Google Alert – পার্বত্য চট্টগ্রাম
দেশের এক-দশমাংশজুড়ে অবস্থিত আমাদের পার্বত্য এলাকা। এটি প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর; কিন্তু কিছু বিপথগামী পাহাড়ির জন্য এখানে আইনশৃঙ্খলা কাক্সিক্ষত পর্যায়ে না থাকায় প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন কাজে লাগানো যাচ্ছে না, তেমনি এ জনপদের উন্নয়নও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সঙ্গত কারণে দেশের অখণ্ডতা রক্ষায় এখানকার শান্তিশৃঙ্খলায় সরকারকে অধিক মনোযোগী হতে হচ্ছে।
এমন পেক্ষাপটে খবর মিলছে, পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি এড়াতে সাঙ্কেতিক ভাষা ব্যবহার করে আগ্নেয়াস্ত্র এবং গুলি কেনাবেচা করছে। ভারত ও মিয়ানমার সীমান্তে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৪৯১ কিলোমিটার দুর্গম হওয়ায় বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্রগোষ্ঠী দেশ দু’টি থেকে সীমান্তপথে আনছে এসব ভারী অস্ত্র, মর্টার শেলসহ গোলাবারুদ। বর্তমানে সশস্ত্রগোষ্ঠীর প্রায় চার হাজার সদস্যের হাতে ভারী অস্ত্র রয়েছে।
ইউপিডিএফের সাবেক দুই সদস্যের বরাতে নয়া দিগন্তের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আগে বেশির ভাগ অস্ত্র মিয়ানমার থেকে এলেও এখন নজরদারির কারণে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। সবজি বা অন্যান্য পণ্যের আড়ালে সিল করা ব্যাগে অস্ত্রগুলো বহন করা হয়। অর্ডার দেয়া হয় এনক্রিপ্ট করা মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে। অস্ত্র কেনার টাকা জোগাড় করা হয় স্থানীয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদা তুলে। বাস্তবতা হলো- পার্বত্য চট্টগ্রামে চাঁদা না দিয়ে কেউ কিছু বিক্রি করতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করে ১০০-২০০ সশস্ত্র সন্ত্রাসী।
২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের জুন মাসের মধ্যে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ৯০টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ৬২৪ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে ৯৬ জনকে গ্রেফতার করে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) তথ্যানুযায়ী, গত মঙ্গলবার বাঘাইছড়ি উপজেলায় এক অভিযানে সেনা সদস্যরা ইউপিডিএফের একটি আস্তানা থেকে একটি একে-৪৭ রাইফেলসহ বেশ কিছু অস্ত্র জব্দ করেছেন।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থা অস্ত্র চোরাচালানে রাঙ্গামাটিতে চারটি প্রধান রুট চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে মিয়ানমারের আরাকান আর্মির কাছ থেকে বেশির ভাগ অস্ত্র ভারতের মিজোরাম হয়ে থানচি, লুলংছড়ি, ছোটপোতিঘাট, ঘিলাতলী বা বসন্তোপাড়া হয়ে প্রবেশ করে। আরেকটি পথে বান্দরবানে অস্ত্র পাঠানো হয়, যা রাঙ্গামাটিতে প্রবেশ করে রাইখালী বাজার, বড়ইছড়ি, কাউখালী ও বিলাইছড়ি হয়ে। তৃতীয় একটি পথ মিয়ানমার থেকে মিজোরাম, তারপর রাঙ্গাপাড়া ও বাঘাইছড়ির সাথে সংযুক্ত করে এবং চতুর্থটি সাজেক লংকর পয়েন্টে যায়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম আমাদের সীমান্তবর্তী জনপদের একটি অত্যন্ত কৌশলগত অবস্থান। বিশেষ করে রাঙ্গামাটি জেলা। এটি বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারের ত্রি-সংযোগস্থলে অবস্থিত। এই সীমান্ত এলাকা শুধু দুর্গম পাহাড়ি জনপদ নয়; নদী এবং হ্রদও রয়েছে, ফলে এটি পর্যবেক্ষণ করা অত্যন্ত জটিল। তবু বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বিজিবি সংশ্লিষ্ট সীমান্ত এলাকা নিরাপদ রাখতে জীবন বাজি রেখে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।
আমরা মনে করি, পার্বত্য অঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো দমনে যেমন এদের কাছে থাকা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে সাঁড়াশি অভিযান অত্যাবশক, ঠিক তেমনিভাবে পার্বত্য এলাকায় যেন কোনোভাবে ভারত বা মিয়ানমার থেকে চোরাইপথে আগ্নেয়াস্ত্র প্রবেশ করতে না পারে তার জন্য কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। কারণ পার্বত্য অঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা স্থিতিশীল রাখা দেশের অখণ্ডতা রক্ষায় অত্যন্ত জরুরি।