Google Alert – বাংলাদেশ
ছোট লক্ষ্য, বড় হতাশা! বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা যা করলেন, সেটিকে বলা যায় স্রেফ পাগলামো কিংবা বোধহীন ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনী। দুর্দান্ত বোলিং পারফরম্যান্স যে সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছিল, তা বন্ধ হয়ে গেলে ব্যাটিং ব্যর্থতায়। ঠিক উল্টো চিত্র পাকিস্তানের। ব্যাটিংয়ের ব্যর্থতা পুষিয়ে দিয়ে উজ্জীবিত বোলিং-ফিল্ডিংয়ে তারা পৌঁছে গেল ফাইনালে।
লক্ষ্য ছিল স্রেফ ১৩৬। বাংলাদেশের ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছিল, লক্ষ্য বুঝি ২৩৬! অতি অস্থিরতা আর বড় শটের চেষ্টায় উইকেট বিলিয়ে দেওয়ার প্রতিযোগিতায় মেতে উঠলেন একের পর এক ব্যাটসম্যান। তাতেই ফাইনাল-স্বপ্নের অপমৃত্যু।
সেমি-ফাইনালে রূপ নেওয়া সুপার ফোর পর্বের ম্যাচে ১১ রানের জয়ে ফাইনালের ঠিকানা পেয়ে গেল পাকিস্তান।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, সেই ১৯৮৪ সালে শুরু যে টুর্নামেন্ট, ওয়ানডে-টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে ১৭তম আসরে প্রথমবার ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-পাকিস্তান।
দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াাম বৃহস্পতিবার পাকিস্তানকে ১৩৫ রানে বেঁধে রেখে বাংলাদেশ আটকে যায় ১২৪ রানে।
বাংলাদেশের হয়ে দারুণ বোলিংয়ের ধারা ধরে রেখে তিন উইকেট শিকার করেন তাসকিন আহমেদ, রিশাদ আহমেদ ও শেখ মেহেদি হাসান নেন দুটি করে। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে পাননি তারা প্রাপ্য প্রতিদান। ব্যাট হাতে ক্যামিও ইনিংসের পর বোলিংয়ে তিন উইকেট নিয়ে পকিস্তানের নায়ক শাহিন শাহ আফ্রিদি।
ম্যাচের আগেই একটি বড় ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। আগের ম্যাচের মতো এ দিনও চোটের কারণে খেলতে পারেননি অধিনায়ক লিটন কুমার দাস। আবার নেতৃত্ব দেন জাকের আলি। রান তাড়ায় লিটনের অভাব অনুভূত হয় আরও বেশি।
টস হেরে ব্যাটিং পেয়ে খুশিই ছিলেন পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আলি আগা। আগে ব্যাটিংই চেয়েছিলেন তারা তবে তার সেই হাসি মিলিয়ে যায় দ্রুতই। চার নম্বর ব্যাটসম্যান হয়েও তাকে ক্রিজে যেতে হয় যে দ্বিতীয় ওভারেই!
ম্যাচের প্রথম ওভারেই সাহিবজাদা ফারহানকে বিদায় করেন তাসকিন আহমেদ। বাংলাদেশের তৃতীয় বোলার হিসেবে টি-টোয়েন্টি উইকেটের সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন ৩০ বছর বয়সী পেসার।
পরের ওভারে শেখ মেহেদি হাসানের বল মিড অনে তুলে দেন সাইম আইয়ুব।
এবারের এশিয়া কাপে ছয় ইনিংসের চারটিতেই শূন্য রানে ফিরলেন সাইম। ৪৫ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারেই তার ‘ডাক’ ৯টি!
প্রথম দুটি উইকেটে ক্যাচ নেওয়া রিশাদ হোসেন বোলিংয়ে এসে বিদায় করেন আরও দুজনকে। জায়গা বানিয়ে খেলার চেষ্টায় লং অফ সীমানায় ধরা পড়েন ফাখার জামান (২০ বলে ১৩)। ড্রেসিং রুমের বাইরে তখন স্পিন বোলিং কোচ মুশতাক আহমেদের মুখে চওড়া হাসি। সম্ভবত ফাখারের জন্য এমন পরিকল্পনাই ছিল তাদের।
রিশাদের পরের শিকার আগের ম্যাচের ম্যাচ-সেরা হুসেইন তালাত।
সালমান তখনও লড়ে যাচ্ছিলেন এক প্রান্তে। দ্বিতীয় স্পেলে আক্রমণে ফিরে কাটারে তাকে (২৩ বলে ১৯) বিদায় করেন মুস্তাফিজ।
পাকিস্তানের রান তখন ৫ উইকেটে ৪৯। পঞ্চাশ ছুঁতেই প্রায় ১১ ওভার লেগে যায় তাদের।
ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পাওয়া শাহিন শাহ আফ্রিদি ১ রানে সোহানের কাছে জীবন পেয়ে বিশাল দুটি ছক্কা মারেন তানজিম ও তাসকিনকে। তবে তাসকিনের ফুল টস আকাশে তুলে তিনি বিদায় নেন ১৩ বলে ১৯ করে।
মোহাম্মাদ নাওয়াজ শূন্য রানেই রক্ষা পান পারভেজ হোসেন ইমন ক্যাচ নিতে না পারায়। সেটির খেসারত কিছুটা দিতে হয় দলকে। দুটি ছক্কায় ১৫ বলে ২৫ রানের ইনিংস খেলেন এই বাঁহাতি। ইনিংসের সেরা ৩৮ রানের জুটি গড়েন তিনি মোহাম্মাদ হারিসের সঙ্গে।
দলের সর্বোচ্চ ৩১ রান (২৩ বলে) আসে হারিসের ব্যাট থেকে। নিজের বলে দারুণ রিফ্লেক্স ক্যাচ নিয়ে তাকে থামান শেখ মেহেদি।
শেষ দিকে ৯ বলে ১৪ রানে অপরাজিত থাকেন ফাহিম আশরাফ।
প্রথম ১৩ ওভারে ৬৫ রান করা পাকিস্তান পরের ৭ ওভারে তোলে ৭০।
রান তাড়ায় বাংলাদেশ প্রথম ওভারেই হারায় পারভেজ হোসেন ইমনকে। এই সংস্করণে প্রথম ওভারে উইকেট প্রাপ্তির রেকর্ডকে ২২ শিকারে নিয়ে যান আফ্রিদি।
আগের দুই ম্যাচে ফিফটি করা সাইফ হাসান চেষ্টা করেন পাল্টা আক্রমণের। ফাহিম আশরাফের বলে ছক্কার পর হারিস রউফের ওভারে ছক্কা ও চার মারেন তিনি দারুণ শটে।
পঞ্চম ওভারে দুই ব্যাটসম্যান প্রায় এক প্রান্তে চলে গেলেও রান আউট করতে পারেনি পাকিস্তান। তবে আফসোসও করতে হয়নি। দুই ব্যাটসম্যান উইকেট উপহার দিয়ে বিদায় নেন।
আফ্রিদিকে উড়িয়ে মারার চেষ্টায় আউট জন হৃদয় (১০ বলে ৫)। রউফের বলে পয়েন্টে ধরা পড়েন সাইফ (১৫ বলে ১৮)।
আফ্রিদির একটি আলগা ডেলিভারি পেয়ে ছক্কায় উড়িয়ে দেন চারে নামা শেখ মেহেদি। ক্রিজে গিয়েই রউফের গতির কারণে ব্যাটের কানায় লেগে ছক্কা পেয়ে যান সোহান।
পাওয়ার প্লেতে চারটি ছক্কা পায় বাংলাদেশ। রান ওঠে তার পরও মাত্র ৩৬।
উইকেট বিলিয়ে দেওয়ার মিছিলে সঙ্গী হন পরে শেখ মেহেদিও (১০ বলে ১১)।
একাদশে ফেরা সোহান যতক্ষণ ক্রিজে ছিলেন, ছটফট করেছেন প্রায় প্রতি বলে। কিন্তু সৌভাগ্যের শুরুর ছক্কার পর না পেরেছেন আর বড় শট খেলতে, না পেরেছেন বলপ্রতি রান নিতে। তার যন্ত্রণাদায়ক ইনিংসের সমাপ্তি হয় ২১ বলে ১৬ রান করে।
দলের বিপদ আরও বাড়িয় বাজে শটে উইকেট হারান অধিনায়ক জাকেরও (৯ বলে ৫)।
তার পরও বাংলাদেশের আশা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন শামীম হোসেন। দুটি ছক্কা মারা ছাড়াও দারুণ খেলছিলেন তিনি। কিন্তু আফ্রিদির স্লোয়ারে রিভার্স ল্যাপ খেলে তার ২৫ বলে ৩০ রানের ইনিংস শেষ হওয়ায় বাংলাদেশের সম্ভাবনাও কার্যত শেষ হয়ে যায়।
শেষ দিকে রিশাদ হোসেনের দুই চার এক ছক্কায় ব্যবধান কমায় বাংলাদেশ। তাতে তো আর ফাইনালের টিকেট পাওয়া যায় না!
ফাইনালে রোববার লড়বে ভারত-পাকিস্তান। এর আগে শুক্রবার মুখোমুখি হবে ভারত-শ্রীলঙ্কা, যে ম্যাচটি শুধুই নিয়ম রক্ষার।
স্কোর:
পাকিস্তান: ২০ ওভারে ১৩৫/৮ (ফারহান ৪, ফাখার ১৩, সাইম ০, সালমান ১৯, তালাত ৩, হারিস ৩১, আফ্রিদি ১৯, নাওয়াজ ২৫, ফাহিম ১৪*, রউফ ৩*; তাসকিন ৪-০-২৮-৩, মেহেদি ৪-০-২৮-২, তানজিম ৪-০-২৮-০, মুস্তাফিজ ৪-০-৩৩-১, রিশাদ ৪-০-১৮-২)।
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১২৪/৯ (সাইফ ১৮, পারভেজ ০, হৃদয় ৫, শেখ মেহেদি ১১, সোহান ১৬, শামীম ৩০, জাকের ৪, তানজিম ১০, রিশাদ , তাসকিন ৪, মুস্তাফিজ ৬; আফ্রিদি ৪-০-১৭-৩, ফাহিম ২-০-১৮-০, রউফ , আবরার ৩-০-১৩-০, সাইম ৪-০-১৬-২, নাওয়াজ ৩-০-১৪-১)
ফল: পাকিস্তান ১১ রানে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: শাহিন শাহ আফ্রিদি।