দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র রুখতে হবে

Google Alert – ইউনূস

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যে অনিশ্চয়তা ছিল, গত ১৩ জুন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যকার বৈঠক এবং যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে তা কেটে গেছে। এতে দেশের মানুষ যেমন নির্বাচনমুখী হয়েছে, তেমনি তারা ভোট দেয়ার জন্য মুখিয়ে আছে। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে, এমন সম্ভাবনা সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোও প্রস্তুতি শুরু করেছে। শুধু রাজনৈতিক দলই নয়, সরকার ও নির্বাচন কমিশনও প্রস্তুতি শুরু করেছে। গত সপ্তাহে ড. মুহাম্মদ ইউনূস মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সাথে টেলিফোনে আলাপকালে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন হওয়ার কথা বলেছেন। পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার কথা বলেছেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফট্যানেন্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির জন্য প্রস্তুতি নেয়ার কথা বলেছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশন পূর্ণোদ্যমে কাজ শুরু করেছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সেনাবাহিনী বলেছে, ইসির নির্দেশনা পেলে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত সেনাবাহিনী। দেখা যাচ্ছে, সরকার, নির্বাচন কমিশন, সশস্ত্র বাহিনী এবং রাজনৈতিক দল নির্বাচন আয়োজনে যখন ফুল সুইয়িংয়ে প্রস্তুতি ও কাজ শুরু করেছে, তখন দেশের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক ত্রাস সৃষ্টিকারি ও অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা তৈরি করে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হচ্ছে। নানা উসিলায় গণপিটুনিতে হত্যা ও আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে। গত মঙ্গলবার চট্টগ্রামের পটিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক অনুষ্ঠান শেষে নিষিদ্ধ ঘোষিত এক ছাত্রলীগ নেতার সাথে কথা কাটাকাটি এবং পরবর্তীতে তাকে থানায় নিয়ে গেলে বচসার জেরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ করা নিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। গত বৃহস্পতিবার মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় একই পরিবারের দুই সন্তানসহ এক নারীকে এলাকাবাসী পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে। এছাড়া, বিগত কিছুদিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে এ ধরনের অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটানো হয়েছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, এসব ঘটনা পরিকল্পিতভাবে পতিত আওয়ামী লীগ ও ভারতীয় ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ঘটানো হচ্ছে।

গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর আমরা দেখেছি, কীভাবে হাসিনা ও মোদির যৌথ প্রযোজনায় অন্তর্বর্তী সরকারকে ফেলে দেয়ার চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র হয়েছে। দাবিদাওয়ার নামে আনসার বিদ্রোহ, গার্মেন্ট খাতে স্যাবোটাজ করে শ্রমিক আন্দোলন, সংখ্যালঘু নির্যাতনের ধোঁয়া তুলে ইসকনের তা-ব, রিকশা শ্রমিক আন্দোলনের নামে আওয়ামী লীগের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা থেকে শুরু করে একের পর এক আন্দোলনের নামে সরকারকে অস্থিতিশীল করে তোলার অপচেষ্টা হয়েছে। রাজনৈতিক দল ও ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের মাধ্যমে হাসিনা-মোদির সেসব ষড়যন্ত্র রুখে দিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার স্থিতিশীল হয়ে দেশকে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে এবং তা চলমান। এমন প্রেক্ষিতে, নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারিরা ততই তৎপর হয়ে উঠেছে। সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও ভয়াবহ ঘটনা ঘটিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। এর অর্থ হচ্ছে, নির্বাচনী পরিবেশকে অনুপযুক্ত করে তোলা। বলার অপেক্ষা রাখে না, পতিত আওয়ামী লীগ ও ভারত দেশে একটি গণতান্ত্রিক ও স্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হোক, তা চায় না। গণঅভ্যুত্থানে পতন ও পরাজয় কিছুতেই তারা মেনে নিতে পারছে না। দেশের মানুষের ওপর তাদের রোষ, জেদ ও প্রতিশোধ নেয়ার জন্য তারা পাগলপারা হয়ে পড়েছে। বলা বাহুল্য, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দেশ স্থিতিশীল ও গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরলে তাদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। এ শঙ্কা নিয়ে তারা দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। অন্যদিকে, ‘সংস্কার ও বিচার’ ইস্যু নিয়ে কিছু রাজনৈতিক দলের মধ্যে নির্বাচন পিছিয়ে দেয়ার প্রবণতা রয়েছে। তাদের এ দাবি ন্যায্য হলেও তা দীর্ঘমেয়াদী এবং চলমান একটি প্রক্রিয়া। নির্বাচন বিলম্ব করার তাদের এই প্রবণতার সুযোগ পতিত আওয়ামী লীগ ও ভারত নিচ্ছে কিনা, তা ভেবে দেখা জরুরি। কারণ, দেশে গণতান্ত্রিক ও স্থিতিশীল সরকার থাকলে তারা সুবিধা করতে পারবে না। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক ও সচেতন হতে হবে।

নির্বাচন বিলম্বে হলে ও পিছিয়ে গেলে কার লাভ, কার ক্ষতি, তা বিচার-বিশ্লেষণের দাবি রাখে। এ বিষয়টি সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে মাথায় রাখতে হবে। গণঅভ্যুত্থানে হাজার হাজার ছাত্র-জনতার প্রাণ ও আহত হওয়ার মধ্য দিয়ে যে ফ্যাসিস্ট সরকার ও আধিপত্যবাদী ভারতের পতন হয়েছে, দেশ মুক্ত হয়েছে, সে অর্জন রাজনৈতিক দলগুলোর অনৈক্যর কারণে বিফল হতে দেয়া যাবে না। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হওয়া নিয়ে যে ঐকমত্য সৃষ্টি হয়েছে, সঙ্গতকারণেই তা পতিত আওয়ামী লীগ ও তার প্রভু ভারতের পছন্দ হওয়ার কথা নয়। তারা দেশকে অস্থিতিশীল করে নির্বাচনী পরিবেশ ভন্ডুল করার অপতৎপরতা চালাবে এবং চালাচ্ছে। নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, তারা আরও সক্রিয় ও চক্রান্তে লিপ্ত হচ্ছে। তাদের এ চক্রান্ত সকল রাজনৈতিক দল ও সরকারকে সম্মিলিতভাবে মোকাবেলা করে অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে হবে। সরকারের দায়িত্ব, প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য অধিক সক্ষম ও কার্যকর করে তুলতে হবে। এজন্য সংস্কারসহ পুলিশ ও প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা পতিত আওয়ামী ও ভারতীয় দোসরদের চিহ্নিত করে তাদের অপসারণ করতে হবে। গত কয়েকদিন ধরে যেসব ভীতিকর ও অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর পেছনে কারা জড়িত, তাদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূল শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে, রাজনৈতিক দলগুলোর স্থানীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে হবে। আইন নিজের হাতে না তুলে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নিতে হবে।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *