Google Alert – পার্বত্য অঞ্চল
পার্বত্য অঞ্চল, ভারত এবং মিয়ানমারের একটি অঞ্চল নিয়ে বৈশ্বিক কোন কোন শক্তি পরিকল্পনা আছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ। গতকাল শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সিএইচটিআরএফ আয়োজিত ‘বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী প্রসঙ্গ ও জাতীয় নিরাপত্তা ভাবনা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সাম্প্রতিককালে কুকি-চিনের মতো কয়েকটি ঘটনা আমাদের এবং আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীকে চিন্তিত করেছে। কারণ হচ্ছে, তার পিছনেও অনেক কারণ আছে। যেটা আমরা সাদা চোখে দেখছি, সেটা পর্দার আড়ালে অনেক কারণ আছে। এখানে আমাদের পার্বত্য অঞ্চল, ভারত ও মিয়ানমারের একটি অঞ্চল নিয়ে বৈশ্বিক কোন কোন শক্তি পরিকল্পনা আছে। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য এই ভূখ-টাকে হয়তোবা তার অন্যভাবে সাজাতে চায়।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদেরকে সজাগ থাকতে হবে। যাতে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক যেকোন এরকম পরিকল্পনা যাতে আমাদের ভূখ- নিয়ে সফল হতে না পারে। এজন্য আমাদের দেশের সশস্ত্র বাহিনী, নিরাপত্তা বাহিনী এবং বুদ্ধিজীবী মহলসহ সবারকে সমন্বিত প্রচেষ্টা রাখতে হবে। যাতে আমরা আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং ভৌগোলিক অখ-তা বজায় রাখতে পারি।
সালাহ উদ্দিন বলেন, সকল মানুষকে সিটিজেন হিসেবে বলতে ভালোবাসি। আমরা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। এখানে বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী এবং ঐক্যবদ্ধ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আমাদের সকল ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী, নৃজাতিগোষ্ঠী, উপজাতি এবং আদিবাসী সকল সত্তাকে বাংলাদেশি হতে হবে। একটি ঐক্যবদ্ধ ন্যাশন তৈরি করার জন্য- সেই ঐক্যবদ্ধ জাতি, ঐক্যবদ্ধ সমাজ, ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন্যই আমরা ৭১-এর পরে ২৪- এর আবার রক্তদান করেছি।
ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য যাতে বিনষ্ট না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে সব রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য অটুট রাখতে হবে। তিনি বলেন, দেশকে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে সব নৃ-গোষ্ঠী, উপজাতি, আধা উপজাতিসহ সবাইকে বাংলাদেশি হতে হবে। ভাষা, একক সংস্কৃতি ও ধর্ম কোনো জাতিকে গঠন করে না। সব ভাষাভাষী, ধর্মাবলম্বী, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী মিলেই একটি জাতি গঠন হয়।
বিগত সময়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই জাতিকে বিভক্ত করার মানসিকতা দেখা গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরও পক্ষ-বিপক্ষের কথা বলে আমাদের বিভক্ত করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে ছিল বলে যাদের আলাদা করতে চাই, তারাও বিজয়ের পর তা অস্বীকার করেনি। এ সময় ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য যাতে নষ্ট না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখার কথাও বলেন বিএনপির এই সিনিয়র নেতা।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিক্রির মাধ্যমে দেশের মানুষের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করা হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে-বিপক্ষে এই বক্তব্য দিয়ে ঐক্যবদ্ধ জাতিকে বিভক্ত করা আমাদের কাম্য হতে পারে না। আমরা কেউই স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর এটা কামনা করতে পারি না।
সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই জাতিকে বিভক্ত করার মানসিকতা দেখেছি। এখানে স্বাধীনতার পক্ষ–বিপক্ষ বলে আমাদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করা হয়েছে স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে যে বাণিজ্য হয়েছে, রাজনীতিকরণ হয়েছে, রাজনৈতিকভাবে বাণিজ্য হয়েছে, চেতনা বিক্রি করতে করতে যে বিভক্তি সৃষ্টি করা হয়েছে, সেই জায়গা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। ‘বাংলাদেশের সব মানুষ মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেছে। মুক্তিযুদ্ধে সবাই সশস্ত্র সংগ্রামে না থাকলেও মানসিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিল এবং দেশের সব মানুষ স্বাধীনতার পক্ষে ছিল।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিল বলে যাদের আমরা বিভক্ত করতে চাই, তাদের মধ্যেও দেশের স্বাধীনতার পর সেই স্বাধীনতাকে অস্বীকার করার মতো কোনো প্রকাশ্য মানসিকতা আমরা দেখিনি। যারা হয়তো দেশের স্বাধীনতাকে গ্রহণ করতে পারেনি, তাদের মধ্যে কিছু ভিন্ন চিন্তা থাকতে পারে। কিন্তু সে রকম দুঃসাহস দেশে কেউ দেখায়নি যে স্বাধীনতাকে অস্বীকার করার মতো কোনো বিভক্তিমূলক বক্তব্য দিয়েছে। আজ পর্যন্ত আমরা দেখিনি।
বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) নাঈম আশফাক চৌধুরী। সিএইচটি রিসার্চ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসানের সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির শাহজাহান চৌধুরী, বিএনপির মিডিয়া সেলের চেয়ারম্যান আলমগীর মোহাম্মদ মওদুদ, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মুস্তাফিজুর রহমান ও আমজনতার দলের সদস্যসচিব তারেক রহমান। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান।
বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভিসি মোহাম্মদ আব্দুর রব, ওসমানী সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড সিকিউরিটিজ স্টাডিজের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুফি মুস্তাফিজুর রহমান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ বরকত আলী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ তারেক ফজল, প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহ আল ইউসুফ, খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বাবু রুইথি কার্বারি, অ্যাকটিভিস্ট থোয়াই চিং মং শাক প্রমুখ।###