পুলিশি কঠোর নিরাপত্তা, হাই অ্যালার্টে ফায়ার সার্ভিস

চ্যানেল আই অনলাইন

রাজধানী ঢাকায় মঙ্গলবার থার্টিফার্স্ট নাইটে ইংরেজি নতুন নববর্ষ উদযাপিত হবে। কোন বিশৃঙ্খলা ও দুর্ঘটনা না ঘটে তাই রাজধানীতে থার্টিফার্স্ট নাইটকে কেন্দ্র করে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রস্তুতি নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।

অন্যদিকে থার্টিফার্স্ট নাইটকে কেন্দ্র করে হাই-অ্যালার্টে রয়েছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। ফানুস ও আতশবাজি থেকে সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ড সামাল দিতে এরইমধ্যে দেশের সব ফায়ার স্টেশনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যেন তারা সতর্ক অবস্থায় থাকে।

আতশবাজি না পুড়িয়ে দেশীয় সংস্কৃতি অর্থাৎ নাটক, মঞ্চ নাটক, গান, দেশীয় নাচ ইত্যাদির মাধ্যমে আমরা যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা এড়িয়ে গিয়েই থার্টিফার্স্ট বরণ করতে পারি বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

ডিএমপির প্রতিটি থানা এলাকায় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে এই রাতে। এছাড়া নতুন বছরের প্রথম প্রহরে রাজধানীতে যাতে কোনোভাবেই কেউ ফানুস না ওড়ায় ও আতশবাজি কিংবা পটকা যেন না ফোটায় সে সংক্রান্ত বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ডিএমপির আওতাভুক্ত থানাগুলোকে।

GOVT

ডিএমপি সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর যেসব এলাকায় ফানুস ও আতশবাজি বিক্রি হয় থার্টিফার্স্ট নাইট উপলক্ষ্যে গত কয়েকদিন সেসব জায়গায় অভিযান পরিচালনা করেছে ডিএমপির বিভিন্ন থানা পুলিশ। স্থানীয় ফানুস বিক্রেতাদের ফানুস বিক্রি না করতে অনুরোধ করা হয়েছে।

ইংরেজি নতুন বছর উদযাপনকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। বাড়তি নিরাপত্তায় থাকবে রাজধানীর অভিজাত এলাকাগুলো। ওইসব এলাকায় উন্মুক্ত স্থানে যাতে থার্টিফার্স্ট নাইটের কোনো অনুষ্ঠান না হয় সেজন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে কঠোর। তারপরও কেউ যদি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপন করে তাহলে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেবে পুলিশ। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় থাকবে নিরাপত্তা চেকপোস্ট। এসব চেকপোস্টে কাউকে সন্দেহ মনে হলে পুলিশ সদস্যরা তল্লাশি করবেন।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন:  থার্টিফার্স্ট নাইটে পুলিশ নিরাপত্তা পরিস্থিতি বুঝে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। কৌশলগত স্থানে বোম ডিসপোজাল ইউনিট, ক্রাইম সিন ভ্যান, কুইক রেসপন্স টিম এবং সোয়াট টিম মোতায়েন থাকবে।

ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেসন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, থার্টিফার্স্ট নাইট উপলক্ষ্যে রাজধানী ঢাকায় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় থাকবে পুলিশের চেকপোস্ট ও তল্লাশি। এছাড়া পুরো রাজধানীতে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হবে। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ সদস্যরা সতর্ক থাকবেন।

ডিএমপি প্রতিবারই নিষেধাজ্ঞা দেয় এবং থার্টিফার্স্ট নাইটের সপ্তাহখানেক আগে অভিযান পরিচালনা করে আতশবাজি ও ফানুস জব্দ করে। কিন্তু এত কিছুর পরও থার্টিফার্স্ট নাইটে ঠিকই ঢাকা শহরে আতশবাজি ফুটে এবং ফানুস ওড়ে । আর এর কারণে অগ্নিকাণ্ডের সৃষ্টি হয়।

সম্প্রতি  ১৩ বস্তা আতশবাজি ও পটকাসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি-লালবাগ বিভাগ

জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, আগামীর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে কোনো অভিভাবক সন্তানের হাতে ফানুস-আতশবাজি দেবেন না। যদি কেউ এসব কেনেন এবং ওড়ানোর চেষ্টা করেন তার বিরুদ্ধেও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপনে ফানুস ওড়াতে গিয়ে রাজধানীর অন্তত ১০টি স্থানে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে মাতুয়াইল স্কুল রোডের একটি বাড়িতে ফানুস থেকে বড় ধরনের আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স। একই রাতে ঢাকার বাইরে এ সংখ্যা ছিল প্রায় ১৯০টি।

ফায়ার সার্ভিস বলছে, ২০১৮ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে আতশবাজি ও ফানুসে সারাদেশে এক কোটি আট লাখ ৬৮ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ কারণে থার্টিফার্স্ট নাইটে আতশবাজি না ফোটানো এবং ফানুস না ওড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে বাহিনীটি।

এবারের থার্টি ফার্স্ট নাইটকে সামনে রেখে হাই-অ্যালার্টে রয়েছে ফায়ার সার্ভিস। সারাদেশে ফায়ার স্টেশনগুলোতে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা মো. শাহজাহান শিকদার বলেন, ঢাকা শহরে আমাদের সকল ফায়ার স্টেশনগুলোকে হাই-অ্যালার্টে রাখা হয়েছে। যাতে করে থার্টিফার্স্ট নাইটের ফানুস ওড়ানোকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের অগ্নিঘটনা সৃষ্টি হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: ২০২৩ সালের থার্টিফার্স্টে রাত ১১-১২টার তুলনায় পরের ১ ঘন্টার শব্দদূষণ ১০২% ও বায়ু দূষণের পরিমাণ প্রায় ৩৬% বৃদ্ধি পেয়েছিল। মাত্রাতিরিক্ত শব্দ ও বায়ুদূষণ মানুষ, পশু-পাখি উদ্ভিদ সহ সার্বিক প্রাণ-প্রকৃতির উপর ব্যাপক খারাপ প্রভাব ফেলছে। আতশবাজি এবং ফানুসের পরিবর্তে আলোকসজ্জা, প্রার্থনায় অংশগ্রহণ করা এবং সীমিত শব্দে দেশীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন বছর উদযাপন করা যেতে পারে।

Shoroter Joba

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *