Google Alert – সেনাবাহিনী
পুরো গাজা দখল বাস্তবায়ন নিয়ে চাপে নেতানিয়াহু
বিদেশী সংবাদ মাধ্যম : বৃহস্পতিবার, ০৭ আগস্ট ২০২৫
পুরো গাজা দখলের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দেশটির রাজনৈতিক নেতা ও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে চাপের মুখে রয়েছেন। মঙ্গলবার নেতানিয়াহু গাজায় ব্যাপক সামরিক পদক্ষেপের ইঙ্গিত দেওয়ার পর ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধানরা আপত্তি জানিয়েছেন। তারা গাজা দখল নয়, ২২ মাস ধরে চলা যুদ্ধের অবসান চান। গতকাল বুধবার বার্তা সংস্থা এপির এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
নেতানিয়াহুর ওপর এই চাপ এমন সময় এলো, যখন ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬১ হাজার ২০ জনে। ক্ষুধা-অপুষ্টিতে গতকাল বুধবারও পাঁচজন মারা গেছেন। এ নিয়ে না খেয়ে ৯৬ শিশুসহ ১৯৩ জনের মৃত্যু হলো। গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় ৮৭ ত্রাণপ্রত্যাশীসহ ১৩৫ জন নিহত হয়েছে। বুধবার গুলিতে প্রাণ গেছে ১০ ত্রাণপ্রত্যাশীসহ ৩১ জনের। গত মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে এ পর্যন্ত এক হাজার ৫৬৮ ত্রাণপ্রত্যাশীকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। গাজা উপত্যকার প্রায় ৮৬ শতাংশই এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে। অন্যদিকে অবরুদ্ধ গাজায় আকাশপথে ত্রাণ ফেলার সময় এক ফিলিস্তিনি নার্সের মৃত্যু হয়েছে। নিহত ওই নার্সের নাম ওদাই আল-কুরআন। গাজা সিটিতে বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয়দানকারী জাতিসংঘের ক্লিনিককে লক্ষ্য করে হামলা হয়েছে। হামাস বলেছে, এটা ইসরায়েলের পরিকল্পিত ঘটনা। মস্কো বলেছে, ইহুদি বসতি স্থাপনকারীরা ফিলিস্তিনে রাশিয়ার একটি কূটনৈতিক গাড়িতে হামলা করেছে। এই আক্রমণকে ভিয়েনা কনভেনশনের চরম লঙ্ঘন বলে মনে করে মস্কো।
এপির প্রতিবেদনে বলা হয়, নেতানিয়াহুর পরিকল্পনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিষেবা শিন বেথ, গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ এবং সামরিক বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তারা।
তাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ বারাকও। এক ভিডিওতে শিন বেথের সাবেক প্রধান ইয়োরাম কোহেন বলেন, প্রতিটি সন্ত্রাসী ও অস্ত্রের কাছে পৌঁছাতে পারা কিংবা জিম্মিদের ফিরিয়ে আনা অসম্ভব। রয়টার্স জানায়, গাজা পুরোপুরি দখলে নিতে নির্দেশ দেওয়ার জন্য মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে বসেন নেতানিয়াহু। পুরো গাজা দখলের পরিকল্পনা প্রকাশ করেন তিনি। তবে কয়েক ঘণ্টা পর কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়। ফিলিস্তিনের গাজা পুরোপুরি দখল করতে চাইলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েলকে বাধা না দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। মঙ্গলবার সাংবাদিকরা জানতে চান, নেতানিয়াহু গাজা পুরোপুরি দখলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন– এ নিয়ে তাঁর কী মত। জবাবে ট্রাম্প বলেন, আমি এখন গাজার মানুষের খাবারের ব্যবস্থা নিয়ে বেশি মনোযোগী। বাকিটা নিয়ে আমি কিছু বলতে পারি না। এটা মূলত ইসরায়েলের বিষয়।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, গাজা দখলের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিয়ে নেতানিয়াহু ও সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়াল জামিরের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। নেতানিয়াহু গাজার প্রায় তিন-চতুর্থাংশ নিয়ন্ত্রণকারী সেনাবাহিনীকে পুরো অঞ্চল দখল করার জন্য চাপ দিচ্ছেন। তবে সেনাপ্রধান মনে করেন, এটি এমন একটি পদক্ষেপ, যা জিম্মিদের বিপদে ফেলতে পারে।
এদিকে, রক্তের ঘাটতির কারণে গাজায় ‘ছোট ক্ষত’ নিয়ে শিশুরা মারা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন খান ইউনূসের ড. তারেক লুবানি। তিনি বলেন, আড়াই মাস ধরে রক্ত ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। পর্যাপ্ত রক্ত না পেলে শিশুরা নিস্তেজ হয়ে যায়। দেড় বছরের একটি ছেলের মৃত্যুর করুণ দৃশ্য তুলে ধরেন তিনি। তার ধমনীতে আঘাত লেগে ক্ষতটি তৈরি হয়। তার রক্তক্ষরণ হচ্ছিল বেশ। শিশুটি স্পষ্টত অপুষ্টিতে ভুগছিল। পরে তাকে বাঁচানো যায়নি। তাঁবুতে এসব মৃত্যু গণহত্যার শামিল বলে তিনি মনে করেন।