নতুন আলোচনার আগে যুক্তরাষ্ট্রকে হামলার চিন্তা বাদ দিতে হবে: বিবিসিকে ইরান

Bangla Tribune

যুক্তরাষ্ট্র যদি ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনা আবার শুরু করতে চায়, তবে তাকে অবশ্যই আর কোনও হামলা না চালানোর নিশ্চয়তা দিতে হবে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে এমনটাই জানিয়েছেন ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাজিদ তাখত-রাভানচি। বিবিসির রিপোর্টার ও উপস্থাপক লিস ডুসেট ইরান থেকে রিপোর্ট করার অনুমতি পেয়েছেন-এই শর্তে যে তার কোনও প্রতিবেদন বিবিসির ফারসি সার্ভিসে প্রকাশিত হবে না। ইরানের এই আইন সব আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

বিবিসির লিস ডুসেটকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মাজিদ তাখত-রাভানচি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে ইরানকে জানিয়েছে যে তারা আলোচনায় ফিরতে চায়, তবে আলোচনার সময় আর কোনও হামলা চালানো হবে কি না—এই ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে’ এখনও স্পষ্ট অবস্থান জানায়নি।

১৩ জুন ভোরে ইসরায়েলের সামরিক অভিযান শুরুর পর ১৫ জুন ওমানে নির্ধারিত যুক্তরাষ্ট্র-ইরান ষষ্ঠ দফার পরোক্ষ পারমাণবিক আলোচনা ভেস্তে যায়।

গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালায় তারা।

ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে—এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে তাখত-রাভানচি বলেন, ইরান ‘শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে’ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অধিকারে অটল থাকবে।  

তিনি বলেন, ‘আমাদের গবেষণা কর্মসূচির জন্য আমরা পারমাণবিক উপকরণে প্রবেশাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছি। তাই আমাদের নিজেদের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।’

উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “সমৃদ্ধির মাত্রা বা ক্ষমতা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু ‘আপনারা একদমই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারবেন না। যদি এতে রাজি না হন, তবে আপনাদের ওপর বোমা ফেলব’-এমন বিষয় তো জঙ্গলের আইন।’’

তেহরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কাছাকাছি পৌঁছে গেছে-এমন ধারণা নিয়ে ইসরায়েল ১৩ জুন থেকে ইরানে হামলা শুরু করে। পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনা টার্গেট করে এবং কমান্ডার ও বিজ্ঞানীদের হত্যার করে।

ইরান পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। টানা ১২ দিন ধরে চলা এই সংঘর্ষে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ফোরদো, নাতানজ ও ইসফাহানে তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা ফেলে।

এই হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির কতটা ক্ষতি হয়েছে তা এখনও স্পষ্ট নয়। তাখত-রাভানচি বলেন, তিনি নির্ভুল কোনও মূল্যায়ন দিতে পারবেন না।

আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রধান রাফায়েল গ্রোসি বলেন, হামলাগুলোতে গুরুতর কিন্তু আংশিক ক্ষতি হয়েছে। আর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ‘সম্পূর্ণ ধ্বংস’ হয়ে গেছে।

গ্রোসি আরও বলেন, ইরান কয়েক মাসের মধ্যেই আবার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে সক্ষম। উত্তরে তাখত-রাভানচি বলেন, এটা হবে কিনা, তা তিনি জানেন না।

আইএইএ-এর সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক ক্রমেই উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠছে। বুধবার ইরানের সংসদ আইএইএ-র সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করার পক্ষে ভোট দেয়। তাদের অভিযোগ, সংস্থাটি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের পক্ষ নিয়েছে।

ট্রাম্প বলেছেন, ইরান যদি আবার উদ্বেগজনক মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করে, তাহলে তিনি ‘নিশ্চিতভাবেই’ আবার বোমা হামলার কথা বিবেচনা করবেন।

তাখত-রাভানচি বলেন, আলোচনায় ফিরে আসার কোনও তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি এবং আলোচনার এজেন্ডা কী হবে তাও স্পষ্ট নয়। যদিও ট্রাম্প এই সপ্তাহেই আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমরা এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছি: আলোচনার সময় আমরা কি আবার কোনও আগ্রাসনের পুনরাবৃত্তি দেখতে যাচ্ছি?’

তাখত-রাভানচি বলেন, এই ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে’ যুক্তরাষ্ট্রকে ‘পরিষ্কার’ হতে হবে। ‘তারা আমাদের কী প্রস্তাব দিচ্ছে যাতে আমরা সেই আস্থার ভিত্তি তৈরি করতে পারি, সেটা জানাতে হবে।’

আলোচনার অংশ হিসেবে ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি পুনর্বিবেচনা করতে পারে কিনা—বিশেষ করে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও বিনিয়োগের বিনিময়ে—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন: ‘আমরা কেন এমন প্রস্তাবে রাজি হব?’

তিনি আবারও বলেন, ইরানের কর্মসূচি, যার মধ্যে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ রয়েছে, তা ‘শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে’।

২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি অনুযায়ী, ইরান ৩.৬৭ শতাংশের বেশি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারত না এবং ১৫ বছরের জন্য ফোরদো প্ল্যান্টে কোনও সমৃদ্ধকরণ চালাতে পারত না।

কিন্তু ট্রাম্প ২০১৮ সালে প্রথম দফায় প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন এই চুক্তি বাতিল করেন এবং আবার ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।

এর প্রতিক্রিয়ায় ইরান ধীরে ধীরে এসব বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করতে শুরু করে। বিশেষ করে সমৃদ্ধিকরণ সম্পর্কিত বিধিনিষেধ। ২০২১ সালে ফোরদোতে আবার সমৃদ্ধকরণ শুরু করে এবং আইএইএ-এর মতে, ৬০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুতের পরিমাণ এমন ছিল যা দিয়ে সম্ভবত নয়টি পারমাণবিক বোমা তৈরি করা যেতে পারে।

ইউরোপীয় ও পশ্চিমা নেতারা ইরানের ওপর আস্থা না রাখার প্রশ্নে তাখত-রাভানচি বলেন, কিছু ইউরোপীয় নেতা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের হামলাকে সমর্থন দিয়ে ‘অবাস্তব ও হাস্যকর আচরণ’ করেছেন।

তিনি বলেন, যারা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে সমালোচনা করছেন, তাদের আগে ‘আমাদের সঙ্গে কেমন আচরণ করা হয়েছে’ সেটার সমালোচনা করা উচিত এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলেরও সমালোচনা করা উচিত।

তিনি আরও বলেন, ‘যদি তাদের আমেরিকার সমালোচনা করার সাহস না থাকে, তাহলে তারা চুপ থাকুক, আগ্রাসনের পক্ষে অবস্থান না নিক।

তিনি বলেন, ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি টিকবে কি না তা ‘স্পষ্ট নয়’। তবে ইরান এটি বজায় রাখবে ‘যতক্ষণ না আমাদের ওপর কোনও সামরিক হামলা হয়’।

তাখত-রাভানচি জানান, ‘আমরা যুদ্ধ চাই না। আমরা সংলাপ ও কূটনীতিতে বিশ্বাস করি। কিন্তু আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে—আবার যেন বিস্মিত না হই।’

সূত্র: বিবিসি

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *