারো কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত টানেলের ছিদ্র দিয়ে ঝরছে বৃষ্টির পানি। পাহাড় কেটে গড়ে তোলা সাড়ে পাঁচশ ফুট দীর্ঘ এই টানেলের ওপর একাধিক স্থানে ছিদ্র দিয়ে প্রতিনিয়ত পানি গড়িয়ে পড়ায় টানেলটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

এছাড়া টানেলের শেষপ্রান্তে স্কুলের দেওয়াল ঘেঁষে পাহাড়ধসে দৃষ্টিনন্দন টানেলটি মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় এই পরিস্থিতির জন্য কাজের নিম্নমানকে দায়ী করলেও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড বলছে টানেলের ছাদের ওপর পানি নিষ্কাশনের জন্য পাইপ লাগানো হয়েছিল। সেগুলো চুরি হয়ে যাওয়ায় ভেতরে পানি পড়ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ সাঈদ, হেলালউর রহমান ও মিঠুন বলেন, টানেল নির্মাণের জন্য পাহাড় কাটায় জায়গাটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বৃষ্টি হলেই টানেলের শেষপ্রান্তে সড়কটিতে ভেঙে পড়ে কাটা পাহাড়ের অংশবিশেষ। টানেলের ভেতরেও ঢালাইয়ের জোড়ার ছিদ্রগুলো দিয়ে বৃষ্টির পানি গড়িয়ে পড়ে সবসময়। নির্মাণ কাজে অনিয়মের কারণে বৃষ্টি বেশি হলে টানেলের ভেতরে একাধিক স্থান দিয়ে ঝরনার মতো পানি পড়ে। এতে সড়কে চলাচলকারী জনসাধারণ ও সাঙ্গু উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য টানেলটি মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। টানেলটি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান এবং দায়িত্বশীলদের অনিয়ম-দুর্নীতির জন্য আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।

এদিকে গণঅভ্যুত্থানের পর বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগের দুর্নীতিবাজদের তালিকা প্রকাশের পর থেকে টানেল নির্মাণকারী ঠিকাদার রাজু বড়ুয়া পলাতক রয়েছেন।

প্রকৌশল বিভাগের তথ্যমতে, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে এগারো কোটি টাকায় সাড়ে পাঁচশ ফুটের দীর্ঘ টানেল, প্রতিরক্ষা দেওয়াল, ড্রেনসহ দৃষ্টিনন্দন টানেলটি নির্মাণ করেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স এমএম ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিংয়ের ঘনিষ্ঠজন রাজু বড়ুয়া। কার্যাদেশ মোতাবেক ২০১৮-১৯ অর্থবছরে টানেলের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রথম দফায় তিনশ ফুট টানেলের জন্য পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় প্রকল্পের পরিধি-মেয়াদ-ব্যয় বাড়িয়ে সাড়ে ৫০০ ফুট দৈর্ঘ্যের টানেলের ব্যয় ধরা হয় ১১ কোটি টাকা।

তৃতীয় দফায় প্রকল্পের অর্থ ও মেয়াদ বাড়ানোর পর ২০২০ সালের জুন মাসের মধ্যে কাজটি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বরাদ্দের অর্থ প্রাপ্তিতে ধীরগতি এবং ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে টানেলটি নির্মাণে সময় লেগেছিল প্রায় পাঁচ বছর। ত্রুটিপূর্ণ অবস্থায় তড়িঘড়ি করে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগে ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর টানেলের উদ্বোধন করেন সাবেক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং। মূলত পুরোনো বাসস্ট্যান্ড থেকে আধুনিক নতুন পৌর বাসটার্মিনালে সংযোগ স্থাপন ও পর্যটন শিল্পের বিকাশে রুমা, থানচি দুটি উপজেলায় পর্যটকদের যাতায়াতের সুবিধার্থে দৃষ্টিনন্দন টানেলটি নির্মাণ করা হয়।

দৃষ্টিনন্দন টানেলে ছিদ্র, বৃষ্টি হলেই ঝরছে পানি

বিষয়টি নিশ্চিত করে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড বান্দরবানের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বিন ইয়াছির আরাফাত বলেন, টানেলটি পর্যটন নগরীর সৌন্দর্যবর্ধন, যানজট নিরসন, বিকল্প সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং পর্যটন শিল্পের বিকাশে নির্মাণ করা হয়।

তবে নির্মাণ কাজে অনিয়মের প্রশ্নে তিনি বলেন, টানেলের ছাদের ওপর পানি নিষ্কাশনের জন্য পাইপলাইন দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো চুরি করে নিয়ে যাওয়ায় টানেলের ছাদ থেকে পানি ঝরে ভেতরে পড়ছে। টানেলের ভেতরে আলোকিত করতে লাগানো লাইটিংয়ের তারও চুরি হয়েছিল, কয়েকদিন আগে নতুন তার লাগিয়ে আলো জ্বালানো হয়েছে। খুব দ্রুতই টানেলটি সংস্কার করে পৌরসভা কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানান তিনি।

নয়ন চক্রবর্তী/এফএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You missed