পাকিস্তানের পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে বাঁধ দিচ্ছে আফগানিস্তান

Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আফগানিস্তান কুনার নদীর ওপর ‘যত দ্রুত সম্ভব’ বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে পাকিস্তানের পানিপ্রাপ্তি সীমিত করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে বলে শুক্রবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে এনডিটিভি।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা মাওলাভি হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদার পক্ষ থেকে এই নির্দেশ এসেছে বলে ভারপ্রাপ্ত জলসম্পদ মন্ত্রী মোল্লা আবদুল লতিফ মনসুর এক্সে জানিয়েছেন।

মন্ত্রী তার পোস্টে বলেছেন, ‘আফগানদের তাদের নিজস্ব পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার অধিকার রয়েছে’ এবং এই নির্মাণকাজে বিদেশি সংস্থার পরিবর্তে দেশীয় সংস্থাগুলো নেতৃত্ব দেবে।

এই মাসের শুরুতে ইসলামাবাদ যখন কাবুলকে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) সমর্থন করার অভিযোগ তোলে, তখন থেকে ডুরান্ড লাইন—অর্থাৎ পাক-আফগানিস্তানের ২৬০০ কিলোমিটার বিতর্কিত সীমান্ত—বরাবর উত্তেজনা চলছে।

এই উত্তেজনার মধ্যেই তালেবানের এই দ্রুত পদক্ষেপ বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।

পাকিস্তানের দিকে পানির প্রবাহ সীমিত করার তালেবানের এ পদক্ষেপ অনেকটা ভারতের পদক্ষেপের প্রতিধ্বনি। গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পাহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার ২৪ ঘণ্টা পরেই ভারত ৬৫ বছরের পুরনো সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করে, যা সিন্ধু ও এর উপনদীগুলোর পানি ভাগ করে নেওয়ার চুক্তি ছিল।

কুনার নদী পাকিস্তানের জন্য কেন গুরুত্বপূর্ণ

প্রায় ৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ কুনার নদীর উৎপত্তিস্থল পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের চিত্রাল জেলার হিন্দু কুশ পর্বতমালায়।

এটি এরপর দক্ষিণে আফগানিস্তানে প্রবাহিত হয়ে কুনার ও নানগরহার প্রদেশের মধ্য দিয়ে বয়ে যায় ও কাবুল নদীর সঙ্গে মিলিত হয়।

এই মিলিত নদীটির সঙ্গে পেচ নদীর পানি যুক্ত হয়, এরপর আবার পূর্ব দিকে পাকিস্তানে ফিরে আসে এবং পাঞ্জাব প্রদেশের অ্যাটক শহরের কাছে সিন্ধু নদের সঙ্গে মিশে যায়।

কাবুল নদী নামে পরিচিত এ নদীটি পাকিস্তানে প্রবাহিত হওয়া বৃহত্তম নদীগুলোর মধ্যে অন্যতম। সিন্ধু নদের মতোই এটিও জলসেচ, পানীয় জল সরবরাহ এবং জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস, বিশেষ করে আন্তঃসীমান্ত সহিংসতার কেন্দ্রস্থল খাইবার পাখতুনখোয়া অঞ্চলের জন্য।

আফগানিস্তান যদি পাকিস্তানের ভূখণ্ডে প্রবেশের আগেই কুনার (কাবুল) নদীর ওপর বাঁধ নির্মাণ করে, তবে এটি ভারতের পানি সরবরাহ সীমিত করার কারণে ইতিমধ্যে পানি-সংকটে থাকা পাকিস্তানের খামার ও জনগণের পানিপ্রাপ্তিকে পঙ্গু করে দেবে।

আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ইসলামাবাদ দিল্লির সঙ্গে যে সিন্ধু পানি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল, এই নদীগুলোর পানি ভাগাভাগি নিয়ে কাবুল ও ইসলামাবাদের মধ্যে তেমন কোনো চুক্তি নেই। এর অর্থ হলো, কাবুলের এই পদক্ষেপ থেকে সরে আসতে বাধ্য করার মতো কোনো তাৎক্ষণিক আইনি প্রতিকার পাকিস্তানের নেই।

এর ফলে পাক-আফগান সহিংসতা আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

তালেবানের নদীকেন্দ্রিক কৌশল

২০২১ সালের আগস্টে আফগান সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে তালেবান দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদী ও খালগুলোর ওপর নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে মনোযোগী হয়েছে।

তারা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাঁধ ও খাল নির্মাণ করছে, যার মধ্যে মধ্য এশিয়ার দিকে প্রবাহিত হওয়া নদীগুলোও রয়েছে।
এর একটি উদাহরণ হলো উত্তর আফগানিস্তানে নির্মিত বিতর্কিত কোশ টেপা খাল। ২৮৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই খালটি পাঁচ লাখ ৫০ হাজার হেক্টরেরও বেশি শুষ্ক অঞ্চলকে কার্যকর কৃষি জমিতে রূপান্তরিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এ খালটি আমো দরিয়া নদীর ২১ শতাংশ জল পর্যন্ত সরিয়ে নিতে পারে, যা উজবেকিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তানের মতো পানি-সংকটে থাকা দেশগুলোকে প্রভাবিত করতে পারে।

গত সপ্তাহে তালেবানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি ভারত সফরে ছিলেন। সফরের সময় তিনি হেরাত প্রদেশে একটি বাঁধ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে ভারতের সমর্থনের প্রশংসা করেন।

একটি যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘… উভয় পক্ষই টেকসই পানি ব্যবস্থাপনার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছে এবং আফগানিস্তানের জ্বালানি চাহিদা মেটানো এবং কৃষি উন্নয়নে সহায়তার লক্ষ্যে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছে।’

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *