পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশনকে সক্রিয় করার দাবি

Google Alert – পার্বত্য অঞ্চল

ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রায়ই ভূমি দখল, উচ্ছেদ এবং জাতিগত সংঘাত ঘটছে অভিযোগ তুলে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশনকে সক্রিয় করার দাবি তুলেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন নামের সংগঠনটি।

সেই সঙ্গে ৩ দফা দাবি ও ৫ দফা সুপারিশও রেখেছে সংগঠনটি।

সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শরিফুল কবির মিলনায়তনে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভা থেকে এসব দাবি ও সুপারিশ জানানো হয়।

মতবিনিময় সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন বলেন, “ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ভূমি কমিশন গঠিত হয়েছে বটে, তবে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশনের পর্যাপ্ত জনবল, তহবিল ও পরিসম্পদ নেই।”

তিনি বলেন, “খাগড়াছড়ি জেলায় কমিশনের প্রধান কার্যালয় এবং রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ কার্যালয়ে যথাক্রমে রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান জেলায় শাখা কার্যালয় স্থাপিত হলেও তহবিল, জনবল ও পরিসম্পদের অভাব রয়েছে।

“বর্তমানে ভূমি কমিশনের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে ও চেয়ারম্যানের মেয়াদ শেষ হয়েছে। নতুন চেয়ারম্যান এখনো নিযুক্ত করা হয়নি।”

ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়ার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রায়ই ভূমি দখল, উচ্ছেদ এবং জাতিগত সংঘাত ঘটে চলেছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

জাকির হোসেন বলেন, “এর ফলে আদিবাসী জুম্মদের জীবন ও জীবিকায় ব্যাপক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির পরিবর্তে, সরকার বহিরাগতদের বসতি স্থাপন এবং জমি ইজারা দেওয়া, বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ, সংঘবদ্ধ সাম্প্রদায়িক হামলা এবং জন্ম গ্রামবাসীদের একের পর এক গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া ইত্যাদি ঘটনা হয়ে চলেছে।”

এজন্য অনতিবিলম্বে ভূমি কমিশনের বিধিমালা প্রণয়ন করা; ভূমি কমিশনের চেয়ারম্যান নিয়োগ এবং কমিশনে পর্যাপ্ত জনবল, তহবিল ও পরিসম্পদ বরাদ্দ করারও দাবি জানিয়েছেন

ভূমি কমিশনের কার্যক্রমকে যথাযথভাবে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আন্দোলনের সুপারিশমালা-

  • পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন সম্পর্কে জনগণকে যথাযথ ধারণা প্রদান করা।
  • ভূমি বিরোধের নিষ্পত্তি চেয়ে আবেদনপত্র লেখা ও দাখিল করার ক্ষেত্রে সহায়তা প্রদান করা।
  • পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রচলিত আইন, রীতি ও পদ্ধতি সম্পর্কে প্রথাগত প্রতিষ্ঠান, জনপ্রতিনিধি ও সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিদেরকে সচেতন করা।
  • সংক্ষুব্ধ, ক্ষতিগ্রন্থ ও ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের আইনী, কারিগরী ও লজিষ্টিক সহায়তা প্রদান করা।
  • ভূমি কমিশনের কার্যাবলী সম্পর্কে কায়েমী স্বার্থান্বেষী মহলের নানা অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা।

মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, “বাঙালি-আদিবাসী সবাই মিলেই কিন্তু আমরা এই দেশের মানুষ। যদি আমরা আমাদের পাহাড়ি এবং সমতলের আদিবাসীদের সমস্যার সমাধান না করতে পারি তাহলে কিন্তু আমরা দেশটা এগিয়ে নিতে পারবো না। এটা আমাদের মনে রাখতে হবে।”

তিনি বলেন, “পার্বত্য অঞ্চলে ভূমি সমস্যার সমাধান ছাড়া ওই অঞ্চলে জনগণের সমস্যার সমাধান করা যাবে না। সুতরাং সমাধান করতে গেলে ভূমি সমস্যার সমাধান করতে হবে এবং পার্বত্য পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে।

“একই সঙ্গে আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারসহ সকল মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ পুনরায় করতে চাই, ভুল রাজনৈতিক কারণে আমাদের দেশকে অস্থীতিশীল করার জন্যে ওই অঞ্চল জুড়ে যাতে কোন আধিপত্যবাদী সাম্রাজ্যবাদী শক্তি কোন অপতৎপরতা চালাতে না পারে তার জন্য দৃঢ় ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।”

সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী খায়রুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “১৯৫০ সালের প্রজাস্বত্ব আইনের মাধ্যমে বাঙালিরা প্রথম জমির মালিক হয়, তার আগে তারা ছিল কেবল প্রজা। আজ পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষও একই দুঃখ ভোগ করছে; তারা অযৌক্তিক কিছু চায় না, শুধু নাগরিক হিসেবে সমঅধিকার চায়।”

ঐক্যমত্য কমিশনে এ বিষয়গুলো তুলে ধরার আশাবাদ জানিয়ে আদিবাসীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা নির্বাচন করুন বা না করুন, জয়ী হন বা মন্ত্রী হন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে আপনাদের ভূমিকা সবসময় গুরুত্বপূর্ণ থাকবে এবং এ সমস্যায় আপনাদের আন্তরিকতা অব্যাহত থাকবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।”

মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, আদিবাসী অধিকার কর্মী মেইনথিন প্রমীলা।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *