নাফ নদীতে জেলেদের নিখোঁজের বিষয়ে যা জানা গেল

Google Alert – আর্মি

এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ

কক্সবাজারের নাফ নদী এবং সংলগ্ন এলাকা থেকে গত এক মাসে অন্তত: একশত বাংলাদেশি জেলে নিখোঁজের অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বোট মালিক ও মাছ ব্যবসায়ীরা। নিখোঁজদের স্বজনেরা জানান, আরাকান আর্মিরা নাফ নদী থেকে বাংলাদেশি জেলেদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে।

শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়।

নাফ নদী কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা সীমান্তে মিয়ানমার ও বাংলাদেশকে আলাদা করেছে। নাফ নদী ও নদীর মোহনা এবং সেন্ট মর্টিন দ্বীপের দক্ষিণ সাগরে মাছ ধরেই মূলত: জীবিকা নির্বাহ করেন বাংলাদেশি জেলেরা। কিন্তু একের পর এক জেলেকে আরাকান আর্মি ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় জেলেদের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। এতে অনেকেই সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।

কোস্টগার্ডের টেকনাফ স্টেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মাহমুদুল হাসান বলেন, জেলেরা বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমারেখা অতিক্রম করার কারণে তাদেরকে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

গত ২৬শে অগাস্ট আরাকান আর্মি টেকনাফের শাহপরী দ্বীপের বাসিন্দা রশিদ আহমেদের চোখের সামনেই তার ছেলেসহ পাঁচজনকে নৌকাসহ নাফ নদী থেকে ধরে নিয়ে যায় আরাকান আর্মি।

তিনি বলেন, “হঠাৎ দেখি স্পিড বোটে করে আরাকান আর্মি আসতেছে। আমি ছিলাম অন্য নৌকায়। আমার ছেলে ছিলো আরেকটা নৌকায়। ওরা স্রোতের টানে একটু দূরে চলে গেছিলো। আমরা পালিয়ে আসতে পারলেও ওরা পারে নাই। স্পিড বোট আসি ধরি ফেলাইছে।”

তিনি বলেন, “তাদের সবার হাতে বন্দুক ছিলো। পুলিশের মতো ড্রেস সবার, রঙ গাছের পাতার মতো।”

ছবি: বিবিসি বাংলা

আটমাসের অন্তসত্ত্বা পারভীন বেগমের স্বামীও ইমাম হোসেনও ছিলেন সেই পাঁচজনের একজন।

পারভীন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, তার স্বামী এবং অন্যরা বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে, তারা জানেন না। কোনো খোঁজ-খবরও পাওয়া যাচ্ছে না।

তবে পাঁচ জেলে নিখোঁজ হবার কয়েকদিন পর মিয়ানমারের একটি ওয়েবসাইটে ইমাম হোসেনসহ অন্য জেলেদের ছবি প্রকাশিত হয়।

যেখানে বলা হয়, ‘মিয়ানমারের জলসীমায় ঢুকে পড়ায়’ আরাকান আর্মি তাদের গ্রেফতার করেছে।

ছবি: বিবিসি বাংলা

মোবাইলে সেই খবরে আটক পাঁচ জেলের ছবি দেখিয়ে ইমাম হোসেন ও অন্যদের পরিচয় শনাক্ত করেন স্বজনেরা।

ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি আরাকন আর্মির হাতে আটক হয়েছিলেন শাহপরী দ্বীপের জেলে আব্দুর রহমান। আট দিন পর বিজিবির মাধ্যমে তাকে ফেরত দেয় আরাকান আর্মি।

আব্দুর রহমান বলেন, তিনিসহ যেসব জেলেকে তখন ধরা হয়েছিলো, তাদেরকে মিয়ানমারের জলসীমায় ঢুকে পড়ার অভিযোগ আনে আরাকান আর্মি।

জেলেদের অনেকেই যে বাংলাদেশের সীমারেখা পেরিয়ে মিয়ানমারের জলসীমায় ঢুকে পড়ছেন, এর নানা কারণ আছে।

কোস্টগার্ড বলছে, অসাবধানতা এবং বেশি মাছ পাওয়ার আশায় এরকমটা ঘটছে।

তবে এর বাইরে আরও দুটি কারণের কথা বলছেন জেলেরা। এর একটি হচ্ছে, নাফ নদীর মোহনায় নাইক্ষংদিয়া এলাকায় ডুবোচরের কারণে বাংলাদেশ অংশে পানির গভীরতা কমে গেছে। কিন্তু মিয়ানমারের জলসীমা ঘেঁষে পানির গভীরতা বেশি থাকায় অনেকে সেই পথ দিয়ে যাতায়াত করেন। আরেকটি কারণ হচ্ছে, মাছ ধরার সময় তীব্র স্রোতে কখনও কখনও নৌকা ভেসে মিয়ানমারের অংশে চলে যায়।

টেকনাফ পৌর বোট মালিক সমিতির সভাপতি সাজেদ আহমেদ বলেন, “আগেও বিভিন্ন সময় বাস্তবতার কারণে এমনটা হয়েছে। কিন্তু তখন মিয়ানমার আটকায়নি। এখন আরাকান আর্মি আসার পরে কড়াকড়ি শুরু করেছে।”

নিরাপত্তা বাহিনী সংশ্লিষ্ট এবং স্থানীয়রা এ বিষয়ে কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ উল্লেখ করছেন।

প্রথমটি হচ্ছে, মিয়ানমারের সামরিক সরকার বিদ্রোহীদের কাছ থেকে আরাকানের দখল নেয়ার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশি জেলেরা দাবি করছেন, সীমান্ত এলাকায় মিয়ানমারের জঙ্গি বিমান উড়তে দেখেছেন তারা। সবমিলিয়ে নৌপথে সরকারি বাহিনীর হামলার আশঙ্কায় নদী ও সাগরে কড়া নজরদারি করছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি।

দ্বিতীয়টি কারণটি হচ্ছে, জেলেদের নৌকা আটকের পর লাখ লাখ টাকার মাছ, জাল, খাবার ও অন্যান্য সরঞ্জাম দখল।

আর তৃতীয়টি হচ্ছে, জেলেদের আটকের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে একধরনের আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ স্থাপন, ব্যবসা পরিচালনা এবং এর মাধ্যমে একধরণের বৈধ কর্তৃপক্ষ হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের পরোক্ষ চেষ্টা করছে আরাকান আর্মি।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *