Google Alert – পার্বত্য অঞ্চল
শেরপুরের সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার পাহাড়ি গ্রামবাসীরা মাদক সম্রাট রাসেল বাহিনীর হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। জানা গেছে, রাসেল বাহিনীর সদস্যরা উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়নের হলদিগ্রাম, সন্ধ্যাকুড়া, গোমড়া, রাংটিয়া এবং কাংশা ইউনিয়নের নওকূচি, গান্দিগাঁও, হালচাটি, গজনী ও তাওয়াকোচা এলাকা দিয়ে প্রতিদিন ভারত থেকে চোরাই পথে মাদক পাচার করছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, এ বাহিনীতে রয়েছে অর্ধশতাধিক মাদক পাচারকারী সিন্ডিকেটের একদল কিশোর গ্যাং। এ বাহিনীর প্রধান রাসেল মিয়া, সন্ধ্যাকুড়া গ্রামের প্রভাবশালী আব্দুস ছামাদের ছেলে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মামুন ও স্থানীয় ইউপি সদস্য প্রভাবশালী গোলাম কিবরিয়ার মামাতো-ফুফাতো ভাই। রাসেলের ভাগিনা গোমড়া গুচ্ছ গ্রামের কোরবান আলী, ভোমা মিয়াসহ অনেকেই এ বাহিনীর সক্রিয় সদস্য। তাদের নেতৃত্বে গারো পাহাড়ে গড়ে উঠেছে বিশাল এক মাদক পাচারকারী কিশোর গ্যাং।
স্থানীয়রা জানান, এ বাহিনীর সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে সীমান্ত পথে ভারত থেকে মদ, গাঁজা, হিরোইন, ইয়াবা, ফেনসিডিল, কম্বল, গরুসহ ভারতীয় বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রী পাচার করছে। অভিযোগ রয়েছে, রাসেল বাহিনীর সদস্যরা প্রায় প্রতিরাতেই লাখ লাখ টাকা মূল্যের মাদকসহ নানা পণ্য এনে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাচার করে আসছে। এতে উপজেলায় সর্বত্র মাদকের বিস্তার ঘটছে। তরুণ ও যুব সমাজ বিপথগামী হয়ে পড়ছে।
সীমান্তবর্তী পাহাড়ি গ্রামগুলোর প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরেই এখন তৈরি হয়েছে মাদক ব্যবসায়ী এবং রাসেল বাহিনীর সদস্য। বিজিবির টহল দলের গতিবিধির খবরও তারা আগে থেকে পেয়ে যায়। অনেক সময় গ্রামবাসীর মাধ্যমে বিজিবির গতিবিধির তথ্য পাচার হয় মাদক চক্রের কাছে।
গোমড়া ও সন্ধ্যাকুড়া সীমান্তপথ বর্তমানে নিয়মিত ট্রানজিট রোডে পরিণত হয়েছে। প্রায় প্রতিরাতেই পিকআপ ভ্যানে করে কোটি টাকার মাদক পাচার হচ্ছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে গোমড়া এলাকা থেকে রাসেল বাহিনীর সদস্যরা পিকআপে মাদক নিয়ে ময়মনসিংহের ফুলপুরে পৌঁছে দেয়। ফেরার পথে গোয়েন্দা সংস্থার ধাওয়া খেয়ে শেরপুরের নকলা এলাকায় আত্মগোপন করে তারা।
একপর্যায়ে স্থানীয়রা গরুচোর সন্দেহে গণপিটুনি দেয়। এতে গোমড়া গুচ্ছ গ্রামের বাসিন্দা রাসেল বাহিনীর দুই সদস্য মসলে উদ্দিন ও আমির হোসেন মারা যান। আহত হন বাহিনীর সদস্য সাদ্দাম, রাজু ও আয়নাল।
অভিযোগ রয়েছে, রাসেল বাহিনীর সদস্যরা শুধু মাদক নয়, নারী ধর্ষণসহ নানা অপরাধে জড়িত। সন্ধ্যাকুড়া রাবার বাগান এলাকায় তারা নিয়মিত অপরাধ করে চলেছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে তরুণীদের অপহরণ করে ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে। কেউ প্রতিবাদ করলে হামলা, ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়।
থানায় রাসেল ও মামুনের নামে ডজনখানেক মামলা থাকলেও তারা পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে মাদক পাচারসহ বিভিন্ন অপরাধ করে চলেছে।
২৬ জুন রাসেল বাহিনীর সদস্যরা এক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর তরুণীকে দিনের বেলায় অপহরণ করে রাবার বাগানে নিয়ে ধর্ষণ করে। এ সময় শ্রমিক সুজন মিয়া ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করলে রাসেল বাহিনীর সদস্যরা পুরো রাবার বাগান ঘেরাও করে ভিডিও ডিলিট করিয়ে নেয় এবং সুজনকে মারধর করে।
সুজনের মা সখিনা বেগম বাদী হয়ে রাসেলসহ অজ্ঞাত ১০-১৫ জনকে আসামি করে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর থেকে সখিনাকে অভিযোগ তুলে নিতে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। ফলে সুজন মিয়া চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন, পরিবারটি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
অন্যদিকে ৩০ জুন হলদিগ্রামে বিজিবি অভিযান চালিয়ে ২৭৬ বোতল ভারতীয় মদ উদ্ধার করে। একই দিনে গোমড়া গ্রাম থেকে বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার করে থানা পুলিশ।
ঝিনাইগাতী থানার ওসি আল-আমিন বলেন, মাদক সম্রাট রাসেল ও মামুনের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানাসহ ডজনখানেক মামলা রয়েছে। রাসেলকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তবে বারবার অবস্থান পরিবর্তনের কারণে তাকে ধরা যাচ্ছে না।