নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের

Google Alert – ইউনূস

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ,সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল সোমবার প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে এক পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনী পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা গুলোকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করার কথা জানান। বৈঠকে নির্বাচনী প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ভোটার তালিকা হালনাগাদ, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহিংসতা রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়।
প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে এ বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রধান উপদেষ্টা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিরপেক্ষতা ও পেশাদারিত্ব বজায় রাখার ওপর জোর দেন। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন,কোনোক্রমেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আচরণে পক্ষপাতের অভিযোগ উঠতে পারবে না। কোনো রাজনৈতিক দলের হয়ে নয়, রাষ্ট্রের পক্ষে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে। ভোটার যেন নির্বিঘেœ কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারেন, সেটা নিশ্চিত করতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

বৈঠক শেষে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এসব তথ্য জানান। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর এই তিন মাসে দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় জোরদারের ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচনের সময় ৬০ হাজার সেনাসদস্য মোতায়েন থাকবে।বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, ভুয়া তথ্য প্রতিরোধ এবং প্রশাসনিক প্রস্তুতির ওপর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) বরাতে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, তারা (পুলিশ) মূলত স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করবে। তিনি বলেন, সেনাসদস্যরা এর মধ্যেই গত ৫ আগস্ট থেকে মাঠে সক্রিয় আছেন এবং তাঁদের বিচারিক ক্ষমতাও রয়েছে। নির্বাচনের সময় ৬০ হাজার সেনাসদস্য মোতায়েন থাকবে বলেও জানান তিনি। নির্বাচন ঘিরে গুজব ও ভুয়া তথ্য ছড়ানোর প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় সরকার ন্যাশনাল ইনফরমেশন সেন্টার গঠনের চিন্তাভাবনা করছে।

শফিকুল আলম বলেন, এই সেন্টারটি খুব দ্রুত গুজব শনাক্ত ও প্রতিরোধ করবে এবং সঠিক তথ্য জনগণের কাছে পৌঁছে দেবে। এই কেন্দ্রটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ইতিবাচক ও তাৎক্ষণিক কর্মকা- প্রচারে সাহায্য করবে, যেগুলো বর্তমানে প্রচার না পাওয়ায় অনেক সময় অজ্ঞাতই থেকে যায়। বৈঠকে নতুন করে গঠিত জাতীয় নিরাপত্তা কমান্ড কাঠামোর অধীনে মিডিয়া উইং প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবও আলোচনায় এসেছে। এটি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে নিয়মিত প্রেস ব্রিফিং এবং তাৎক্ষণিক তথ্য প্রকাশে সহায়ক হবে। সম্প্রতি গোপালগঞ্জসহ কিছু জায়গায় অস্থিরতা নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো পূর্বাভাস দিতে না পারায় সমালোচনা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, সরকার ইতিমধ্যে অবসরপ্রাপ্ত সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করেছে। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে এমন ব্যর্থতা এড়াতে গোয়েন্দা সংস্থা গুলোকে আরও সমন্বিতভাবে এবং আগেভাগেই তথ্য সংগ্রহের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনপূর্ব প্রশাসনিক রদবদল নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। এ বিষয়ে উপ প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, সার্বিকভাবে নয়, শুধুমাত্র যেখানে প্রয়োজন সেখানেই রদবদল হবে। তিনি বলেন, বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সম্ভাব্য নির্বাচনের আগে ‘হটস্পট’ যেখানে সহিংসতা বা অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে সেসব এলাকা দ্রুত চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে। এসব এলাকার পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রতিবেদন কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশও দেওয়া হয়েছে, যাতে প্রয়োজনে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া যায়। দিনের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম, ঐকমত্য কমিশনের রাজনৈতিক সংলাপ এবং শুল্ক নিয়ে আলোচনা হয়।

শফিকুল আলম বলেন, সরকার সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকা-ে জিরো টলারেন্স নীতি মেনে চলছে এবং নির্বাচনী নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এদিন রাতে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল শুল্ক সংক্রান্ত আলোচনায় অংশ নিতে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে যাত্রা করবে বলে জানানো হয়। প্রেস সচিব আশা করেন, সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং সিভিল প্রশাসনের মধ্যে শক্তিশালী সমন্বয়ের মাধ্যমে দেশ একটি নিরাপদ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সরকার ব্যাপক নিরাপত্তা প্রস্তুতি এবং সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় জোরদারে কাজ শুরু করেছে। আগামী সেপ্টেম্বর থেকে দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে নির্বাচন বিষয়ক বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলবে অক্টোবর ও নভেম্বর পর্যন্ত। সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং সিভিল প্রশাসনের মধ্যে শক্তিশালী সমন্বয়ের মাধ্যমে দেশ একটি নিরাপদ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ে সেনাসদস্য মোতায়েন থাকবেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন,প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করেছেন মার্কিন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন। এ সময় তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) বলেছেন, টেরোরিস্টদের ব্যাপারে এই সরকারের জিরো টলারেন্স। শফিকুল আলম বলেন, ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন সোমবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। খুবই সৌহার্দ্যপূর্ণ একটি পরিবেশে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের ট্যারিফ, কাউন্টার টেরোরিজম, ইলেকশনের প্রস্তুতি, ঐকমত্য কমিশনের যে সংলাপগুলো হচ্ছে, সেগুলো নিয়ে আলাপ হয়েছে। এ সময় প্রফেসর ইউনূস চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সকে জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হচ্ছে কাউন্টার টেরোরিজম এবং তিনি আরও বলেছেন, টেরোরিস্টদের ব্যাপারে এই সরকারের জিরো টলারেন্স। এটা তিনি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে তাদের জানিয়েছেন, বলেন প্রেস সচিব। প্রেস সচিব বলেন, গতকাল সোমবার রাতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছে। ট্যারিফ নিয়ে বৈঠক শুরু হওয়ার কথা আছে। আমরা আশা করছি এই আলোচনা ভালোভাবে সমাপ্ত হবে। প্রতিনিধিদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের একটি দলও যাচ্ছেন, তবে তারা আলোচনায় থাকবেন না।

প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব বলেন, আসন্ন নির্বাচনে যেসব জায়গা ঝুঁকিপূর্ণ তা দ্রুত নির্ণয় করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সব বাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের সময়ে যেসব জায়গায় সমস্যা হতে পারে বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মনে করে, সেসব জায়গা দ্রুত নির্ণয় করতে বলা হয়েছে। সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য বাড়তি কি ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন, সেসব বিষয় জানানোর জন্য তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

উপ-প্রেস সচিব বলেন, বৈঠকে প্রশাসনের রদবদল নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আপনারা জানেন নির্বাচনের আগে প্রশাসনে একটা রদবদল হয়। সেই রদবদল কীভাবে হবে সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং সে বিষয়ে কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে।

 

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *